মহাকাশ থেকে আসা রহস্যময় সংকেতের উৎস কী

দশকের পর দশক ধরে বিজ্ঞানীরা মহাকাশ থেকে আসা বিভিন্ন সংকেত পর্যবেক্ষণ করছেন। এই সংকেতের মধ্যে রেডিও তরঙ্গ ও তড়িৎ–চুম্বকীয় বিচ্ছুরণ থাকে। বিভিন্ন পালসার বা সংঘর্ষরত নক্ষত্র ও সূর্যের মতো প্রাকৃতিক বস্তু থেকে সংকেতগুলো আসে বলে ধারণা করা হলেও এগুলোর উৎস এখনো অজানা। এই রহস্যময় সংকেত প্রচলিত কোনো প্রাকৃতিক বিষয়ের সঙ্গে মেলে না বলে ভিনগ্রহের কোনো বুদ্ধিমান প্রাণী বা এলিয়েন পাঠাচ্ছে বলেও ধারণা করেন অনেকে। বিজ্ঞানীরা আধুনিক প্রযুক্তি ও বহু দশকের তথ্য পর্যালোচনা করে সতর্কতার সঙ্গে এই রহস্য অনুসন্ধান করছেন।
বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, বিভিন্ন রহস্যময় সংকেতের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হচ্ছে ওয়াও নামের একটি সিগন্যাল। এটি ১৯৭৭ সালে প্রথম শনাক্ত করা হয়। বিজ্ঞানী জেরি এহমান সে সময় ৭২ সেকেন্ডের অস্বাভাবিক শক্তিতরঙ্গ রেকর্ড করেন। সংকেত পাওয়ার পরে তিনি তাঁর কাগজে ইংরেজিতে ‘ওয়াও’ লিখেছিলেন। বহু বছর ধরে গবেষণা করেও এমন কোনো প্রাকৃতিক ঘটনার মাধ্যমে এই সংকেতের উৎস নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করা যায়নি। সাম্প্রতিক বিশ্লেষণ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, ওয়াও সংকেত হয়তো একটি মৃত নক্ষত্রের সঙ্গে হাইড্রোজেন মেঘের মিথস্ক্রিয়ার ফলে তৈরি লেজারসদৃশ বিচ্ছুরণ হতে পারে। যদিও অনেক বিজ্ঞানী সংকেতটিকে ভিনগ্রহের প্রাণের উৎস থেকে আসতে পারে বলে অনুমান করেন।
এ বছরের শুরুর দিকে বিজ্ঞানীরা এএসকেএপি জে১৮৩২-০৯১১ নামে একটি অনন্য বস্তুর সন্ধান পান। পৃথিবী থেকে ১৪ হাজার ৭০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত বস্তুটি। সেখান থেকে প্রতি ৪৪ মিনিটে সমন্বিত রেডিও তরঙ্গ ও এক্স-রে স্পন্দন আসছে। এ ধরনের লং পিরিয়ড ট্রানজিয়েন্ট বস্তুর এক্স-রে নির্গমন প্রথমবার দেখা গেছে। বিজ্ঞানীরা এখনো বোঝার চেষ্টা করছেন কেন এমন নির্দিষ্ট বিরতিতে সংকেত চালু ও বন্ধ হয়। কিছু তত্ত্ব বলছে, সেটি একটি ম্যাগনেটার বা একটি মৃত নক্ষত্র, যার শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র রয়েছে। অনেকে আবার বস্তুটিকে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের মহাজাগতিক বস্তু হিসেবে দেখছেন।
নতুন ধরনের মহাজাগতিক বস্তুকে ফাস্ট রেডিও বার্স্টস বা এফআরবিস বলা হচ্ছে। এসব সংকেত দূরবর্তী গ্যালাক্সি থেকে আসা তীব্র মিলিসেকেন্ডব্যাপী শক্তির ঝলক। ২০২৪ সালে এফআরবি ২০২২০৬১০এ নামে একটি সংকেত শনাক্ত করা হয়। সেটি আট বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত একটি গ্যালাক্সি ক্লাস্টার থেকে এসেছে। এসব সংকেত অপ্রত্যাশিত ও অত্যন্ত শক্তিশালী। নাসার হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করে গবেষকেরা সেই ক্লাস্টারের ছবি সংগ্রহ করেছেন।