Bangladesh

মহাসচিবের খোঁজে বিএনপি

জাতীয় কাউন্সিল অনিশ্চিত ♦ বহিষ্কৃতরা ফিরতে চান ♦ পাঁচ বছরে ৭ শতাধিক নেতা বহিষ্কার কেন্দ্রীয় ২৭ নেতার দেশে ফেরায় অনিশ্চয়তা! ♦ কমিটি গঠিত হয়নি ৩০ জেলায়

রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিতে এখন মহাসচিবের খোঁজ চলছে। নতুন মহাসচিব হিসেবে কাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে, দলের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বর্তমান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পরিবর্তে কে এই কঠিন দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবেন, আর কে-ই বা এতটা দক্ষ ও নেতা-কর্মীদের মাঝে গ্রহণযোগ্য- এসব নিয়ে দলের হাইকমান্ডে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। দেশে ও বিদেশে অবস্থানরত অনেক নেতার সঙ্গেই কথা বলছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। অনেকে দেখা করেছেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গেও। তবে তারা কেউ এ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাচ্ছেন না। দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এদিকে দলের ভিতরে সবকিছু নিয়েই চলছে এক গভীর অনিশ্চয়তা। দীর্ঘ আট বছর পার হলেও বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল আয়োজনে রীতিমতো অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। গত পাঁচ বছরে দল ও অঙ্গসংগঠনের ৭ শতাধিক নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তারা এখন দলে ফেরার জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন জানিয়েছেন। অন্যদিকে বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে দলের ২৭ জন নেতা দেশের বাইরে অবস্থান করছেন, তাদের দেশে ফেরার ব্যাপারে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে রদবদলের হিড়িক চললেও সারা দেশে ৩০টি সাংগঠনিক জেলা কমিটি গঠন সম্পন্ন হয়নি।

বিএনপির বিদেশে অবস্থান করা নেতাদের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সালাহউদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মুশফিকুর রহমান, কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন, ড. ওসমান ফারুক, গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক মায়িদুর রহমান, অধ্যাপক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান এ্যাপোলো, এম এ কাইয়ূম, হুমায়ূন কবির, আনোয়ার হোসেন খোকন, ব্যারিস্টার মুহাম্মদ আবদুস সালাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ সুজাত মিয়া, আলী আজগর লবি, কয়সর এম আহমদ, মির্জা খোকন, সাহাবুদ্দিন লাল্টুসহ অনেকের নামেই কয়েক ডজন করে মামলা রয়েছে। কারও নামে রয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানা। দেশে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে বিমানবন্দর থেকেই গ্রেফতারের আশঙ্কা করছেন তারা। অনেকের রয়েছে জীবননাশেরও শঙ্কা। এর ফলে তারা এ অবস্থায় দেশে ফিরতে চাচ্ছেন না বলে জানা যায়। জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ১৫ ফেব্রুয়ারি কারামুক্ত হয়ে দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তখন থেকেই গুঞ্জন দলের মহাসচিব পরিবর্তনের। শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে স্বপদ থেকে সরে যেতে চাওয়ার খবর চাউর হয়ে পড়ে চারদিকে। আলোচনায় আসে দেশে-বিদেশে অবস্থানরত বেশ কয়েকজন নেতার নাম। বেশ তৎপরতাও লক্ষ্য করা যায় তাদের মধ্যে। কিন্তু ‘ধীরে চলো নীতিতে’ এগোচ্ছেন দলের হাইকমান্ড। তবে তিনি কথাবার্তা বলাসহ দল পুনর্গঠনের সব প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছেন।

নতুন মহাসচিব পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। দলের হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে তাকে বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গত বছর ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে তিনি দলের কূটনীতি ও সাংগঠনিক কর্মকান্ডে বেশ সক্রিয়। গত তিন মাস ধরে কারাবন্দি ও কারামুক্ত নেতাদের বাসায় গিয়ে তাদের পরিবারের খোঁজখবর নিচ্ছেন। পৌঁছে দিচ্ছেন শীর্ষনেতার শুভেচ্ছা বার্তা। তারপর যে নামটি আলোচনায় রয়েছে তিনি হলেন দলের স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি এত দিন দলের আন্তর্জাতিক-বিষয়ক কমিটির প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনিও ২৮ অক্টোবরের আগে ও পরের আন্দোলনে বেশ তৎপর ছিলেন। দলের জন্য অনেকবার জেল খেটেছেন। সম্প্রতি তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে সস্ত্রীক চিকিৎসা নিয়ে আসেন। বর্তমানে প্রতিবেশী ভারতের নয়াদিল্লিতে অবস্থানরত স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের নামটিও ব্যাপক আলোচনায় রয়েছে। আলোচনায় আছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও। আর দলের বাইরে থেকে আরেকটি নাম এসেছে, তিনিও একসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। জিয়া পরিবারের সঙ্গে তাঁর রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। তিনি লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির-এলডিপি প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ। গত ঈদের আগের দিন রাতে তিনি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে এসেছেন। যদিও তিনি ১ ঘণ্টারও বেশি সময়ের এ সাক্ষাৎকারটিকে শ্রেফ সৌজন্য সাক্ষাৎ হিসেবেই উল্লেখ করেছেন।          

