মহাকাশে শিশু জন্মালে কি ঘটবে, কি বলছে বিজ্ঞান?

বিজ্ঞান যতো এগিয়ে যাচ্ছে, ততো চমকপ্রদ কাণ্ডেরও জন্ম হচ্ছে। আজকের অসম্ভবই কালকে আসছে হাতের মুঠোয়। সায়েন্স ফিকশনের অনেক কিছুই এখন বাস্তব। এবার শোনা যাচ্ছে ভিন্ন এক গল্প। সেই কাণ্ড আপাতত দৃষ্টি তা আপনার নিছক কল্পনাই মনে হতে পারে। তবে বিজ্ঞানীরা এ নিয়েও ভাবছেন।
মহাকাশে কি প্রজনন এবং নিরাপদে শিশুর জন্ম দেওয়া সম্ভব? মঙ্গলগ্রহে মানববাহী যান পাঠানোর পরিকল্পনা যতই বাস্তবায়িত হওয়ার পথে এগোচ্ছে, ততই উঠে আসছে এমনই একের পর এক জটিল প্রশ্ন। কারণ, মঙ্গলে গিয়ে ফিরে আসতে সময় লাগবে প্রায় ৯ মাস— যা একটি গোটা গর্ভাবস্থার সমান। তা হলে কি গর্ভধারণ থেকে শুরু করে প্রসব পর্যন্ত গোটা প্রক্রিয়া মহাকাশেও সম্পন্ন হতে পারে? পৃথিবীর মতোই হেসেখেলে বেড়ে উঠতে পারে সদ্যোজাত শিশু? এ বার এমনই নানা প্রশ্নের উত্তর দিল নতুন গবেষণা।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, মহাকাশে গর্ভধারণ সম্ভব। শরীরে একবার ভ্রূণ রোপন করা হলে গর্ভাবস্থা স্বাভাবিক নিয়মেই এগোবে। কিন্তু প্রসব হবে অত্যন্ত জটিল। এর মূল কারণ মাইক্রোগ্র্যাভিটি বা মাধ্যাকর্ষণশূন্যতা। বিজ্ঞানী অরুণ ভি হোলডেন বলছেন, মাধ্যাকর্ষণ ছাড়া দেহজ তরল ভেসে বেড়ায়, ফলে মহাকাশে প্রসব বেশ জটিল একটি প্রক্রিয়া হয়ে উঠতে পারে। শিশুর দেখভাল করাও হবে যারপরনাই ঝক্কির কাজ। কারণ, পৃথিবীর মাটিতে শিশুকে কোল নেওয়া বা দুধ খাওয়ানোর মতো সহজ কাজগুলিও মহাকাশে রীতিমতো দুরূহ হয়ে উঠবে!
ভ্রূণ ভেসে থাকে অ্যামনিওটিক তরলে। অরুণ বলছেন, এই পরিবেশ ভ্রূণকে সুরক্ষিত এবং ভাসমান রাখতে সাহায্য করে, অনেকটা মহাকাশে নভশ্চরদের ওজনহীনতার মতোই! আবার, মহাকাশে প্রসবের ক্ষেত্রে মাধ্যাকর্ষণই একমাত্র সমস্যা নয়। বায়ুমণ্ডল আমাদের পৃথিবীর চারদিকে একটি প্রতিরক্ষামূলক বলয় তৈরি করে রাখে, যাতে ক্ষতিকর মহাজাগতিক রশ্মির প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এ সব রশ্মি মানবদেহের সংস্পর্শে এলে কোষের গুরুতর ক্ষতি হতে পারে। বাড়তে পারে ক্যানসারের ঝুঁকিও। ফলে ক্ষতিকর মহাজাগতিক রশ্মির সংস্পর্শে এলে মা এবং ভ্রূণ— উভয়ের উপরেই স্থায়ী প্রভাব পড়তে পারে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও ভেঙে পড়তে পারে।
এ তো গেল প্রসবের আগের কথা। বিজ্ঞানীদের মতে, প্রসবের পরেও ঝুঁকি কমে না। বরং মহাকাশে জন্ম নেওয়া শিশু মাইক্রোগ্র্যাভিটির কারণে নানা বিকাশগত সমস্যার মুখোমুখি হবে। মাধ্যাকর্ষণের অনুপস্থিতির কারণে দাঁড়ানো বা বসার ভঙ্গিতে স্থায়ী পরিবর্তন হতে পারে। প্রভাবিত হতে পারে মাথা তোলা, হামাগুড়ি দেওয়া এবং হাঁটার মতো প্রয়োজনীয় মোটর দক্ষতাগুলিও। ফলে সামগ্রিক ভাবে শিশুর শারীরিক এবং মস্তিষ্কের বিকাশে বাধা সৃষ্টি হতে পারে।