মন্ত্রী আইজিপির প্রশ্রয়ে অপকর্ম হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার

ভোট ডাকাতি, হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার, ক্ষমতার অপব্যবহার, খাল দখলসহ বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থের মালিক হয়েছেন টিপু চেয়ারম্যান ও তার তিন ভাই। হুন্ডির মাধ্যমে মন্ত্রী, আইজিপিসহ অনেক পুলিশ কর্তার টাকা পাচার করার অভিযোগ রয়েছে তাদের চার ভাইয়ের বিরুদ্ধে। একাধিক মন্ত্রী, এমপিসহ পুলিশের কর্তাদের দাপটে মাফিয়া হয়ে উঠেছিলেন টিপু ও জুয়েল। আওয়ামী সরকারের পতনের পর জেলা ও কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতাদের ছত্রছায়ায় ফের নিজেদের ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে। টিপু চেয়ারম্যানের নামে মাদারীপুর ও ঢাকায় হত্যাসহ দুটি মামলা থাকলেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করছে না। আওয়ামী সরকারের পতনের পর এলাকাবাসী স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেও বিএনপির বিভিন্ন নেতার সঙ্গে তাদের নতুন সখ্যের কারণে তারা আতংকিত। সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, রাজৈর উপজেলার কবিরাজপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মান্নান মাতুব্বরের চার ছেলে টিপু সুলতান মাতুব্বর, লিটু মাতুব্বর, কামরুল হাসান জুয়েল ও সোহেল মাতুব্বর। চার ভাই-ই দীর্ঘদিন সৌদিতে থেকেছেন। আওয়ামী লীগ শাসনামলে কিছু মন্ত্রী, এমপি ও পুলিশের বড় বড় কর্মকর্তার সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন চার ভাই। এরপর থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাদের। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপি ও নেতাসহ পুলিশের বড় বড় কর্তার টাকা পাচারের মূল মাধ্যম বনে যান এ টিপু ও তার ভাই জুয়েল। বাকি দুই ভাই সৌদিতে থেকে সহযোগিতা করেন অন্য দুই ভাইকে। এভাবে বিপুল টাকার মালিক বনে যান চার ভাই। প্রবাসে থাকায় এলাকার মানুষ তেমন না চিনলেও বড় ভাই টিপু সুলতান দেশে এসে স্থানীয় এমপি ও সাবেক নৌ-পরিবহণমন্ত্রী শাজাহান খানকে ম্যানেজ করে অবৈধ টাকা আর ভোট ডাকাতি করে হয়ে যায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। জেলা ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় কোটি কোটি টাকার সম্পদ করেন এ চার ভাই। বাড়ির সামনের খালটি ভরাট করে দখলের অভিযোগ আছে চেয়ারম্যান টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে। এলাকায় তাদের ক্ষমতার জানান দিতে বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা হারুনকে তাদের বাড়িতে নিয়ে আসেন। বড় ভাই টিপু ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ার পর অপর ভাই জুয়েলের নজর পড়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের চেয়ারের দিকে। তাই পোস্টার সাঁটিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার জানান দেন জুয়েল। জুয়েল নারী সাপ্লাই দিয়ে বড় বড় নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা করতেন বলে অভিযোগ জুয়েলের দ্বিতীয় স্ত্রীর। আওয়ামী সরকারের পতনের আগ পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিরুদ্ধে টাকা ও লোক দেওয়ারও অভিযোগ আছে টিপু ও জুয়েলের বিরুদ্ধে। বর্তমানে একইভাবে বিএনপি নেতাদের সুনজর পাওয়ার চেষ্টা করছেন চার ভাই। এজন্য টাকা ও নারীকেই অস্ত্র হিসাবে ব্যবহারের চেষ্টা করছেন বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। জুয়েলের দ্বিতীয় স্ত্রী রোমানা স্বর্ণা জানান, জুয়েল সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ বেশকিছু মন্ত্রী ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার টাকা হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করতেন। এছাড়া নারীদের দিয়ে মন্ত্রী, এমপি ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা করতেন, যা জুয়েলই তাকে জানিয়েছেন। এদের ব্যবহার করে ও তাদের টাকা পাচার করে কোটি কোটি টাকার মালিকসহ বহু সম্পত্তির মালিক হয়েছে জুয়েলের পরিবার। ঢাকার মীরপুর, পল্লবী, গাজীপুর, আফতাবনগর, মাদারীপুরের শিবচর ও রাজৈরে প্রচুর সম্পত্তি আছে তাদের। টিপু, জুয়েলের ভয়ে এখনো এলাকার কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে নারাজ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বলেন, টিপু চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কথা বলার ক্ষমতা কারও নেই। কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বললে তাকে মারধর করা হয়, না হলে মিথ্যা মামলা দিয়ে সর্বস্বান্ত করে দেয়। টিপুর চেয়েও তার ভাই জুয়েল ভয়ংকর। কথায় কথায় গালিগালাজ করা এবং মারধর করা তার স্বভাব। আগে আওয়ামী লীগ নেতাদের জোরে ক্ষমতা দেখাতেন, এখন বিএনপির লোকজনও তাদের কথা বলে। তাই তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পান না। জেলা বিএনপির সদস্য সচিব জাহান্দার আলী জাহান বলেন, ‘যারা আওয়ামী লীগ আমলে লুটপাট করে এবং টাকা পাচার করে দেশকে ধ্বংসের মুখে নিয়ে গেছে এবং যারা বিএনপির ক্ষতি করেছে ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে তাদের সঙ্গে আমাদের নেতাকর্মীদের কোনো সম্পর্ক হতে পারে না। আমাদের নেতা তারেক রহমানের কঠোর নির্দেশনা আছে, যারা এদের পুনর্বাসন করার চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’ মাদারীপুর দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক আতিক রহমান বলেন, ‘যদি কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকে বা কোনো স্বীকৃত গণমাধ্যমে কারও বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচার হয় তাহলে আমরা যাচাই-বাছাই করে একটি রিপোর্ট তৈরি করে প্রধান কার্যালয় পাঠাই। প্রধান কার্যালয় নির্দেশনা দিলে আমরা সে বিষয়ে কাজ করি।’ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাঈমুল হাছান জানান, ‘টিপুর বিরুদ্ধে দুটি মামলা আছে। আমরা চেষ্টা করছি টিপুকে গ্রেফতার করতে। এছাড়া টিপু বা তার পরিবার আর কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’