Bangladesh

মাঘের শীতে কাঁপছে উত্তর-পশ্চিম

এবার পৌষের শুরু থেকেই জেঁকে বসে তীব্র শীত। এর মধ্যে কয়েক দফায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহও বয়ে গেছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হয়েছে বৃষ্টিপাত, যা শীতের তীব্রতা আরও বাড়িয়েছে। পৌষ শেষে এসেছে মাঘ। প্রথম কয়েকদিন শীতের তীব্রতা ছিল কিছুটা কম। তবে দু’দিন ধরে তা বাড়তে শুরু করেছে।

গতকাল বুধবার দেশের কোথাও শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও ছিল হিমেল হাওয়া। ঠান্ডায় জবুথবু হয়ে পড়েন উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েক জেলার মানুষ। রংপুরের কয়েকটি জেলায় তীব্র শীতে কাবু হন শিশু ও বৃদ্ধরা। খড়কুটো জ্বেলে শীত নিবারণের চেষ্টা করেন অনেকে। অবশ্য রাজধানীর চিত্র ছিল উল্টো। ঢাকায় হাঁড়কাপানো শীত নেই। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এ মৌসুমে ঢাকাবাসী শৈত্যপ্রবাহের দেখা পাবেন না।

গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া ও মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আফতাব উদ্দিন বলেন, আজ বৃহস্পতিবার দেশের উত্তরাঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে, যা ক্রমান্বয়ে পুরো দেশে শুরু হবে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, শৈত্যপ্রবাহ চলাকালে দিনের শুরুতে হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা থাকতে পারে।  রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি কমতে পারে। এ ছাড়া দিনেও তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে।

গতকাল রংপুরে ১৩, নীলফামারীর সৈয়দপুরে ১২, ডিমলায় ১২ দশমিক ৬, কুড়িগ্রামের রাজারহাট ১২ দশমিক ৩, দিনাজপুরে ১২ দশমিক ৮, লালমনিরহাট ১২ দশমিক ৫ এবং গাইবান্ধায় ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

দু’দিন ধরে রংপুরে সূর্যের দেখা মিলছে না। ঘন কুয়াশা অব্যাহত থাকায় হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। দূরপাল্লার পরিবহন চলছে ধীরগতিতে। কুয়াশার কারণে বেড়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। রংপুরের মিঠাপুকুরে যাত্রীবাহী চারটি বাস দুর্ঘটনায় পড়ে সাত যাত্রী আহত হন। গতকাল বুধবার ভোর ৫টার দিকে মহাসড়কের জায়গীরহাট এলাকায় এসব দুর্ঘটনা ঘটে। শীতে খেটেখাওয়া মানুষের পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় দুর্ভোগও বেড়েছে কয়েক গুণ। 

নদী তীরবর্তী ও ছিন্নমূল মানুষ রয়েছেন চরম ভোগান্তিতে। বাড়ছে রোগবালাই। গত এক মাসে অগ্নিদগ্ধ হয়ে চারজন মারা গেছেন; ৪০ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসক মাহফুজার রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

হিমেল হাওয়া ও কনকনে ঠান্ডায় বেশি বিপর্যস্ত উত্তরের জেলা কুড়িগ্রাম। সেখানে কষ্টে দিন কাটছে নিম্ন আয়ের মানুষের। বিশেষ করে জেলার চরাঞ্চলের মানুষ বেশি বিপাকে পড়েছেন। শিশু ও বয়স্করা আক্রান্ত হচ্ছেন শীতজনিত রোগে। গতকাল কুড়িগ্রামে সারাদিন দেখা মেলেনি সূর্যের। শীত নিবারণের জন্য সরকারিভাবে দুস্থদের জন্য যে কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, তা খুবই অপ্রতুল। এখনও জেলার চরের বাসিন্দারা পাননি এসব কম্বল। 

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো শীতবস্ত্রের অভাবে অসহনীয় ঠান্ডায় কাহিল হয়ে পড়েছে। চাহিদার তুলনায় সেখানে সরকারি-বেসরকারি শীতবস্ত্র বিতরণ একেবারেই অপ্রতুল। চলতি মৌসুমে সরকারিভাবে এ পর্যন্ত কম্বল বিতরণ করা হয়েছে ৮ হাজার। দিনমজুর ও চরের ছিন্নমূল পরিবার খড়কুটো জ্বালিয়ে ঠান্ডা নিবারণ করছে। বিশেষ করে বৃদ্ধ-শিশু ও প্রসূতি মায়েরা নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। 

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে গতকাল সারাদিন সূর্যের দেখা মেলেনি। এতে ধান লাগানো ও বীজতলা থেকে চারা তুলতে গিয়ে কষ্ট পোহাচ্ছেন কৃষক। কুড়িগ্রামের রাজারহাটে কুয়াশায় ট্রেনের শিডিউলেও বিপর্যয় ঘটে। সকাল ৭টার কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেন আসে বেলা ১১টায়। ঠান্ডায় ডায়েরিয়া, নিউমোনিয়া, সর্দিসহ শীতজনিত রোগ বেড়েছে। 

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর চরাঞ্চলে ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় দুর্ভোগে আছেন অসচ্ছল ও নিম্ন আয়ের খেটেখাওয়া মানুষ। স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। দু’দিনে শীতজনিত রোগে ৪০ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। একই অবস্থা জয়পুরহাটেও। মঙ্গলবার থেকে সেখানে বেড়েছে শীত। মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে চলছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button