Hot

মন্ত্রী না হয়েও মন্ত্রিপাড়ার বাংলোয় গোলাপের বাস

  • ২০১৬ সালে বাংলোবাড়িটি বরাদ্দ পান গোলাপ।
  • ২০১৮ সালের পর থেকে তিনি আর প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী নেই, তবে বাংলো ছাড়েননি।

আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান মিয়া (গোলাপ) কোনো সরকারি পদে নেই। তবে তিনি বাস করেন একটি সরকারি বাংলোয়, যা সাধারণত মন্ত্রিসভার সদস্যদের বরাদ্দ দেওয়া হয়। চাইলে সচিব পদমর্যাদার কাউকে দেওয়া যায়।

বাংলোবাড়িটি মন্ত্রিপাড়া বলে পরিচিত রাজধানীর মিন্টো রোডে অবস্থিত। বাড়ির নম্বর ৪২। সেখানে আবদুস সোবহান থাকছেন ২০১৬ সাল থেকে। তখন তিনি বাংলোটি বরাদ্দ পেয়েছিলেন সচিব পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হিসেবে। যদিও ২০১৮ সালের পর থেকে তিনি আর বিশেষ সহকারী নেই।

বিষয়টি নিয়ে আবদুস সোবহানের বক্তব্য জানতে নানাভাবে চেষ্টা করেন এই প্রতিবেদক। একপর্যায়ে গত ২৯ জানুয়ারি তিনি ফোন ধরেন। তখন বলেন, তিনি এখনো প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হিসেবে আছেন, তবে তা অবৈতনিক। এর পরই ফোন কেটে দেন। আবার চেষ্টা করে তাঁকে পাওয়া যায়নি।

আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ সরকারি পদে না থেকেও পাঁচ বছর ধরে মন্ত্রিপাড়ার একটি বাংলোয় বাস করছেন।

অবশ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে প্রধানমন্ত্রীর অন্য বিশেষ সহকারীদের নাম রয়েছে, আবদুস সোবহানের নেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা এই প্রতিবেদককে জানান, আবদুস সোবহানকে ২০১৮ সালের পর আর প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

আবদুস সোবহান ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মাদারীপুর-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমের কাছে পরাজিত হন।

২০১৬ সালে আবদুস সোবহান যে বাড়িতে বাস করছিলেন, সেটি ভেঙে জায়গাটিতে সচিবদের বসবাসের জন্য তিনটি বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আবদুস সোবহানকে বরাদ্দ দেওয়া হয় মিন্টো রোডের ৪২ নম্বর বাংলো বাড়িটি। তখন থেকেই তিনি মিন্টো রোডে বাস করছেন।

মন্ত্রিপাড়ায় গোলাপ

মিন্টো রোডে সরকারি বাংলোগুলো বরাদ্দ পেতে মন্ত্রীদের চেষ্টা থাকে। কারণ, দোতলা বাংলোগুলো আকর্ষণীয়। ভেতরে ফুলের বাগান, গাছপালা, খোলা জায়গা রয়েছে। পাশাপাশি রাস্তাঘাট প্রশস্ত, নিরাপত্তা বেশি। গণপূর্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১১ জানুয়ারি নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের পর মন্ত্রীদের অনেকেই বাংলো বরাদ্দ চেয়েছেন।

নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত পুরোনো মন্ত্রীদের ছেড়ে দেওয়া ৯টি বাংলো ৯ জন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীকে বরাদ্দ দিতে পেরেছে সরকারি আবাসন পরিদপ্তর। কিন্তু ৪২ নম্বর বাংলোটি বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, সেটিতে থাকেন আবদুস সোবহান (গোলাপ)।

মিন্টো রোডের ৪২ নম্বর বাংলোর ফটকে গত ২৪ জানুয়ারি গিয়ে নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, বাড়িটিতে আবদুস সোবহান থাকেন। বাড়িতে প্রবেশ করে কারও সঙ্গে কথা বলা সম্ভব কি না, জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, সেটা সম্ভব নয়।

বাংলোটি আবদুস সোবহান কীভাবে বরাদ্দ পেলেন তা জানতে গত ২৯ জানুয়ারি এই প্রতিবেদক গিয়েছিলেন গণপূর্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিনের কাছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হওয়ার সুবাদে আবদুস সোবহান সরকারি বাড়িটি পেয়েছিলেন। এটুকুই তিনি জানেন। আবদুস সোবহান এখন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী রয়েছেন কি না, সেটা খোঁজ নেওয়ার আগে তিনি বলতে পারবেন না।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর গত ২৮ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর পাঁচজন বিশেষ সহকারী নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে নীলুফার আহমেদ, ফেরদৌস আহমেদ খান ও শহীদ হোসাইনকে সচিব পদমর্যাদা এবং বিপ্লব বড়ুয়া ও মশিউর রহমানকে (হুমায়ুন) উপসচিব পদমর্যাদা (গ্রেড-৫) দেওয়া হয়। এ তালিকায় আবদুস সোবহানের নাম নেই।