সারা দেশে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে মহাসচিব ইস্যুতে বিভিন্ন কথাবার্তা ছড়িয়ে পড়লেও বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ। স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এসব কথা শ্রেফ গুঞ্জন। আর গুঞ্জন নিয়ে কথা বলার কিছু নেই। আমাদের মধ্যে এ নিয়ে কোথাও কোনো আলোচনা হয়নি।

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল মহাসচিব পরিবর্তনের বিষয়ে বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের ভিতরে-বাইরে অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা। দেশে-বিদেশে তার গ্রহণযোগ্যতা যথেষ্ট। কোনো বড় অভিযোগ ছাড়াই দীর্ঘদিন তিনি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের পর মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। দলে তার বিকল্প নেই। সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের কাছে মহাসচিবের ভাবমূর্তি ভালো। সজ্জন রাজনীতিবিদ হিসেবে তার নেতৃত্ব শতভাগ পরীক্ষিত। দলের জন্য জেল-জুলুমসহ সব ধরনের নির্যাতন তিনি সহ্য করেছেন। দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে গিয়ে তিনি শারীরিকভাবে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। এ মুহূর্তে মহাসচিব পরির্বতনের গুঞ্জন দলের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপপ্রয়াস। দলের ভিতরে বিরোধ তৈরি করতে এক ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কাজ এটি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির প্রথম সারির অপর একজন নেতা বলেন, বিএনপি মহাসচিবের জায়গায় কয়েকজনের নামই শোনা যাচ্ছে। তবে ড. মঈন খান বেশ আলোচিত বলে মনে হচ্ছে। দলে তার সাম্প্রতিক তৎপরতাও রয়েছে লক্ষণীয়। আর মহাসচিব যেহেতু অসুস্থ, বয়সও হয়েছে, তাই তিনি বিরতি চাইছেন। এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন হাইকমান্ড।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, গুঞ্জন তো গুঞ্জনই। সাধারণত গুঞ্জন কখনো সত্যি হয় না। তবে দলের দুঃসময়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিচক্ষণতার সঙ্গে দল পরিচালনা করেছেন। দলের নেতা-কর্মীরা তাকে ভালোবাসেন। জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকান্ড থেকে দূরে রয়েছেন। বর্তমানে তিনি হাসপাতাল আর গুলশানের বাসা ফিরোজায় চিকিৎসার মধ্যে আছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘদিন লন্ডনে অবস্থান করছেন। এ পরিস্থিতিতে দলের কান্ডারি হয়ে সামনে থেকে বিএনপিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শীর্ষস্থানীয় দুজন নেতার অনুপস্থিতি দলের নেতৃত্ব সংকট হিসেবে দেখছেন অনেকে। যদিও বিএনপি বরাবরই বলে আসছে তাদের দলের নেতৃত্বে কোনো সংকট নেই। মহাসচিব পদে পরিবর্তনের আলোচনা নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, এটি দল পুনর্গঠনে নেতৃত্বের পরিবর্তনের অংশ। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এরই মধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে ছাত্রদলের কমিটি। দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম, জাতীয় স্থায়ী কমিটিতেও আসতে পারে পরিবর্তন। দলের সিনিয়র নেতারাও বলছেন, দলের প্রয়োজনে নেতৃত্বে পরিবর্তন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগমুহূর্তে বিএনপি রাজপথে সরব থাকলেও গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর পিছু হটেন দলটির নেতা-কর্মীরা। একের পর এক গ্রেফতার হন মহাসচিবসহ দলটির সিনিয়র নেতারা। ভোটের পর মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ জেল থেকে মুক্তি পান বিএনপির প্রায় সব নেতা।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ (বীরবিক্রম) এ বিষয়ে বলেন, তিনি (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) অসুস্থ। হয়তো তিনি নিজেও চলে যেতে (মহাসচিব পদ থেকে) চান। বিএনপিতে দলের চেয়ারপারসনই সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনি বিভিন্ন পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কারণ, দল পুনর্গঠন করা প্রয়োজন। দলের অপর ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, দুই দিন আগে বা পরে কেন্দ্রীয় কমিটিতে যে পদগুলো শূন্য আছে, সেগুলো তো পূরণ করতেই হবে। আমাদের সাংগঠনিক কর্মকান্ডটা যত দ্রুত সম্পন্ন করতে পারব-ততই মঙ্গল।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor