Science & Tech

মহাকাশের অসীমে ঘুরছে একটা ‘চোখ’, এটাই নাকি ‘নতুন পৃথিবী’

দেখলে মনে হতে পারে মানব চক্ষু। আমাদের অক্ষিগোলক বা আইবলের যেমন অধিকাংশটাই সাদা এবং মাঝে গোল কালো, নীল, বাদামী বা অন্য রঙের মণি থাকে, তেমনই এর চারপাশটা কঠিন বরফে সাদা এবং তার মধ্যে রয়েছে বৃত্তাকৃতি এক মহাসাগর। সৌরজগতের বাইরে এমনই এক অদ্ভুত গ্রহের সন্ধান পেল জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। যে গ্রহ সম্ভবত বাসযোগ্য, অর্থাৎ, প্রাণ থাকতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। সৌরজগতের বাইরের, চোখের মতো দেখতে এই গ্রহেই থাকতে পারে আমাদের প্রতিবেশীরা। বিজ্ঞানীদের এমনই অনুমান।

নতুন নয়, ২০১৭ সালেই এই গ্রহটির খোঁজ পেয়েছিল জেমস ওয়েব। নাম দেওয়া হয়েছিল, এলএইচএস-১১১৪০বি। প্রাথমিকভাবে, গ্রহটিকে মোটেই বাসযোগ্য বলে মনে করেননি বিজ্ঞানীরা। এই গ্রহে জল থাকলেও, মিথেন এবং ঘন অ্যামোনিয়া থাকায়, গ্রহটি অনেকটাই আমাদের সৌরজগতের নেপচুনের মতো বলে মনে করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু ‘দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স’-এ প্রকাশিত এক সাম্প্রতিক নিবন্ধে বলা হয়েছে, বিজ্ঞানীদের আগে এই গ্রহে যতটা পানি ও বরফ আছে বলে মনে করেছিলেন, তার থেকে পানি ও বরফের পরিমাণ অনেকটাই বেশি। প্রাণও থাকতে পারে এই গ্রহে।

নিবন্ধে বলা হয়েছে, বর্তমানে যে সকল নাতিশীতোষ্ণ এক্সোপ্ল্যানেটগুলির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, তার মধ্যে তরল অবস্থায় জল থাকার বিষয়ে সেরা বাজি বলে মনে করা হচ্ছে এলএইচএস-১১১৪০বি গ্রহটিকেই। নিবন্ধটির প্রধান প্রথম লেখক তথা মন্টরিয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী, চার্লস ক্যাডিউক্স জানিয়েছেন,সম্ভাব্য বাসযোগ্য এক্সোপ্ল্যানেটগুলির সন্ধানে এটা একটা বড় মাইলফলক। তিনি জানিয়েছেন গ্রহটি পৃথিবী থেকে ৫০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এটি পৃথিবীর থেকে আয়তনে প্রায় ১.৭৩ গুণ বড়। ভর পৃথিবীর থেকে ৫.৬ গুণ বেশি। একটি নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘোরে গ্রহটি, কক্ষপথটি এতই ছোট যে পৃথিবীর হিসেবে মাত্র ২৫ দিনেই গ্রহটিতে এক বছর হয়।

আর এর একটি দিকই সব সময় নক্ষত্রের দিকে মুখ করে থাকে। দেখলে মনে হতে পারে, যেন মহাজাগতিক আগুনের গোলার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে একটি অক্ষিগোলক। এই গলিত অংশের ব্যাস প্রায় ৪,০০০ কিলোমিটার। এর নক্ষত্রটি সূর্যের মতো অল্পবয়সী নয়। একটি অনেক ঠান্ডা লাল বামন গ্রহ। যদি সূর্যের মতো হত, তাহলে, এর সব বরফই গলে গিয়ে গ্রহটি মহাসাগরে ঢেকে যেত। ফলে, বসবাসের অযোগ্য হয়ে যেত। কিন্তু তা হয়নি। গ্রহটির বেশিরভাগ অংশ হিমায়িত হলেও, গবেষকরা জানিয়েছেন, চোখের মণির মতো দেখতে সমুদ্রের আশপাশের এলাকায় ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে পারে। হিমায়িত এই পৃথিবীতে যা সামুদ্রিক জীবনের জন্য বাসযোগ্য তাপমাত্রা বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button