Hot

মহাসড়কে টাকায় ঘোরে অবৈধ যানের চাকা

চলাচলের অনুমোদন না থাকলেও মহাসড়কে চাঁদায় চলছে অটোরিকশা, ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা, নছিমন, করিমনের মতো যানবাহন। ধীরগতির এসব গাড়ি দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হলেও বিকল্প না থাকায় যাত্রীরা এসব যানবাহনের ওপর নির্ভরশীল। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে পুলিশ, নেতারা টাকা নিয়ে মহাসড়কে অবৈধ যানবাহন চলতে দেন। লাখ লাখ চালক-শ্রমিকের জীবিকার প্রশ্নে সরকারও এসব যান বন্ধে কঠোর হয় না।

সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সারাদেশে নিবন্ধিত অটোরিকশার সংখ্যা ৩ লাখ ২২ হাজার ৫৮৯। অনিবন্ধিত অটোরিকশার সংখ্যা কারও জানা নেই। সংসদে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া হিসাবে ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইকের সংখ্যা ৪০ লাখ। হাইকোর্টের রায়ে নিষিদ্ধ শ্যালো মেশিনে স্থানীয়ভাবে তৈরি নছিমন, করিমন, ভটভটি, পাখি, আলম সাধুর সংখ্যা কত, তা-ও অজানা। সিএনজি ও ডিজেলচালিত অটোরিকশা নিবন্ধন পেলেও ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান, ইজিবাইকসহ অন্য অবৈধ যানবাহনের জন্য এ সুযোগ নেই। 

২০১৫ সালের ১ আগস্ট ২৭ জাতীয় মহাসড়কে অটোরিকশাসহ সব ধরনের ধীরগতির যান চলাচল নিষিদ্ধ করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক বাদে অন্যত্র চলাচলের অনুমতি দিতে ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইকের জন্য নীতিমালার খসড়া করা হয়েছে।

নিবন্ধন ও চলাচলের অনুমোদন না থাকার সুযোগে এসব গাড়ি থেকে চলছে দেদার চাঁদাবাজি। আইন অনুযায়ী, অযান্ত্রিক রিকশা-ভ্যানের নিবন্ধন দেয় সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ। তবে স্থানীয় সরকারের এই প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান, ইজিবাইকেরও নিবন্ধন দিচ্ছে শহরের অভ্যন্তরীণ এবং গ্রামীণ সড়কে চলতে। তবে এগুলো মহাসড়কে চলাচল করতে হলে দিতে হয় চাঁদা। 
টাকা পাওয়ায় আটকায় না আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। ফলে মহাসড়কে ট্রাফিক নিয়মের ধার ধারে না এসব যান। নেই চালকের লাইসেন্স। চলে উল্টোপথে। ঘটছে দুর্ঘটনা। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও প্রাণহানি হচ্ছে। ধীরগতির যানবাহন চলাচলে যেসব এলাকায় সরকার হাজার কোটি টাকা খরচ করে আলাদা লেন করেছে, সেগুলো দখল হয়ে গেছে। ইজিবাইক, অটোরিকশা বাস-ট্রাকের সঙ্গে চলছে মহাসড়কে; মরছে মানুষ। 

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ড. হাদীউজ্জামান বলেছেন, একই সড়কে ভিন্ন ভিন্ন গতির গাড়ি চললে দুর্ঘটনা ঘটবেই। অটোরিকশা, ইজিবাইকে ন্যূনতম নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। ফলে ট্রাক, বাসের সঙ্গে ধাক্কা লাগায় চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। যাত্রীরা সবাই মারা যাচ্ছেন। চাঁদা নিয়ে গাড়ি চলতে দিলে এই প্রাণহানি থামবে না।
নেতা পুলিশের পোয়াবারো বগুড়া থেকে আবদুল আউয়াল জানান, ক্ষমতাসীন দলের নেতা এবং হাইওয়ে পুলিশ চাঁদা নিয়ে বগুড়ার দুই মহাসড়কে অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে দেন। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, জেলা যুবলীগের সহসভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর আলহাজ শেখ, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুর রহমান দুলু এবং শহর যুবলীগের ১৭ নম্বর ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক হাবিল আকন্দ নিয়ন্ত্রণ করেন তিন চাকার যানবাহনের তিনটি স্ট্যান্ড। মহাসড়কে চলতে চালকরা তাদের চাঁদা দেন। 

