Bangladesh

মন্ত্রী-এমপিদের সম্পদ বেড়েছে ৩০০-৪০০ গুণ, কী করে সম্ভব

রাষ্ট্র পরিচালনাকারীরা নিজেদের মানবাধিকারের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থায় দাঁড় করিয়েছে সুলতানা কামাল

মন্ত্রী-এমপিদের একেকজনের সম্পদ ২০০ গুণ, ৩০০ গুণ, ৪০০ গুণ বেড়েছে। এটা কী করে সম্ভব। দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি আগের চেয়েও খারাপ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল। সম্প্রতি তথ্যমন্ত্রীর করা এক মন্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তাঁদের নিজেদের সম্পদ কতখানি বেড়েছে আর কোন মানবাধিকারকর্মীর সম্পদ কতখানি বেড়েছে, সেই চ্যালেঞ্জ এখান থেকে করতে চাই।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীতে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী মানবাধিকার সুরক্ষাকর্মীদের তৃতীয় জাতীয় সম্মেলনে সুলতানা কামাল এসব কথা বলেন। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে আদিবাসী মানবাধিকার সুরক্ষাকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন’ শিরোনামে সম্মেলনটির আয়োজন করে কাপেং ফাউন্ডেশন। এ সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে সুলতানা কামাল মানবাধিকার পরিস্থিতি, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভূমি দখল, নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সুলতানা কামাল বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনাকারীরা নিজেদের মানবাধিকারের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থায় দাঁড় করিয়েছেন। সভ্য, গণতান্ত্রিক দেশে, মানবাধিকারবোধসম্পন্ন সমাজে মানবাধিকারকর্মীদের আতঙ্কে থাকার কথা নয়, আতঙ্কে থাকার কথা লুটেরাদের। যখন পত্রিকা পড়তে থাকি, আমি ভাবতে থাকি, আমি কি একটা বাস্তব জগতে বাস করছি! এটাও সম্ভব! একেকজন মন্ত্রী-এমপির সম্পদ ২০০ গুণ, ৩০০ গুণ, ৪০০ গুণ বেড়েছে।

১৬ ডিসেম্বর আমরা বিজয় দিবস পালন করব। স্বাধীনতা আমাদের গৌরব, অহংকার। আমাদের এই অহংকারের অবস্থা! তিনি বলেন, মানবাধিকারের কথা বলতে বললে এখন বিব্রত হই। পরিস্থিতি আগের চেয়েও খারাপ হয়েছে। গত ৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, মানবাধিকার একটি ‘ব্যবসায়’ পরিণত হয়েছে। এ প্রসঙ্গ টেনে সুলতানা কামাল বলেন, ‘তথ্যমন্ত্রী অত্যন্ত স্পর্ধার সঙ্গে বলেছেন, মানবাধিকার এখন ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁদের নিজেদের সম্পদ কতখানি বেড়েছে আর কোন মানবাধিকারকর্মীর সম্পদ কতখানি বেড়েছে, সেই চ্যালেঞ্জ এখান থেকে করতে চাই। তাঁরা মানুষের মানবাধিকার রক্ষা করতে পারেন না। মানবাধিকারকর্মীদের সুরক্ষা দিতে পারেন না। সে ব্যর্থতা ঢাকতে আক্রমণাত্মক কথাবার্তা বলেন, আমাদের হুমকিতে রাখতে চান। সুলতানা কামাল বলেন, তারা বলতে পারে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি। মুক্তিযুদ্ধের যেসব অঙ্গীকার ছিল, সেগুলো একটি একটি করে পালন করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির প্রমাণ দিক তারা। মুখে বলবে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি, কিন্তু কোনো চেতনাধারা বজায় রাখবে না, সেটা তো সহ্য করব না। দেশটা তো ইজারা দিয়ে দিইনি। মুক্তিযুদ্ধ ছিল জনযুদ্ধ। বিশেষ গোষ্ঠীর যুদ্ধ ছিল না। আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব দিয়েছিল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের মুক্তিযুদ্ধের নেতা ছিলেন, কোনো প্রশ্ন সেখানে তোলার নেই।

সুলতানা কামাল বলেন, এই দেশের মানুষের দায়িত্ব আছে মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করার। সরকার আদিবাসী’ পরিচয়কে স্বীকৃতি দিচ্ছে না। অধিকার রক্ষায় তিনি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জনগণকে ধৈর্য ধরে ঐক্যবদ্ধ থেকে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে অভিযোগ করা হয়, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জমি বেদখল হওয়া, নারী নির্যাতন, মিথ্যা মামলার ঘটনা আগের চেয়ে আরও বেড়েছে। উন্নয়নের নামে জমি দখল করা হচ্ছে। ২০২২ সালে পার্বত্য চট্টগামে ৩৭টি, সমতল অঞ্চলে ৪টি পরিবার ভূমি হারিয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ৪২১ একর ও সমতলে ১৫ একরের মতো জমি জবরদখলের চেষ্টা করা হয়েছে। ২০০টি পাহাড়ি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর পরিবার ও ৫টি সমতলের পরিবারের শস্যখেত ও বাগান ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যা, গ্রেপ্তার, আটক, শারীরিক নির্যাতন ইত্যাদি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে ২৭৬টি। যৌন হয়রানি, ধর্ষণচেষ্টা, দলবদ্ধ ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটেছে ২১টি।

জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা হুমা খান ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর আত্মপরিচয়ের স্বীকৃতি ও মানবাধিকারের সুরক্ষা দরকার বলে মত দেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে গত বছর তাঁরা বার্তা পেয়েছিলেন যে এখানে ‘আদিবাসী’ নেই। চিম্বুক পাহাড়ে পাঁচ তারকা হোটেল ও লামায় রবারবাগান করার বিরুদ্ধে সরকারকে চিঠি পাঠানো হলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। হুমা খান বলেন, বড় বড় সেতু, উড়ালসড়কের মতো প্রকল্পের কথা শুনতে ভালো লাগে। ধনীরা আরও আরামের জীবন পাচ্ছেন। তবে এমন কোনো উন্নয়ন করা যাবে না, যা পরিবেশের খারাপ পরিণতি ডেকে আনে।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য দেশে এখন এক কঠিন সময় চলছে। ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের জন্য এটা আরও কঠিন। শাসকদের সম্পদ বেড়েছে কয়েক শ গুণ। ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষ হত্যা ও নির্যাতনে জড়িতে ব্যক্তি জাতীয় নির্বাচনের জন্য আবারও মনোনয়ন পেয়েছেন। অধিকারের দাবি তুললে শাসক দল আগের শাসকেরা ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের সঙ্গে কী করেছিল, মিয়ানমার তার দেশে কী করে, সেই উদাহরণ টানে। অথচ তুলনা করা দরকার যেসব দেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত রয়েছে, সেসব দেশের সঙ্গে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন,আচিক মিচিক সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক সুলেখা ম্রং। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কাপেং ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ও জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন। ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগণের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরেন কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা। স্বাগত বক্তব্য দেন কাপেং ফাউন্ডেশনের সহকারী সমন্বয়কারী হেলেনা তালাং। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন হীরেন মিত্র চাকমা ও হ্লাম্রাচিং চৌধুরী।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor