Bangladesh

মশায় অতিষ্ঠ নগরজীবন

সিটি কর্পোরেশনের দুই মেয়রের শুধুই ‘কথামালা’ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মশা মারার কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না, গতানুগতিক পদ্ধতিতে চলছে লোক দেখানো আয়োজন

মশার দাপটে যেন কোনঠাসা রাজধানীবাসী। কোনো পদ্ধতিতেই দমানো যাচ্ছে না মশার আক্রমণ। এই ছোট প্রাণিটির যন্ত্রণায় কূল কিনারা পাচ্ছে না নগরবাসী। যাদের উপর এই মশা মারার দায়িত্ব তারাও যেন মুখে কুলুপ এঁটেছেন। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মশা মারার কোনো উদ্যোগই যে কাজে আসছে না। নগরবাসী বলছেন গতানুগতিক পদ্ধতিতে চলছে লোক দেখানো নানা আয়োজন। কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছে না কিছুই। দুই সিটির আনুষ্ঠানিকতার বহরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে মশার উপদ্রব।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারও ধীরে ধীরে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার বিস্তার ঘটতে পারে। তাই তীব্র দাবদাহের পর বৃষ্টি শুরু হওয়ার খবরে ডেঙ্গু নিয়ে শঙ্কায় ভুগছেন ঢাকাবাসী। সিটি করপোরেশনের যে প্রস্তুতি তাতে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে ডেঙ্গু। এডিস মশার জীবনচক্র অনুযায়ী মে মাসের পর থেকে ডিমগুলো লার্ভায় পরিণত হতে থাকে। জুন, জুলাই ও সেপ্টেম্বর হচ্ছে এডিসের ভরা মৌসুম। তাই সংস্থাগুলোর আগাম প্রস্তুতি থাকা দরকার বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করলে এবার বর্ষার মৌসুমে ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ গত বছরের চেয়ে ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের অভিযোগ ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের দুই মেয়র মশা মারা কথামালা বলেই দায়িত্ব পালন করছেন। মহানগরের মশা মারতে শত শত কোটি টাকা কার পকেটে যায় তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে।্

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের মশককর্মীদের সকাল-সন্ধ্যা দেখা যায় না। নির্দিষ্ট কিছু এলাকা ছাড়া সব জায়গায় তারা যান না। মশা মারতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ড্রোন, রোড শো, পরিচ্ছন্নতা ও মশককর্মীদের শরীরে অত্যাধুনিক বডি ক্যামেরা সংযোজন করেছে। নানা সময়ে কাজে ব্যবহার করা হয়েছে হাঁস, পাখি, গাছ ও মাছ। তবে মশা বাগে আসেনি। উল্টো প্রতি বাজেটেই যুক্ত হয় বাড়তি খরচ। প্রকৃতপক্ষে সিটি করপোরেশন বা সরকারের একার পক্ষে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। কিন্তু তারাও যে তাদের কাজ ঠিকমতো করছে না, সেটাও স্পষ্ট হয়েছে বিগত দিনগুলোয়। মূলত ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম বছরজুড়ে চালাতে হবে। এখন গ্রামের দিকেও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সবার সমন্বিত উদ্যোগ, মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি, বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা এবং সেই সঙ্গে কর্তৃপক্ষ তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলে ডেঙ্গুর সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া অনেকটাই সহজ হবে।

নগরবাসীর অভিযোগ, সিটি করপোরেশনের গাফিলতি, কার্যকরী ওষুধ ব্যবহার না করা, ঠিকমতো ওষুধ না ছিটানো ও প্রজননক্ষেত্র চিহ্নিত করে ধ্বংস করতে না পারায় মশার উপদ্রব কমে না। পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, সবসময় ছিটানো হয় না মশার ওষুধ। সিটি করপোরেশন থেকে যেখানে নিয়ম আছে প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা করে মশার ওষুধ ছিটাতে হবে, সেখানে তাদের অভিযোগ কালেভদ্রে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। আর সামনেই ডেঙ্গুর মৌসুম হওয়ায় আতঙ্ক বাড়ছে।