বগুড়া জেলা মিশুক, বেবিট্যাক্সি, ট্যাক্সি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক সমিতির নামে  এই চাঁদার টাকা তোলা হয়। চাঁদা আদায়ে রয়েছে দুইজন করে লাঠিয়াল। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৫০ টাকা চাঁদা তোলা হয়। গাড়ি চালাতে সমিতিতে ‘ভর্তি’র নামে চালকদের দিতে হয় ১০ হাজার টাকা করে। এই টাকা দিলে মহাসড়কে চলতে বাধা নেই। 
এক চালক জানান, শাকপালা থেকে নন্দীগ্রাম মহাসড়কে সিএনজি অটোরিকশা চালান। সমিতিতে ভর্তি হয়ে অনুমতি নিতে ১২ হাজার টাকা দিয়েছেন। ভর্তির আগে পাঁচবার তাঁর অটোরিকশা আটক করা হয়। সমিতিতে ভর্তির টাকা দিলে পুলিশ গাড়ি চালাতে আর বাধা দেয় না। 

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা-রংপুর ও দ্বিতীয় বাইপাস মহাসড়কে অনুমোদনহীন যানবাহন চলে পুলিশের সঙ্গে মাসিক চুক্তিতে। যা ‘মান্থলি’ নামে পরিচিত। এক হাজার টাকা দিয়ে ‘মান্থলি’ টোকেন নিতে হয়। কৌশল হিসেবে প্রতি মাসে টোকেনের নকশা বদলানো হয়। চলতি মাসে টোকেনে রয়েছে, ‘গাড়ি স্টিয়ারিংয়ে চালকের হাতের’ ছবি। পুলিশ সরাসরি টোকেনের টাকা নেয় না। নির্ধারিত ‘কলার বয়’ টাকা নেয়। কুন্দারহাট হাইওয়ে থানা পুলিশের কলার বয় হিসেবে পরিচিত মো. মোমিন নামের এক ব্যক্তি। তিনি থানার পাশে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ইলেকট্রনিক সামগ্রীর ব্যবসা করেন। জানতে চাইলে চাঁদাবাজির ঘটনা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আপনারা সবই জানেন। এ বিষয়গুলো বাদ দিলে আমাদের উপকার হতো।’

চাঁদা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে কুন্দারহাট হাইওয়ে পুলিশের ওসি আব্বাস আলী বলেন, মহাসড়কে থ্রি-হুইলারসহ সবরকম নিষিদ্ধ যানবাহন চলাচল বন্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে। 
ধীরগতির গাড়ির জন্য আলাদা লেন তৈরি করা হয়েছে নতুন নির্মিত ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে। একাধিক চালক জানান, লেনে নানা প্রতিবন্ধকতা থাকায় ধীরগতির গাড়ি চলে মহাসড়কে। 
নিজে চাঁদা নেন না বলে দাবি করেছেন আলহাজ শেখ। তিনি বলেন, কুন্দারহাট হাইওয়ে পুলিশ টাকা নেয় বলে শুনেছি। তবে পুরো বিষয়টি নন্দীগ্রাম থেকে নিয়ন্ত্রণ হয়। আমরা যে টাকা তুলি তা চালকদের কল্যাণে খরচ হয়। পরিচয় নিশ্চিতের জন্য সমিতিতে ভর্তি করানো হয়। কারও কাছে থেকে জোর করে টাকা আদায় করা হয় না। 
হাইওয়ের বগুড়া জোনের পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, অবৈধ যানবাহন বন্ধে মামলার পাশাপাশি সচেতনতা কার্যক্রম চলছে। পুলিশ সদস্যের চাঁদাবাজির সুযোগ নেই। সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

টোকেনের খেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আবদুন নুর জানান, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশেও ধীরগতির যানবাহন চলছে ‘টোকেন’ এবং মাসিক চাঁদায়। পুলিশ ও নেতারা এই টাকা পান। ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. হানিফ বলেন, মহাসড়কে তিন চাকার নিষিদ্ধ যানবাহন চলে পুলিশের সঙ্গে সমঝোতা করে। চাপ এলে যান বন্ধে পুলিশ সাময়িক তৎপর হয়। 
বিআরটিএর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কার্যালয়ের তথ্য বলছে, নিবন্ধিত অটোরিকশার সংখ্যা ৮ হাজার। বাকি ১২ হাজারের নিবন্ধন নেই। ইজিবাইক ও ব্যাটারির রিকশার পরিসংখ্যান নেই। 

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, মহাসড়কে চলাচলের জন্য প্রতিটি অটোরিকশা থেকে পরিবহন শ্রমিক নেতারা ৫০০ থেকে দেড় হাজার টাকা নেন মাসিক টোকেন দিয়ে। একটি অংশ হাইওয়ে পুলিশকে দিতে হয়। ট্রাক্টর ও পাওয়ার ট্রলির মালিক এবং ইটভাটার মালিক আলাদাভাবে প্রতি মৌসুমে পুলিশকে টাকা দেন।

আবু মিয়া ও সালাম মিয়া নামে দুই অটোরিকশা চালক বলেন, আমরা প্রতি মাসে মাসিক হারে টাকা দিচ্ছি। তার পরও মাঝে মধ্যে অটোরিকশা ধরে নিয়ে যায়। সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালাতে স্টিকার লাগে, না থাকলে মামলা দেয়।

এক অটোরিকশার মালিক বলেন, টোকেনের টাকা না দিলে গাড়ি চালাতে দেবে না। নামসর্বস্ব কিছু সাংবাদিকের নামে ১২০টি অটোরিকশা চলে। এসব অটোরিকশার পেছনে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের নাম ও ফোন নম্বর থাকে। তারা অটোরিকশাপ্রতি মাসে ২ হাজার টাকা চাঁদা নেন। সেখান থেকে ১ হাজার টাকা হাইওয়ে পুলিশকে দেন।
খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসি আকুল চন্দ্র বিশ্বাস এসব ভাষ্য নাকচ করেছেন। তিনি সমকালকে বলেন, নিয়মিত মহাসড়কের অভিযান পরিচালনা করছি। অবৈধ যান ধরে মামলা দিচ্ছি। কিন্তু অটোরিকশার চালকরা আদালতে ৫ হাজার টাকা জরিমানা পরিশোধ করে এসে মহাসড়কের অটোরিকশা চালান। 

ময়মনসিংহেও ভর্তি ফি
ময়মনসিংহের নিজস্ব প্রতিবেদক,  ভালুকা ও ত্রিশাল প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কেও ‘ভর্তি ফি’ আর মাসিক চাঁদায় চলে অটোরিকশা, ইজিবাইক। ত্রিশাল অংশের কাজীর সিমলা থেকে বগারবাজার পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার পথে এ ধরনের ৭০০ যানবাহন চলে। চালকরা জানান, শ্রমিক ইউনিয়নের নামে অটোরিকশার ভর্তি ফি বাবদ ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা, মান্থলি  ৪০০ টাকা এবং দৈনিক গাড়িপ্রতি ৫০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। ব্যাটারিচালিত রিকশার ভর্তি ফি ১ হাজার টাকা, মান্থলি ২৫০ টাকা এবং দৈনিক চাঁদা ৩০ টাকা। 
ময়মনসিংহ জেলা মিশুক-বেবি ট্যাক্সি, ট্যাক্সিকার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের ত্রিশাল শাখার সভাপতি রুবেল আহাম্মেদের নামে চাঁদা ওঠে। ময়মনসিংহ বাইপাস থেকে কাজীর সিমলা, কানহরসহ বৈলর মোড় পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করে ময়মনসিংহ জেলা শ্রমিক ইউনিয়ন। বগারবাজার চৌরাস্তা থেকে সাইফুল কাজী, রাঘমারা এলাকায় তাজুল ইসলাম চাঁদা ওঠালেও নিয়ন্ত্রণ করেন রুবেল। 
তথ্য অনুযায়ী, ভর্তি ফি বাদে সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে মাসিক ওঠে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা, প্রতিদিন চাঁদা আসে প্রায় ২০ হাজার টাকা এবং অন্য যান থেকে মাসিক ওঠে ৭৫ হাজার টাকা, প্রতিদিন আসে প্রায় ৯ হাজার টাকা চাঁদা। 

মহাসড়কে ১২০টি অবৈধ যান চলাচলের দাবি করে রুবেল আহাম্মেদ জানান, ভর্তি ফি বাবদ যে যা দেয়, তাই নেওয়া হয়। অফিস খরচের জন্য মাসে ১০০ টাকা নেওয়া হয়। আর মহাসড়কে চলতে না দিলে চালকরা বেকার হয়ে যাবে।  সংসার চালাতে না পেরে চুরি-ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়বে।

মহাসড়কের ভালুকার জামিরদিয়া থেকে নিশিন্দা পর্যন্ত ভালুকার প্রায় ২৩ কিলোমিটার অংশে আগে দিনে ৬০ টাকা চাঁদা দিতে হতো। নতুন এমপি চাঁদা আদায় বন্ধ করেছেন। 
দেশের অথর্নীতির লাইফলাইনখ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও চাঁদায় চলে ধীরগতির যানবাহন। নারায়ণগঞ্জের পিরোজপুর এলাকার অটোরিকশার চালক আবদুল লতিফ মিয়া বলেন, প্রতি মাসে হাইওয়ে পুলিশকে ২ হাজার টাকা দিয়ে টোকেন নেন। টোকেন দেখালে হাইওয়েতে চলতে বাধা নেই।

কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসি মো. রেজাউল হকের ভাষ্য, চোখ ফাঁকি দিয়ে কিছু অটোরিকশা মহাসড়ক চলে।
চট্টগ্রাম ব্যুরো, কুমিল্লা ও ফেনী প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ধীরগতির যানবাহনের কারণে যানজট ও দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। প্রতি মাসে ব্যাটারিচালিত রিকশা, ভটভটিসহ এ ধরনের যানবাহনকে এক হাজার টাকা এবং সিএনজি অটোরিকশাকে এলাকাভেদে দুই থেকে তিন হাজার টাকা দিতে হয়। 

জানা গেছে, পুলিশের একজন ক্যাশিয়ার থাকে। ফাজিলপুর হাইওয়ে পুলিশের মুহুরীগঞ্জের ক্যাশিয়ার শাহিন এ টাকা আদায় করে। ফেনীতে ২০ হাজারের বেশি সিএনজি অটোরিকশা রয়েছে। বেশির ভাগের বৈধ কাগজপত্র নেই। প্রশাসনকে টাকা দিলে যে কোনো সড়কে চলাচলে বাধা থাকে না এসব গাড়ির। গাড়ির সামনে শুধু চাঁদায় কেনা টোকেন লাগাতে হয়। ছাগলনাইয়া এলাকায় সংশ্লিষ্ট থানার ক্যাশিয়ার সিপাহি নাসির উদ্দিন। 

ফাজিলপুর হাইওয়ে মুহুরীগঞ্জ কার্যালয়ের ক্যাশিয়ার শাহিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সে টাকা সংগ্রহের অভিযোগ অস্বীকার করে। তবে ছাগলনাইয়া থানার ক্যাশিয়ার নাসির জানায়, ফোনে সব কথা বলা যাবে না। ওপরের নির্দেশে সে এই টোল আদায় করে থাকে।

সীতাকুণ্ড পৌর এলাকার রাকিব নামে এক সিএনজি চালক বলে, ‘চট্টগ্রাম-থ ১১-৭৬২৩ নম্বর সিএনজি হাইওয়েতে চালাতে কোনো সমস্যা হয় না। তবে বাজারে প্রবেশ করতে হলে পুলিশকে প্রতি মাসে ৭০০ টাকা দিতে হয় সংগঠনের সভাপতি-সম্পদকের মাধ্যমে।’ 

