Science & Tech

মহাবিশ্বের বেশির ভাগ এলাকাই কি অন্ধকার

দিনের আলোয় সব আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই। রাতের বেলা মহাকাশের দিকে তাকালে অসংখ্য তারার ঝলকানি দেখি আমরা। মহাবিশ্ব কতটা আলোকিত আর কতটা অন্ধকার, তা স্পষ্ট করে বলা কঠিন, তবে তা খুঁজে বের করতে বিভিন্ন তত্ত্ব নিশ্চিত করা খুব জরুরি। এই বিষয় জানতে বিজ্ঞানীদের আমাদের সূর্য থেকে অনেক দূরে রীতিমতো একটি মহাকাশযান পাঠাতে হয়েছিল।

মহাবিশ্ব কতটা অন্ধকার—এই প্রশ্ন অনেক বছর ধরে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের বিরক্ত করেছে। আমাদের সৌরজগতের বিক্ষিপ্ত সূর্যালোক, শত শত কোটি ছায়াপথের (গ্যালাক্সি) আন্তগ্রহের ধূলিকণা ও বরফ মহাবিশ্বের মোট আলোর পরিমাপে হস্তক্ষেপ করে। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার নিউ হরাইজন মহাকাশযান আমাদের মহাবিশ্বের মোট আলোর পরিমাণ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ও সরাসরি তথ্য দেওয়ার কাজ করেছে। ২০০৬ সালে উৎক্ষেপণের পর ১৮ বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেছে নিউ হরাইজনের। নিউ হরাইজন এরই মধ্যে প্লুটো গ্রহের পৃষ্ঠের ম্যাপিংয়ের তথ্য প্রদান করেছে আমাদের। এখন নিউ হরাইজন মহাকাশযান মহাকাশ কতটা উজ্জ্বল, সেই প্রশ্নের উত্তর বের করতে সহায়তা করছে। সৌরজগতের বাইরের ঠান্ডা, অন্ধকার জায়গায় পৃথিবী থেকে ৫৪০ কোটি মাইল দূরে অবস্থান করে মহাকাশযানটি মহাবিশ্বের আলো পরিমাপ করেছে। আলোর পরিমাপ নিয়ে বিজ্ঞানীরা দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নালে ফলাফল প্রকাশ করেছেন।

মহাবিশ্বের দৃশ্যমান আলোর তথ্য, যা কসমিক অপটিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড (সিওবি) নামে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এই তথ্য তারা থেকে আসা আলো ও তাত্ত্বিকভাবে কৃষ্ণগহ্বরের (ব্ল্যাক হোল) বাইরের অংশের সঙ্গে তথ্য বিশ্লেষণে বিজ্ঞানীদের সহায়তা করে। জ্যোতির্বিজ্ঞানী টড লাউয়ার বলেন, সৌরজগতের অভ্যন্তরীণ এলাকায় থেকে আলোক শক্তি পরিমাপ করা আসলে আমাদের বড় অনিশ্চয়তায় ফেলে দেয়। অনেক বছর ধরে সরাসরি আলো মাপার জন্য বারবার চেষ্টা করা হচ্ছে। সৌরজগতের আমাদের অংশে খুব বেশি সূর্যালোক ও প্রতিফলিত আন্তগ্রহীয় ধূলিকণা রয়েছে, যা চারপাশে কুয়াশার মতো আলো ছড়িয়ে দেয়। এতে দূরবর্তী মহাবিশ্ব থেকে আসা ক্ষীণ আলো অস্পষ্ট হয়ে যায়। এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে নিউ হরাইজন মহাকাশযানটিকে কুইপার বেল্টে আন্তনাক্ষত্রিক মহাকাশে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। চলতি পথে মহাকাশযানটি সূর্যের আলো থেকে তার লং রেঞ্জ রিকনেসান্স ইমেজার টেলিস্কোপ ক্যামেরাকে রক্ষা করতে কাজ করে। যানটি মিল্কিওয়ের উজ্জ্বল কেন্দ্র থেকে দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করে। মহাকাশযানটি তখন মহাবিশ্বের দুই ডজন ছবি সংগ্রহ করে। সেই ছবি বিশ্লেষণ করে নতুন তথ্য পাওয়া গেছে।

ছবির আলোর মাত্রা পর্যবেক্ষণ করার পর গবেষকেরা মহাবিশ্বের দৃশ্যমান আলো সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেন। মহাবিশ্বে দৃশ্যমান আলোর তেজস্ক্রিয় তীব্রতা ১১.১৬ ন্যানোওয়াট পার স্টেরডিয়ান। মহাবিশ্বে কৌণিক গতির মাপে স্টেরডিয়ান একক ব্যবহার করা হয়। বিজ্ঞানী লয়ার বলেন, এ তথ্যের সরলতম ব্যাখ্যা হচ্ছে গ্যালাক্সির বাইরের দিকে তাকালে আমরা সেখানে অন্ধকার খুঁজে পাই। সেখানে আর কিছুই পাই না।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button