Science & Tech

মস্তিষ্কের বয়স কমানোর যোগসূত্র পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা

নতুন এক গবেষণায় খাদ্যের পুষ্টি উপাদানের সঙ্গে মস্তিষ্কের বয়স বাড়ার গতি কমানোর যোগসূত্র পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা।

ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় ও নেব্রাস্কা-লিংকন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এই গবেষণা পরিচালনা করেন। নির্দিষ্ট খাদ্য ও মস্তিষ্কের বয়স বাড়ার গতি কমানোর মধ্যে সংযোগ খোঁজার জন্য পুষ্টিকর উপাদান গ্রহণের বিপরীতে ৬৫ থেকে ৭৫ বছর বয়সী ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবকের মস্তিষ্কের স্ক্যান করেন গবেষকেরা।

মস্তিষ্কের বয়স বাড়ার দুটি স্বতন্ত্র ধরন শনাক্ত করেন তারা। এর মধ্যে ধীর গতিতে মস্তিষ্কের বয়স বাড়ার সঙ্গে পুষ্টিকর উপাদানের সম্পর্ক পাওয়া গেছে। এসব উপাদান ভূমধ্যসাগরীয় খাবারে পাওয়া যায়। আর আগের গবেষণায় দেখা যায়, এই ধরনের খাবার মানুষের দেহের জন্য সবচেয়ে ভালো।

ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসায়েন্টিস্ট অ্যারন বারবে বলেন, ‘আমরা নির্দিষ্ট পুষ্টির বায়োমার্কারগুলো (জৈবিক অবস্থার অবস্থার পরিমাপযোগ্য সূচক) পর্যবেক্ষণ করেছি। যেমন–ফ্যাটি অ্যাসিড, যা পুষ্টিবিজ্ঞানে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদানের জন্য পরিচিত। 

স্বাস্থ্যের ওপর ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যের ইতিবাচক প্রভাব নিয়ে অনেক গবেষণা রয়েছে। এসব খাদ্যে উপকারী পুষ্টি উপাদান রয়েছে। নতুন গবেষণার ফলাফল আগের গবেষণাগুলোর সংগতিপূর্ণ। 
 
গবেষকেরা শুধুমাত্র অংশগ্রহণকারীদের নিজেদের দেওয়া খাদ্যের গ্রহণের প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করেননি। এর পরিবর্তে পুষ্টির বায়োমার্কারগুলো সন্ধান করার জন্য রক্তের নমুনা বিশ্লেষণ করেন। বয়স্ক ব্যক্তিরা কী খাচ্ছেন ও পান করছেন তার জন্য শক্ত বৈজ্ঞানিক প্রমাণ হলো এসব বায়োমার্কার।

মাছ ও জলপাইয়ের তেলের থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড এবং পালং শাক ও বাদামে উপস্থিত ভিটামিন ই-এর মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো উপকারী বায়োমার্কার হিসেবে চিহ্নিত করার মধ্যে রয়েছে। পাশাপাশি গাজর ও কুমড়ায় পাওয়া ক্যারোটিনয়েড শরীরের প্রদাহ কমায় ও কোষকে রক্ষা করে। 

ধীর গতিতে বয়স বাড়ার সঙ্গে কোলিন নামের আরেকটি বায়োমার্কারের সম্পর্ক পাওয়া গেছে। এটি ডিমের কুসুম ও কাঁচা সয়াবিনে উচ্চ ঘনত্বে থাকে। 

মস্তিষ্কের এমআরআই স্ক্যান এবং বুদ্ধিবৃত্তিক মূল্যায়ন উভয়ের মাধ্যমে মস্তিষ্কের বয়স বাড়ার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেছেন গবেষকেরা। দুই পদ্ধতি একই সঙ্গে ব্যবহারের ফলে মস্তিষ্কের নিউরনগুলো কার্যক্রম ও মানসিক তৎপরতার একটি বিস্তৃত চিত্র উঠে এসেছে। 

বারবে বলেন, আমরা একই সঙ্গে মস্তিষ্কের গঠন, কার্যক্রম ও বিপাকক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করি। মস্তিষ্কের বৈশিষ্ট্য ও জ্ঞানীয় ক্ষমতার মধ্যে যোগসূত্র রয়েছে তা এর মাধ্যমে বোঝা যায়। মস্তিষ্কের বয়স বাড়ার গতি কমাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে পুষ্টি। 

মস্তিষ্ক কীভাবে শরীরের প্রতিটি অংশ ও কাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত তা সম্পর্কে আরও অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করতে সহায়তা করে প্রতিটি নতুন গবেষণা।

শুধুমাত্র একটি অংশ তুলে ধরেছে এই গবেষণা। গবেষণাটি কারণ ও প্রভাব প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট নয়। ২০২৩ সালের একটি গবেষণায় একই রকম ফলাফল পাওয়া গিয়েছিল। সেই গবেষণায় ১২ বছর ধরে অংশগ্রহণকারীদের পর্যবেক্ষণ করা হয়। ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য ও বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতার মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল এই গবেষণায়। 

খাদ্য ও পুষ্টি মস্তিষ্কের বয়স বাড়ার গতিতে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে তার জন্য ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল (মানুষের ওপর পরীক্ষা) শুরু করতে চায় গবেষকরা। পুষ্টিকর খাবার আলঝেইমার বা স্মৃতিভ্রমের মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। 

গবেষণাটি নেচার জার্নালে এনপিজি অ্যাজিং বিভাগে প্রকাশিত হয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button