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, প্রায় সোয়া ৬ হাজার কোটি টাকায় নির্মিত ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ জয়দেবপুর-চন্দ্রা-এলেঙ্গা মহাসড়কের দুই পাশে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করে ধীরগতির যানবাহনের আলাদা লেন নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু তা ব্যবহার হচ্ছে পার্কিং, বাজার এবং ময়লার ভাগাড় হিসেবে। কৃষিজমি অধিগ্রহণ করে বানানো এসএমভিটি লেনের দখলদারের তালিকায় পুলিশও রয়েছে।  
বরিশাল ব্যুরো জানায়, ২১০ কিলোমিটার দীর্ঘ ভাঙ্গা-বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে পদ্মা সেতু চালুর পর যান চলাচল বেড়েছে। তবে রাস্তা আগের মতোই ২৪ ফুটের। আলাদা লেন না থাকায় ধীরগতির যানবাহন মহাসড়কেই চলে। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতারা মালিক সমিতি বা শ্রমিক সংগঠনের মাধ্যমে তোলে চাঁদা। 
সাউদিয়া পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার ইমাম হোসেন সিকদার জানান, ভাঙ্গার মোড় থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত পুরো পথ তিন চাকার যানবাহনের দখলে। এতে দূরপাল্লার বাস স্বাভাবিকের তুলনায় অর্ধেক গতিতে চলে। ঘটে দুর্ঘটনা। 

জানা গেছে, গৌরনদী বাসস্ট্যান্ড, মাদারীপুরের সীমানা ভুরঘাটা, বরিশালমুখী উজিরপুরের ইচলাদী পর্যন্ত রুট নির্ধারণ করে মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন চলছে। প্রতিটি ট্রিপে ২০ টাকা চাঁদা নেওয়া হয় মালিক সমিতির নামে। চাঁদা নেওয়ার কথা অস্বীকার করে সমিতির সভাপতি আলী হোসেন বলেন, নিষিদ্ধ হলেও পেটের দায়ে মহাসড়কে গাড়ি চালান। 
পটুয়াখালী থেকে কুয়াকাটা ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রাস্তাকে মহাসড়ক মানতে নারাজ তিন চাকার যানবাহন সংগঠনের নেতারা। জানা গেছে, এই পথের প্রতিটি গাড়ি থেকে প্রতিদিন মালিক সমিতির নামে ৫০ এবং শ্রমিক সংগঠনের নামে ৫০ টাকা চাঁদা তোলা হয়। বরগুনা জেলা থ্রি-হুইলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জহিরুল ইসলাম খোকন মৃধার ভাষ্য, সংগঠন পরিচালনা এবং শ্রমিকদের কল্যাণে টাকা নেওয়া হয়। 

ফরিদপুর অফিস জানায়, মটর ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি জুবায়ের জাকির বলেন, নানা অজুহাতে মহাসড়কে ধীরগতির গাড়ি চলে মানুষের জীবন বিপন্ন করছে। 
হাইওয়ে পুলিশের মাদারীপুর রিজিওনের সুপার মো. শাহিনুর আলম খান বলেন, গত বছর ৫ হাজারেরও বেশি মামলা করা হয়েছে। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি মানবিক দিকও বিবেচনায় রাখতে হয়। বেশি কঠোর হলে অনেকে বেকার হয়ে পড়বে; সামাজিক নানা সমস্যার সৃষ্টি হবে। 
গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, জেলায় বেশি চাঁদাবাজি হয় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা চৌরাস্তায়। দালালদের মাধ্যমে হাইওয়ে পুলিশ মাসিক ও দৈনিক হিসেবে চাঁদা নিয়ে মহাসড়কে অবৈধ এসব যান চলাচলের সুযোগ করে দিচ্ছে। 

হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিকল্প যানবাহন না থাকায় বাধ্য হয়ে মহাসড়কে যাত্রীরা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় চলাচল করে। তাই চেষ্টা করেও মহাসড়কে এসব যানবাহন বন্ধ করা যাচ্ছে না। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor