মহাবিশ্বের অজানা রহস্য উন্মোচনের নতুন দিগন্ত
তিন বছর আগে আজকের এই দিনে, মহাকাশে মানুষের পাঠানো সবচেয়ে শক্তিশালী ও বৃহত্তম টেলিস্কোপ জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (জেডব্লিউএসটি)-এর যাত্রা শুরু হয়েছিল। ৩০ বছরের পরিশ্রমের ফসল এই টেলিস্কোপ ইতোমধ্যে মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছে।
এই টেলিস্কোপ সৌরজগৎ, দূরবর্তী গ্রহের বায়ুমণ্ডল এবং মহাবিশ্বের প্রথম তারকা ও গ্যালাক্সির সন্ধান করেছে। এটি মহাজাগতিক গভীরে গিয়ে এমন সব রহস্য উন্মোচন করেছে, যা আমাদের বিদ্যমান জ্ঞানকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে।
জেডব্লিউএসটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দূরবর্তী যে গ্যালাক্সির সন্ধান দিয়েছে, তা মহাবিশ্বের বয়স যখন মাত্র ৩০০ মিলিয়ন বছর ছিল, তখন গঠিত হয়েছিল। এই গ্যালাক্সিটি আমাদের সূর্যের ভরের প্রায় ৪০০ মিলিয়ন গুণ ভর সংগ্রহ করেছে।
অবাক করা বিষয় হলো, প্রথম দিকের গ্যালাক্সিগুলো অত্যন্ত উজ্জ্বল এবং নীল রঙের হলেও, ধূলিকণার কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এই বিষয়টি বিজ্ঞানীদের জন্য একটি বড় ধাঁধা। ধারণা করা হচ্ছে, হয়তো বড় তারাগুলো ধূলিকণা তৈরি না করেই সরাসরি ধ্বংস হয়ে যায়, অথবা প্রবল বিকিরণে ধূলিকণাগুলো ধ্বংস হয়ে যায়।
জেডব্লিউএসটি প্রথম গ্যালাক্সিগুলোর রাসায়নিক গঠনে অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য খুঁজে পেয়েছে। এই গ্যালাক্সিগুলোতে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রোজেন পাওয়া গেছে, যা আমাদের সূর্যের তুলনায় অনেক বেশি। তবে অন্যান্য ধাতুর পরিমাণ তুলনামূলক কম। এর অর্থ, তারকার রাসায়নিক বিবর্তন সম্পর্কে আমাদের বিদ্যমান মডেল এখনও অসম্পূর্ণ।
জেডব্লিউএসটি মহাবিশ্বের প্রাচীন ‘লাল বিন্দু’গুলোর সন্ধান পেয়েছে। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল এগুলো সুপারডেন্স গ্যালাক্সি। তবে বিস্তারিত পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এগুলো গ্যাস ও তারার মিশ্রণ। এই ‘লাল বিন্দু’ সম্ভবত ব্ল্যাক হোল এবং তারকার গঠনের প্রাথমিক অবস্থার একটি কণিকা উন্মোচন করতে পারে।
টেলিস্কোপটি ছোট ও দুর্বল গ্যালাক্সিগুলোর সন্ধান দিয়েছে, যা বিগ ব্যাংয়ের পর মহাবিশ্বের ‘অন্ধকার যুগ’ শেষ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ ইতোমধ্যেই মহাবিশ্বের অনেক অজানা দিক উন্মোচন করেছে। তবে আরও অনেক প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে এই টেলিস্কোপের ভবিষ্যৎ পর্যবেক্ষণগুলো গুরুত্বপূর্ণ হবে।