মহাকাশ আবর্জনার বিপদ: কেসলার সিনড্রোমের ভয়াবহ প্রভাব

মহাকাশে বাড়তে থাকা আবর্জনার কারণে বিজ্ঞানীরা কেসলার সিনড্রোম নামের একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কিত। ১৯৭৮ সালে নাসার বিজ্ঞানী ডোনাল্ড জে. কেসলার এই তত্ত্বটি প্রস্তাব করেন। তত্ত্ব অনুযায়ী, পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে (১০০-১,২০০ মাইল উপরে) বস্তুগুলোর ঘনত্ব নির্দিষ্ট মাত্রা ছাড়ালে সংঘর্ষের শৃঙ্খলাবদ্ধ প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। এর ফলে কক্ষপথটি মানব ব্যবহারের জন্য অনুপযোগী হয়ে যেতে পারে এবং মহাকাশ অন্বেষণ কার্যত বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
কেসলার সিনড্রোম কী?
নিম্ন পৃথিবীর কক্ষপথে ব্যবহৃত স্যাটেলাইট এবং অন্যান্য পরিত্যক্ত বস্তু বর্তমানে মহাকাশ আবর্জনার প্রধান অংশ। আগামী কয়েক বছরে হাজার হাজার নতুন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা রয়েছে। সরকারি প্রকল্পগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগের প্রসার মহাকাশে আবর্জনা বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করছে।
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, এই পরিস্থিতি সংঘর্ষের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে। সংঘর্ষ থেকে তৈরি হওয়া নতুন আবর্জনা আরও সংঘর্ষের কারণ হতে পারে। এর ফলে কক্ষপথ বিপজ্জনক হয়ে উঠবে এবং মহাকাশে রকেট উৎক্ষেপণ ও স্যাটেলাইট পরিচালনা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।
সম্ভাব্য প্রভাব
২০১৩ সালের ‘গ্র্যাভিটি’ চলচ্চিত্রে কেসলার সিনড্রোমের সম্ভাব্য বিপর্যয়ের কল্পনা তুলে ধরা হয়েছিল। যদিও বাস্তবে এটি দ্রুত ঘটবে না, তবে এটি কয়েক দশক বা শতাব্দী ধরে ধীরে ধীরে বিকশিত হতে পারে।
বর্তমানে পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আবর্জনার স্তূপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। নাসার তথ্য অনুযায়ী, এখানে প্রায় ৬,০০০ টন আবর্জনা জমা রয়েছে। আন্তর্জাতিক মহাকাশ আইন না থাকায় এই আবর্জনা পরিষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া কঠিন ও ব্যয়বহুল।
বিজ্ঞানীদের সতর্কবার্তা
ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনার প্ল্যানেটারি সায়েন্সের অধ্যাপক ড. বিষ্ণু রেড্ডি বলেছেন, গত চার বছরে মহাকাশে বস্তু উৎক্ষেপণের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। আমরা সেই পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছি, যা আমরা এতদিন ভয় পাচ্ছিলাম।
কেসলার সিনড্রোমের ফলাফল অত্যন্ত ভয়াবহ হতে পারে। এটি মহাকাশচারীদের জীবনের জন্য হুমকি সৃষ্টি করবে, রকেট উৎক্ষেপণ স্থগিত করবে এবং বিদ্যমান স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ধ্বংস করে দেবে। মহাকাশ অন্বেষণের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সময়োচিত পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।