বরাদ্দ ২০১৬ সালে

নথিপত্র অনুযায়ী, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আবদুস সোবহানকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই বছর ৬ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়, আবদুস সোবহান নিয়োগ পেয়েছেন চুক্তিভিত্তিক। তিনি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হিসেবে সচিবের পদমর্যাদা এবং একই পর্যায়ের বেতন-ভাতা ভোগ করবেন।

নথিপত্র ও সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর ২০০৯ সালের ১৯ এপ্রিল রাজধানীর ইস্কাটনে একটি সরকারি বাড়ি (৩ নম্বর টেনামেন্ট হাউস) আবদুস সোবহানের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে আবদুস সোবহানকে আবার প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি আগে বরাদ্দ পাওয়া বাড়িটিতেই (৩ নম্বর টেনামেন্ট হাউস) বাস করছিলেন।

গত ২৯ জানুয়ারি আবদুস সোবহানের মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তিনি সরকারি পদে না থেকেও কীভাবে বাংলোবাড়িতে থাকছেন। কিন্তু কোনো জবাব দেননি।

২০১৬ সালে আবদুস সোবহান যে বাড়িতে বাস করছিলেন, সেটি ভেঙে জায়গাটিতে সচিবদের বসবাসের জন্য তিনটি বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আবদুস সোবহানকে বরাদ্দ দেওয়া হয় মিন্টো রোডের ৪২ নম্বর বাংলো বাড়িটি। তখন থেকেই তিনি মিন্টো রোডে বাস করছেন।

আবদুস সোবহান ২০১৮ সালে মাদারীপুর-৩ (কালকিনি, ডাসার ও সদরের একাংশ) আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়ে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা নিশ্চিত করেন, ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার সরকার গঠনের পর আবদুস সোবহানকে আর প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

এদিকে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর গত ২৮ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর পাঁচজন বিশেষ সহকারী নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে নীলুফার আহমেদ, ফেরদৌস আহমেদ খান ও শহীদ হোসাইনকে সচিব পদমর্যাদা এবং বিপ্লব বড়ুয়া ও মশিউর রহমানকে (হুমায়ুন) উপসচিব পদমর্যাদা (গ্রেড-৫) দেওয়া হয়। এ তালিকায় আবদুস সোবহানের নাম নেই। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে গতকাল বুধবার রাতেও দেখা যায়, সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সব উপদেষ্টা ও বিশেষ সহকারীর নাম, পদবি ও ছবি রয়েছে। আবদুস সোবহানের নাম নেই।

মিন্টো রোডের বাংলোগুলো মন্ত্রীদের জন্য বরাদ্দ থাকে। সরকারি কোনো পদে না থেকে বাংলোয় থাকা বেআইনি। এ জন্য আবদুস সোবহান যেমন দায়ী, তেমনি গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ও দায়ী।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার

সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে গত এক সপ্তাহে একাধিকবার গিয়ে ২০১৮ সালের পর আবদুস সোবহানকে বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া-সংক্রান্ত কোনো প্রজ্ঞাপন বা সরকারি চিঠিপত্র পাওয়া যায়নি। আবদুস সোবহান যে নিজেকে অবৈতনিক বিশেষ সহকারী দাবি করেছেন, সে বিষয়েও কোনো প্রজ্ঞাপন পাওয়া যায়নি।

সাধারণত কোনো মন্ত্রী বা সচিব পদমর্যাদার কেউ অবৈতনিক দায়িত্ব পালন করলে সরকারের পক্ষ থেকে প্রজ্ঞাপন দিয়ে তা জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পাওয়া সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমানের নিয়োগ অবৈতনিক ঘোষণা করে গত ১৮ জানুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তাতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পেলেও সালমান এফ রহমান সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন না।

আবদুস সোবহান এখন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হিসেবে রয়েছেন কি না, তা জানতে গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনের দপ্তরে যান এই প্রতিবেদক। অবশ্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। পরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেখানকার একাধিক কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী কে হবেন, সে তালিকা আসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় শুধু প্রজ্ঞাপন জারি করে। তবে আবদুস সোবহানের বিষয়ে কোনো তথ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় নেই।

এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি আবদুস সোবহানের মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তিনি সরকারি পদে না থেকেও কীভাবে বাংলোবাড়িতে থাকছেন। কিন্তু কোনো জবাব দেননি।

‘এটা বেআইনি’

সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদও একই ধরনের অনিয়ম করেছেন। ২০১৯ সালে সমাজকল্যাণমন্ত্রী হওয়ার পর রাজধানীর বেইলি রোডের মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্টে পাঁচ হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট বরাদ্দ পান তিনি। এর বাইরেও তিনি সমান আয়তনের আরেকটি সরকারি বাসা নিজের দখলে রাখেন। গত পাঁচ বছর বাসা দুটির একটিতে তিনি পরিবারসহ থাকছেন। অন্যটিতে থেকেছেন তাঁর আত্মীয়স্বজনেরা। বিষয়টি আবাসন পরিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানতেন। তবে কেউ কিছু বলতে পারেননি।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, মিন্টো রোডের বাংলোগুলো মন্ত্রীদের জন্য বরাদ্দ থাকে। সরকারি কোনো পদে না থেকে বাংলোয় থাকা বেআইনি। এ জন্য আবদুস সোবহান যেমন দায়ী, তেমনি গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ও দায়ী।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto