Bangladesh

‘মাই লকারে’ স্মার্টযাত্রা

আর ঘুরতে হবে না কাগজপত্রের বোঝা নিয়ে। চাকরির আবেদনের সঙ্গে দিতে হবে না কোনো সনদ। চিকিৎসকের কাছে গেলেও নিতে হবে না পুরনো প্রেসক্রিপশন। গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হলেও সঙ্গে রাখতে হবে না ড্রাইভিং লাইসেন্স, টেক্সটোকেন বা বীমার নথি সবকিছুই থাকবে ‘মাই লকারে’। মূলত পেপারলেস (কাগজবিহীন) পদ্ধতি চালু করে খরচ ও হয়রানি কমানো হবে। সরকারি তহবিলের স্বচ্ছতা বাড়ানোও এর উদ্দেশ্য।

রোজকার জীবন সহজ করার জন্য মাই লকারের মতো ৯টি সেক্টরকে আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্মার্ট করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করলেও পুরো কাজটি তদারক করছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের নির্বাহী কমিটির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।

আপাতত খুব অল্প সময়ে স্মার্ট করা যাবে এমন সেক্টরগুলোকেই বাছাই করে চূড়ান্ত করা হয়েছে। মাই লকারের মতো পেপারলেস করতে সব ব্রিজ, টানেল ও এক্সপ্রেসওয়েতে ই-টোল সিস্টেম আসছে। এতে যানজট কমবে ও স্বচ্ছতা বাড়বে। সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে ব্লকচেইন প্রযুক্তি প্রয়োগ করে স্মার্ট ফার্টিলাইজার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বাস্তবায়ন করা হবে। সময় ও খরচ বাঁচাতে ইজারা সম্পত্তির বিক্রি, নামজারি ও শ্রেণি রূপান্তরের আবেদন অনলাইনেই নিষ্পত্তি করা হবে। অনলাইন জিডি (সাধারণ ডায়েরি) ও অনলাইন এফআইআর (এজাহার) শতভাগ নিশ্চিত করা হবে।

পেপারলেস পদ্ধতি চালু ছাড়াও পদ্ধতি উন্নয়নের মাধ্যমে জনজীবনকে ঝামেলাহীন করা হবে। রেড হট বা ওভারহিটিং ফল্ট চিহ্নিত করে বিদ্যুৎ বিচ্যুতি কমানো হবে। রেলপথে নামহীন লেভেল ক্রসিং অটোমেশনের মাধ্যমে শব্দসংকেত স্থাপন করে জনগণের নিরাপত্তা বাড়ানো হবে। আন্তর্জাতিক কনস্যুলার কনভেনশন অনুযায়ী ডেটাবেজ সংরক্ষণ ও সেবা সরবরাহ দেওয়া হবে। সারা দেশে জরুরি সেবার জন্য ব্যবহৃত ৯৯৯-এর সাড়া দেওয়ার সময় বা রেসপন্স টাইম ১০ মিনিটে নামিয়ে আনা হবে। উৎপাদন বাড়াতে ও ব্যয় কমাতে ২২টি স্মার্ট মৎস্য খামার ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তির আওতায় আনা হচ্ছে।

স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের নির্বাহী কমিটির সদস্য সচিব এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. শামসুল আরেফিন বলেন, ‘বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ৫০টি স্মার্ট উদ্যোগ (কুইক উইন) নিয়েছে। এর মধ্যে আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে ৯টি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে। এগুলো স্বল্পমেয়াদি উদ্যোগ। এর বাইরেও রয়েছে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ।’

২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ গঠনের পর এই টাস্কফোর্সের একটি নির্বাহী কমিটিও গঠন করা হয়েছে। নির্বাহী কমিটি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১’ প্রতিষ্ঠার জন্য নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সুপারিশ করবে।

স্মার্ট বাংলাদেশ কী, জানতে চাইলে শামসুল আরেফিন বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বলতে স্মার্ট নাগরিক, সমাজ, অর্থনীতি ও স্মার্ট সরকার গড়ে তোলা হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও আর্থিক খাতের কার্যক্রম স্মার্ট পদ্ধতিতে রূপান্তর হবে। এজন্য সরকারি ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন এবং এর উন্নয়নে একটি দক্ষ ও স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা কাঠামো গড়ে তুলতে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে গত ১১ ফেব্রুয়ারি টাস্কফোর্সের নির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকের কার্যবিবরণী গত মাসের শেষ সপ্তাহে পাঠানো হয় সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে। বৈঠকে নেওয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট ৯ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

