মাটিরাঙ্গায় উন্নয়ন প্রকল্প: জলাশয় নেই, পাহাড়ে ঘাটলা তৈরি
![](https://miprobashi.com/wp-content/uploads/2023/09/03470cd378f6d5289965dff4a60b5fde-65020c1269e29-1024x574.webp)
পুকুর বা জলাশয়ের নেই কোনো অস্তিত্ব, নেই চলাচলের রাস্তাও। অথচ বন-জঙ্গলঘেরা পাহাড়ি টিলার ঢালুতে প্রায় ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হলো শান বাঁধানো দুটি ঘাটলা। খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের এ ভূতুড়ে ঘাটলা এলাকাবাসীর কোনো কাজে আসছে না। বরং সরকারের অর্থ অপচয়ের এ ঘাটলা সাধারণ মানুষের কাছে ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাটিরাঙ্গা উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের আব্বাস সর্দারপাড়ায় টিলার ঢালুতে পুকুর বা জলাশয়বিহীন স্থানে ঘাটলার একটি এবং অন্যটি এর প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে আমতলী আদর্শপাড়া এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে। গ্রামবাসীর বক্তব্য, সরকারি প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করতেই ভুয়া জলাশয় বা পুকুর দেখিয়ে ঘাটলা দুটি নির্মাণ করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ঘাটলা নির্মাণ হতে দেখে পানির সমস্যায় ভোগা ঐ দুই এলাকার মানুষ ভেবেছিলেন, পরে হয়তো পুকুর খনন করা হবে। কিন্তু ঘাটলা নির্মাণের দেড় বছর পার হলেও পুকুর আর খনন করা হয়নি। ফলে এ ঘটনায় আশাহত গ্রামবাসী ক্ষুব্ধ।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাটিরাঙ্গা উপজেলা কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে পুকুর ও খাল উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে জিওবির অর্থায়নে ২০২০-২১ অর্থবছরে মাটিরাঙ্গার আমতলী ইউনিয়নে চারটি পুকুর খনন ও ঘাটলা নির্মাণ করে এলজিইডি। এর মধ্যে ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে আব্বাস সর্দারপাড়া ও আমতলী আদর্শপাড়া এলাকায় ঘাটলা দুটির নির্মাণকাজ ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু করে শেষ হয় একই বছরের ডিসেম্বরে।
আব্বাস সর্দারপাড়ায় যে ঘাটলা নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে মানুষ যাওয়ার রাস্তা পর্যন্ত নেই। ঘাটলাটি করা হয়েছে পাহাড়ের ঢালুতে। এর পাশে একটি কবরস্থানও রয়েছে। মূলত দুই পাহাড়ের মাঝের সরু খাদকে পুকুর বা জলাশয় দেখিয়ে এখানে ঘাটলা নির্মাণ করা হয় বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। এছাড়া আমতলী আদর্শপাড়া এলাকার ঘাটলাটিরও একই অবস্থা। ঐ ঘাটলায় ওঠারই কোনো পথ নেই। ঘাটলার সামনে পুকুর বা জলাশয়ের কোনো অস্তিত্ব নেই।
আদর্শপাড়া জামে মসজিদের সভাপতি এমরান হোসেন ও আব্বাস আলী সর্দারপাড়া জামে মসজিদের সভাপতি রুহুল আমীন বলেন, তাদের এলাকায় কোনো পুকুর নেই। মূলত সরকারি প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করতেই এমন ভূতুড়ে ঘাটলা তৈরি করা হয়েছে। ঘাটলা দুটি নির্মাণে ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১৮ লাখ করে মোট ৩৬ লাখ টাকা। তবে যা কাজ হয়েছে, তা ২ লাখ টাকার মধ্যেই শেষ করা যায়। বাকি টাকার হিসাব নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা জোসনা বেগম, মো. রবিউল ইসলাম ও রাকিবুল হোসেন বলেন, দুই পাহাড়ের মাঝখানে ঘাটলা তৈরির সময় লোকজন বলেছিলেন, পুকুর খনন করা হবে। তাই আশায় বুক বেঁধেছিলেন সবাই। এখন দেখা যাচ্ছে, সে রকম কিছুই নয়।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঘাটলা নির্মাণের কাজ পায় মেসার্স রুবেল এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কাউকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে তাদের হয়ে কাজ করেছিলেন মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আলী। তিনি বলেন, কার্যাদেশ দিয়ে এলজিইডি যেখানে লে-আউট দিয়েছে, সেখানেই তিনি ঘাটলা নির্মাণ করেছেন। তবে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী মো. শাহজাহান। মাটিরাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এমন ঘটনা সত্য হলে তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।