Science & Tech

মহাকাশযানের কবর

গত শতাব্দীর ষাটের দশক থেকে চাঁদে যাওয়াসহ মহাকাশের নানা রকম পরীক্ষায় এগিয়ে যেতে যুক্তরাষ্ট্র ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে চলেছে প্রতিযোগিতা। উভয় দেশই একের পর এক ছোট-বড় মনুষ্যবিহীন মহাকাশ অভিযান পরিচালনা করেছে; পাঠানো হয়েছে অসংখ্য কৃত্রিম উপগ্রহ। এর মধ্যে কিছু যান মহাকাশে রয়ে গেলেও বেশির ভাগই ফেরত এসেছে। এখনও প্রতিনিয়ত বিভিন্ন দেশ থেকে মহাকাশযান ও কৃত্রিম উপগ্রহ যাচ্ছে। 

কিন্তু ফেরত আসা এসব মহাকাশযানের শেষ ঠিকানা কোথায়, তা হয়তো অনেকেই জানে না।

মহাকাশযান ও পরিত্যক্ত কৃত্রিম উপগ্রহের তেমনই একটি কবরস্থান প্রশান্ত মহাসাগরের অন্তত চার কিলোমিটার পানির নিচে, যা পয়েন্ট নিমো নামে বিখ্যাত; যা ভবিষ্যৎ পৃথিবীর মানুষের জন্য অচিরেই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পয়েন্ট নিমো স্থানটি কাছাকাছি ভূখণ্ড থেকে প্রায় ২ হাজার ৬৮৮ কিলোমিটার বা ১ হাজার ৬৭০ মাইল দূরে। এখানেই মেয়াদ পূর্ণ করে কৃত্রিম উপগ্রহ, রকেটের ভগ্নাংশ এবং মহাকাশ স্টেশন নিমজ্জিত হয়। এরপর চিরদিনের জন্য সেগুলো চলে যায় অন্ধকার সমুদ্রতলে।

সাগরের দুর্গম এই অংশে অল্প মানুষের যাওয়ার ভাগ্য হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম ব্রিটিশ নাবিক ডি কাফারি। তিনি বলেন, প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত পয়েন্ট নিমো এলাকাটি রহস্যময়। এখানে বিশাল বিশাল ঢেউ ওঠে, যা উত্তেজনাপূর্ণ এবং কিছুটা ভীতিকরও। কাছাকাছি ভূখণ্ড থেকে সবচেয়ে দূরে অবস্থিত এ জায়গায় আপনি কোনো বিপদে পড়লে উদ্ধারের সম্ভাবনা কম। এখানে জীবনের একমাত্র লক্ষণ হলো জলের রেখার ঠিক ওপরে নৌকার ত্রিভুজাকার পালের মতো দেখা যাওয়া হাঙরের পাখনা। 

জানা গেছে, সাগরের এই অঞ্চলে সাধারণত মানুষের অন্য কোনো কার্যকলাপ, যেমন– জাহাজ চালানো বা মাছ ধরার জন্য ব্যবহৃত হয় না। শুধু পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরতে থাকা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের নভোচারীরা মাত্র ৪১৫ কিলোমিটার ওপর থেকে মাঝেমধ্যে এ স্থানের ওপর দিয়ে উড়ে যান। অগম্যতার কারণে পয়েন্ট নিমো তাই মহাসাগরীয় মেরু হিসেবেও পরিচিত। 
মূলত বিখ্যাত কল্পবিজ্ঞান লেখক জুলভার্নের লেখা ‘টোয়েন্টি থাউজেন্ড লিগস আন্ডার দ্য সি’ উপন্যাসের চরিত্র সাবমেরিন ক্যাপ্টেন নিমোর নামে এ স্থানের নাম রাখা হয়েছে। কারণ, সেই ক্যাপ্টেনের সাবমেরিনটিরও সলিল সমাধি হয়েছিল। 

পৃথিবীর মানচিত্রে পয়েন্ট নিমো খুঁজে পেতে আমাদের চোখ রাখতে হবে নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ চিলির মধ্যখানে অবস্থিত বিস্তীর্ণ সাগরে। পয়েন্ট নিমোর উত্তরে পিটকেয়ার দ্বীপপুঞ্জের জনবসতিহীন ডুসি দ্বীপ এবং দক্ষিণে অ্যান্টার্কটিকার মাহের দ্বীপ, পশ্চিমে চ্যাথাম দ্বীপপুঞ্জ ও পূর্বে চিলি। এ অঞ্চল মহাসাগরের অন্যতম প্রাণহীন ও বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলোর একটি। মূলত সে জন্যই বাতিল মহাকাশযানের কবরস্থান হিসেবে এই পয়েন্ট বেছে নেওয়া হয়েছে।

১৯৭১ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জাপান, ইউরোপসহ বৈশ্বিক মহাকাশ সংস্থাগুলো পয়েন্ট নিমোর চারপাশে সমুদ্রের জনবসতিহীন অঞ্চলে ২৬৩টির বেশি মহাকাশ-বস্তুকে বিধ্বস্ত করেছে। এর প্রায় দেড়শই রাশিয়ার।

ডুবুরিরা জানান, পয়েন্ট নিমোতে যাওয়ার পর এসব বাতিল মহাকাশযান, ভাঙা কৃত্রিম উপগ্রহগুলো অনেকটা ডুবন্ত জাহাজের মতোই কাজ করে। একসময় সেগুলো পরিণত হয় মাছ বা জলজ প্রাণীদের আবাসস্থলে।

Show More

One Comment

  1. It is the best time to make some plans for the longer term and it is time to be happy.
    I have learn this publish and if I could I desire to counsel you some attention-grabbing things or
    tips. Perhaps you can write subsequent articles relating to this article.
    I want to learn more things approximately it!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d