৯ স্মার্ট উদ্যোগের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ‘মাই লকার’ প্ল্যাটফর্মে শিক্ষা, চিকিৎসা ও সামাজিক সনদ রাখার ব্যবস্থা করা। লকারে রাখার সঙ্গে সঙ্গে এসব সনদের সত্যতা যাচাই করা হবে। জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) মাধ্যমে মাই লকার প্ল্যাটফর্মে প্রবেশাধিকার দেওয়া হবে। লকারে সংরক্ষিত নথি তাৎক্ষণিকভাবে প্রদর্শন করা হবে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই প্ল্যাটফর্ম বাস্তবায়নের মাধ্যমে একজন নাগরিক প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে না রেখেও সব ধরনের সেবা পাবেন। বর্তমানে সব ধরনের গাড়িতে সংশ্লিষ্ট সব ধরনের কাগজের মূল কপি সংরক্ষণ করতে হয়। এতে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়। মূল কপি হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তা ছাড়া এসব মূল কপি দ্রুত নষ্ট হয়। হারিয়ে যাওয়া বা নষ্ট হওয়া মূল কপি তুলতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হয়রানির শিকার হতে হয়। এখানে আর্থিক সংশ্লিষ্টতাও রয়েছে। গাড়ির লাইসেন্স, রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, বীমার কাগজ না নিয়ে চললেও সমস্যা নেই। সেগুলোর ইলেকট্রনিক কপি যদি সরকারি পোর্টালে আপলোড করা থাকে, তাহলে মূল কাগজপত্র সঙ্গে নিয়ে যাতায়াত করার প্রয়োজন নেই। ট্রাফিক পুলিশকে মাই লকার খুলে কাগজ দেখালেই চলবে। এতে পুলিশের পক্ষেও দ্রুত নকল কাগজপত্র ধরা সম্ভব হবে। সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান যেকোনো সময় যেকোনো স্থান থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাগজপত্র যাচাই করতে পারবে। সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে একই কাগজপত্র বারবার সংযুক্ত করার হয়রানি থেকে সাধারণ মানুষ রেহাই পাবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, চাকরির আবেদনে বিভিন্ন পরীক্ষার সনদ দিতে হবে কেন? সংশ্লিষ্ট দপ্তর মাই লকার থেকে এসব সনদ দেখে নেবে। শুধু সনদ না চাকরির জন্য প্রচুর কাগজপত্র দিতে হয়। এসবের কিছুই দিতে হবে না।

বিভিন্ন ব্রিজ, টানেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করার জন্য টোল দিতে হয়। আর সেই টোল দিতে গিয়ে হয়রানির শেষ নেই। টোল কেন্দ্রের সামনে দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। এসব টোলের টাকা তছরুপও হয়। এগুলো দূর করার জন্য ই-টোল সিস্টেম চালু করবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। টোলপ্লাজার প্রতিটি লেন ফাস্ট ট্রেকে রূপান্তর করা হবে। এতে টোলপ্লাজায় গাড়ির জট কমবে। নগদ লেনদেন কমবে এবং টোল কাজের স্বচ্ছতা বাড়বে।

নির্বাহী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংস) ভিত্তিক ২২টি মৎস্য খামার নির্মাণ করা হবে। খামারে মাছের খাবার দেওয়া, পানি সঞ্চালন আইওটি এবং এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) সংবলিত আধুনিক যন্ত্রে করা হবে। এতে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে এবং দেশি গবেষকরাই কাজ করবেন। খামারে পরিবেশবান্ধব জৈব নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। খামারের কর্মী ব্যবস্থাপনা মোবাইল অ্যাপস ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এতে মাছের উৎপাদন বাড়বে এবং উৎপাদন ব্যয় কমবে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এসব খামার প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে।

সারা দেশে অনলাইন জিডি ও অনলাইন এফআইআর শতভাগ নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। জরুরি সেবার জন্য ব্যবহৃত ৯৯৯-এর রেসপন্স টাইম ১০ মিনিটে নামিয়ে আনা হবে। বর্তমানে এর কোনো স্ট্যান্ডার্ড টাইম নেই। তবে দ্রুত সময়ে ৯৯৯-এর সেবা দেওয়া হয়। ফেস রিকগনিশন ক্যামেরার মাধ্যমে অপরাধী চিহ্নিত করা হবে। রাতে নাইট ভিশন ক্যামেরার মাধ্যমে সন্দেহজনক যাতায়াত মনিটরিং করা হবে। এসব পদক্ষেপের ফলাফল কী হবে জানতে চাইলে জননিরাপত্তা বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দ্রুত অপরাধী শনাক্তকরণ এবং অপরাধী গ্রেপ্তার সহজ হবে। সার্বক্ষণিক পুলিশ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হবে। এতে সেবাপ্রত্যাশীদের সেবাপ্রাপ্তি সহজ হবে।