রাজধানীর মানিকনগর খালপাড়ে মশার উপদ্রব এত বেশি যে দিনের বেলায় দোকানে কয়েল জ্বালিয়েও রক্ষা পাচ্ছেন স্থানীয়রা। সারাদিনই মশা, সন্ধ্যার পর আরও বাড়ে। ধোলাইরপাড়, দনিয়া, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া এলাকায় ড্রেনের আশপাশের বাসাবাড়িতে মশার উৎপাত অনেক বেশি। আজিমপুরে গড়ে উঠেছে যত্রতত্র ময়লার ভাগাড়। স্থানীয় বাসিন্দা, পথচারী যে যার মতো ময়লা ফেলছেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা জঞ্জাল অপসারণ করেও হিমশিম খাচ্ছেন। ময়লা আবর্জনায় পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে এখন মশার আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে খিলগাঁওয়ের ঝিল। মতিঝিল ঝিল পরিণত হচ্ছে মশার আঁতুর ঘরে।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বর্ষার আগেই রাজধানীর বেশকিছু খাল পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেয়া হলেও মিরপুর এলাকায় নেই কোনো উদ্যোগ। এতে আতঙ্ক বাড়ছে সেখানকার বাসিন্দাদের। কালশী এলাকার খালটি ছোট হতে হতে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। মিরপুরের রূপনগরসহ আরও কয়েকটি খাল পাওয়া গেছে, যেগুলোতে ময়লা আবর্জনার কারণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে মশার প্রজনন।

রাজধানীর মানিকনগর এলাকার বাসিন্দা নেহার আহমদ বলেন, দিনে-রাতে অনেক মশা, কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হয়। সিটি করপোরেশন থেকে আমাদের এখানে ওষুধ দেওয়া হয় কিনা আমরা জানি না। আমরা মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। দীর্ঘদিন পর পর মাঝে মাঝে ওষুধ দিলেও এসব ওষুধে কোনো কাজ হয় না।

গত মে মাসে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডেঙ্গবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। ২০২৩ সালে দেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী আক্রান্ত এবং ১ হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ড. আতিকুর রহমান জানান, ডেঙ্গু এখন সিজনাল নেই, সারা বছরই হচ্ছে। বৃষ্টি শুরু হলে এটা বাড়ছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশা নিরোধক ওষুধ ব্যবহারের পাশাপাশি সিটি করপোরেশনে পক্ষ থেকে সব জায়গায় প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। একই সঙ্গে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন বছরব্যাপী নানান উদ্যোগ নিলেও কীটতত্ত্ববিদ ড. মনজুর চৌধুরী বলছেন, মশানিধনে শুধু জেল-জরিমানা আর জনসচেনতনা বাড়িয়ে কাজ হবে না। সঠিকভাবে জরিপ চালিয়ে দক্ষ জনবল দিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের জরিপে বলা হয়েছে, জরিপকৃত তিন হাজার ১৫২টি বাড়ির মধ্যে ৪৬৩টি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা ও পিউপা (কীটপতঙ্গের একটি জীবনপর্যায়) পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৪২ দশমিক ৩৩ শতাংশ বহুতল ভবনে, ২১ দশমিক ছয় শতাংশ স্বতন্ত্র বাড়িতে, ২১ দশমিক ৬ শতাংশ নির্মাণাধীন ভবনে, ১২ দশমিক ৭৪ শতাংশ সেমিপাকা বাড়িতে ও এক দশমিক ৭৩ শতাংশ খালি জায়গায় মশার লার্ভা ও পিউপা পাওয়া গেছে। এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের সূচক ব্রুটো ইনডেক্স নামে পরিচিত। সাধারণত এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের স্বীকৃত পদ্ধতি ব্রুটো ইনডেক্সর মানদণ্ডে লার্ভার ঘনত্ব ১০ শতাংশের বেশি হওয়া মানেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিস বাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি প্রতি বছর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় মৌসুমপূর্ব, মৌসুম, মৌসুমপরবর্তী তিনটি জরিপ কাজ পরিচালনা করে থাকে। জরিপে দেখা যায়, দুই সিটির ৯৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৮টিতে ব্রুটো ইনডেক্স ২০ এর বেশি। এর অর্থ হচ্ছে, এসব এলাকার ১০০টির মধ্যে ২০টির বেশি পাত্রে মশা বা লার্ভা পাওয়া গেছে। এই এলাকাগুলো ডেঙ্গুর বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ঝুঁকিতে থাকা ওয়ার্ডগুলো হলো- ১২, ১৩, ২০, ৩৬, ৩১, ৩২, ১৭, ৩৩ নং ওয়ার্ড। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলো হলো- ৪, ১৩, ৫২, ৫৪, ১৬, ৩, ৫, ১৫, ১৭, ২৩ নং ওয়ার্ড।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে ১২ নং ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ডে এডিসের ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ৪৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এর পরের অবস্থানে রয়েছে ১৩ এবং ২০ নং ওয়ার্ড, এগুলোতে ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ৪০ শতাংশ। ৩৬ নং ওয়ার্ডে ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ৩১ ও ৩২ নং ওয়ার্ডে ৩০ শতাংশ, ১৭ এবং ৩৩ নং ওয়ার্ডে ২৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে। এছাড়াও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১৩ নং ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ঢাকার সবচেয়ে বেশি ৭৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ৪ নং ওয়ার্ডে ৪৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ, ৫২ ও ৫৪ নং ওয়ার্ডে ৩৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ, ১৬ নং ওয়ার্ডে ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে। এছাড়াও ৩ নং, ৫ নং, ১৫ নং, ১৭ নং এবং ২৩ নং ওয়ার্ডে ৩০ শতাংশ ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে।

কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, সাধারণত জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর এই কয়েক মাস ডেঙ্গুর জন্য উচ্চ ঝুঁকি থাকে। এ সময়টাতে বৃষ্টি হয়, মশার প্রজননের জন্যও তাপমাত্রা উপযুক্ত থাকে। অপরিকল্পিত নগরায়ণের সঙ্গে ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের বড় একটি সম্পর্ক রয়েছে। এখন ঢাকা শহরের মতো অপরিকল্পিত নগরায়ণের প্রভাব পড়েছে দেশের অন্যান্য শহর, জেলা, উপজেলা শহরগুলোয়ও। আমাদের গবেষণায় দেখেছি, এডিস মশা এখন দিনে ও রাতে উভয় সময়েই কামড়ায়। ফলে দুই সময়েই আমাদের সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। সিটি করপোরেশন, স্বাস্থ্য অধিদফতরসহ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জোরালো সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া ডেঙ্গু মোকাবিলা সম্ভব নয়। এলাকায় এলাকায় গিয়ে সশরীর প্রচারণা চালানো ও কর্মসূচি পালন এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সিটি করপোরেশনের উচিত এ ক্ষেত্রে পরিবেশ ও সামাজিক সংগঠন এবং তরুণসমাজকে যুক্ত করা।

ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির বলেন, মশার উপদ্রব বেশি যেসব এলাকায়, সেখানকার জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে। মাইকিং, লিফলেট বিতরণ ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে নিয়ে বৈঠক করা হচ্ছে। জুন মাস থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত শুরু করা হবে। মশক নিয়ন্ত্রণে কারিগরি কমিটি রয়েছে। সেখানে কীটতত্ত্ববিদরা আছেন। সিটি করপোরেশন তাদের কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ করে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে নানা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু সবাই সচেতন না হলে সিটি করপোরেশনের একার পক্ষে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। সিটি করপোরেশন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছে, লার্ভিসাইডিং ও অ্যাডাল্টিসাইডিং করছে। জনগণকে সচেতন করার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এডিসের লার্ভা পেলে ম্যাজিস্ট্রেটরা জরিমানা করছেন। রোদ ও বৃষ্টি এমন আবহাওয়ায় জমা পানিতে এডিসের লার্ভা জন্মায়। তাই এই সময়ে বেশি সতর্ক থাকতে হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
bacan4d
bacan4d