Science & Tech

মহাকর্ষ বল কি তাৎক্ষণিক ক্রিয়া?

মহাকর্ষ সূত্রে সময়ের কথা বলেননি নিউটন। মহাকর্ষ বলের যে মানের কথা বলা হয়েছে, সেখানে সময়ের কি কোনো প্রভাব থাকবে না? একটা বস্তুর ওপর আরেকটা বস্তুর মহাকর্ষ বলের ক্রিয়া সংঘটিত হতে কত সময় লাগবে? দুটো বস্তুর কোনো একটা বস্তুর যদি ভরের পরিবর্তন হয় তাহলে তাদের মহাকর্ষ বলের পরিবর্তন হবে, সেই পরিবর্তনটা হতে কত সময় লাগবে?

পৃথিবী আর সূর্যের কথাই ধরা যাক। সূর্যের মহাকর্ষ টান আর পৃথিবীর রৈখিক বেগের পারস্পরিক ক্রিয়ার কারণেই পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘুরছে। পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব মোটামুটি ১৫ কোটি কিলোমিটার।

ধরা যাক, মহাকাশের আরেকটি বিরাট নক্ষত্র কক্ষচ্যুত হয়ে সূর্যের ওপর এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। তাল সামলাতে না পা পেরে সূর্য তার অবস্থান থেকে খানিকটা সরে গেল। ফলে পৃথিবীর সাথে তাঁর দূরত্বের হেরফের হলো। ফলে মহাকর্ষ বলের মানেরও পরির্তন ঘটবে।

কিন্তু পৃথিবী ঠিক কখন টের পাবে মহাকর্ষ বলের পরিবর্তন হয়েছে? তা কি সূর্যের অবস্থানচ্যূত হওয়ার সাথে সাথে? নাকি পরে? পরে হলে, সেটা কত পরে?

নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র বলছে দূরত্বের হেরফের হলে বস্তুদ্বয়ের আকর্ষণ বলেরও হেরফের হবে। তাই সূর্যের অবস্থানচ্যূত হলে সাথেই সাথেই পৃথিবী তা টের পেয়ে যাওয়ার কথা। তাহলে ঘটনাটা কী দাঁড়াচ্ছে?

মহাকর্ষীয় আকর্ষণ কি দূরক্রিয়া? মানে কালক্ষেপণ না করেই কোনো বার্তা কোটি কোটি কিলোমিটার দূরে ছড়িয়ে দেয়া? তা কি সম্ভব?

এখানেই আসলে মূল সমস্যা। কিন্তু নিউটনের সময়ে এই ক্রটির কথা কেউ ভাবেনি।

পরে আইনস্টাইন এই সমস্যার সমাধান করেন। তার জেনালের থিওরি অব রিলেটিভিটি প্রকাশ করেন ১৯১৫ সালে। তখন থেকেই জানা যায়, মহাকর্ষ বল কোনো তাৎক্ষণিক ক্রিয়া নয়। এর আগে ১৯০৫ সালের তিনি বিশের আপেক্ষিকতা তত্ত্বে দেখেন মহাবিশ্বের কোনো কিছুই আলোর চেয়ে বেশি গতিতে চলে না। জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটি অর্থাৎ সাধারণ আপেক্ষিবতা বলে মহাকর্ষ বল ক্রিয়া করে আলোর গতিতে।

অর্থাৎ সূর্যের স্থানচূত্য হলে পৃথিবী থেকে সেটা বুঝতে সময় লাগবে আট মিনিট ২০ সেকেন্ড। কারণ সূর্য থেকে পৃথিবীতে সময় লাগে আলো আসতে আট মিনিট ২০ সেকেন্ড। অর্থাৎ মহাকর্ষ বল দূরক্রিয়া বা তাৎক্ষণিক ক্রিয়া নয়। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button