দেশে উৎপাদন কম হওয়ায় কৃষিতে ব্যবহারের জন্য ইউরিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের সার আমদানি করা হয়। কিন্তু সময়মতো এসব সার কৃষকদের কাজে পৌঁছায় না। সংশ্লিষ্টরা বলতেই পারেন না সার কোথায় রয়েছে। স্মার্ট ফার্টিলাইজার সিস্টেমে ভেহিক্যাল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে বন্দর, দেশি কারখানা বা বাফার গুদাম পর্যন্ত সার মনিটরিং করা যাবে। জেলা প্রশাসন (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা (ইউএনও) তাদের দপ্তরে বসেই তদারকি করতে পারবেন।

এই পদ্ধতি চালু করা হলে কী সুবিধা হবে জানতে চাইলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করে খুব সহজেই জেলা ও উপজেলাভিত্তিক সারের চাহিদা ও বণ্টন সুষ্ঠুভাবে করা যাবে। ডিজিটাল ম্যাটেরিয়াল রিসিভিংয়ের মাধ্যমে দ্রুত ডিলারকে সার সরবরাহ করা যাবে।

রেল দুর্ঘটনা রোধ করতে লেভেল ক্রসিংয়ে অটোমেশনের মাধ্যমে শব্দসংকেতের ব্যবস্থা করা হবে। একই সঙ্গে সংকেত বাতিও উন্নত করা হবে। এতে দুর্ঘটনা কমবে, জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে এবং সরকারি সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস পাবে। দুটি ট্রেনের মধ্যে যেন কোনো অবস্থাতেই মুখোমুখি সংঘর্ষ না হয় সেই প্রযুক্তি স্থাপন করা হবে।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, ‘স্মার্ট বাংলাদেশের আওতায় যে কাজগুলো করার জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলো খুবই জরুরি। কিন্তু এসব কাজ ৩১ আগস্টের মধ্যে করা যাবে না। আমরা হয়তো এসব কাজের পাইলটিং শেষ করতে পারব।’

স্মার্ট কনস্যুলার সত্যায়ন এবং ভেরিফিকেশন করবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর আওতায় অটোমেটেড বাল্ক ডকুমেন্ট ইনপুট হবে। ডিজিটাল সিগনেচার সংযুক্ত করা হবে। অটোমেটেড কনস্যুলার নম্বর এবং বারকোড জেনারেশন হবে। আন্তর্জাতিক কনস্যুলার কনভেনশন অনুযায়ী ডেটাবেজ সংরক্ষণ ও সেবা সরবরাহ করা হবে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী অনলাইনে সংশ্লিষ্ট নথির সত্যতা যাচাই করা হবে। মিথ্যা, ভুয়া ও অননুমোদিত দলিল শনাক্ত করা যাবে।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতায় ইজারাকৃত সব সম্পত্তির বিক্রি, নামজারি এবং বন্ধকিসহ শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমতি অনলাইনে দেওয়া হবে। ‘ডিজিটাল ল্যান্ড সার্ভিস ডেলিভারি’ নামে একটি সফটওয়্যার প্রস্তুত করা হবে, যা ডিজিটাল পদ্ধতিতে ডেটাবেজে সংরক্ষণ করা হবে। এতে সময় ও খরচ কম লাগবে। প্লট বা ফ্ল্যাট-সংক্রান্ত সব নথি স্ক্যানিং করে ডেটাবেজে সংরক্ষণের ফলে তথ্য সুরক্ষিত থাকবে। ই-ব্যাংকিং ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সেবামূল্য পরিশোধের ব্যবস্থা থাকায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমবে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা রাজউকের সব কাজ অটোমেশনের আওতায় চলে আসবে।

বিদ্যুৎ স্থাপনায় রড হট বা ওভারহিটিং ফল্টে বিদ্যুৎ বিচ্যুতি হয়। এ সমস্যা আগাম চিহ্নিত করবে স্মার্ট সার্ভিল্যান্স সিস্টেম। থার্মাল প্রোফাইলিং ব্যবস্থাপনা ও ডেটা অ্যানালাইসিস করে ট্রান্সফরমার, সুইচগিয়ার ও মূল্যবান বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ওভারহিটিং থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, এতে শুধু আর্থিক সাশ্রয়ই হবে না সামগ্রিকভাবে সেবার মান বাড়বে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d