মাত্র ১২ লাখ দোদুল্যমান ভোটারের হাতে কমলা-ট্রাম্পের ভাগ্য
যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচনে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাগ্য নির্ধারণ করবে মাত্র কয়েক লাখ দোদুল্যমান ভোটার। তবে এই ভোটারদের নাগাল পাওয়া খুবই কঠিন। তাই এসব অধরা আমেরিকানকে নিয়ে কয়েক মাস ধরে শ্রমসাধ্য গবেষণা পরিচালনা করছেন দুই প্রার্থী। এবার তারই আলোকে কার্যত কিছু ভোটারের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন তারা। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের।
ডেলাওয়্যারে কমলার প্রচারণা সদরদপ্তরে ভোট বিশ্লেষকরা রণক্ষেত্র রাজ্যগুলোতে কোন টেলিভিশন শো এবং পডকাস্ট ভোটাররা বেশি ব্যবহার করেন– ১৮ মাস ধরে তার একটি তালিকা তৈরি করেছেন। কমলার দল এ রাজ্যের প্রতিটি ভোটারের ক্ষেত্রে ০ থেকে ১০০-এর মধ্যে ‘যোগাযোগ যোগ্যতা স্কোর’ বরাদ্দ করেছে। এর মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত ভোটারের কাছে পৌঁছানো ঠিক কতটা কঠিন হবে এবং কে তার কাছে সমাপনী বার্তা সরবরাহ করতে সবচেয়ে কার্যকর, তা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ ফলাফলের ভিত্তিতে কমলা তাঁর গণমাধ্যম প্রচারণা এবং ভ্রমণের সময়সূচির পাশাপাশি সেই ভোটারদের প্রিয় তারকাকে নিয়ে প্রচারাভিযান চালাচ্ছেন। উদাহরণ স্বরূপ, চলচ্চিত্র তারকা জুলিয়া রবার্টস এবং বাস্কেটবল গ্রেট ম্যাজিক জনসন দোদুল্যমান অনেক ভোটারের কাছে খুবই জনপ্রিয়। এসব তারকাকে তাই কমলার পক্ষে প্রচারের জন্য সেসব রাজ্যে মোতায়েন করা হয়েছে।
অন্যদিকে দক্ষিণ ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের সদরদপ্তরে তাঁর দল সম্প্রতি রণক্ষেত্র রাজ্যের ভোটারদের মডেলটি নতুন করে বিন্যাস করেছে। দলের বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন, মাত্র ৫ শতাংশ ভোটার এখনও সিদ্ধান্তহীন ছিল, যা গত আগস্টের তুলনায় অর্ধেক। ট্রাম্প এবং তার দল এসব ভোটারকে ‘লক্ষ্য প্রণোদিতযোগ্য’ বলে অভিহিত করেছে। এর মধ্যে তরুণ, নিম্ন আয়ের এবং জাতিগত বৈচিত্র্যময় মানুষ রয়েছে। তাদের মধ্যে স্ট্রিমিং পরিষেবা এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার প্রবণতা দেখা গেছে। এর ভিত্তিতে সেসব রাজ্যে ট্রাম্প তরুণদের লক্ষ্য করে পডকাস্টসহ তাদের প্রিয় প্ল্যাটফর্মগুলোতে উপস্থিতি বাড়িয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে আধুনিক ভোট গ্রহণের আবির্ভাবের পর থেকে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সবচেয়ে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। দুই প্রার্থীই রণক্ষেত্র রাজ্যগুলোতে কার্যত সমানে সমান। ফলে নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে এখন দোদুল্যমান আমেরিকানরা নিয়ামক শক্তি হয়ে উঠেছেন।
তবে তারা অধরা। তাদের অনেকেই রাজনীতি নিয়ে আগ্রহী নয়। কেউ কেউ মনে করছেন, তাদের ভোটদান অর্থহীন। কারণ তারা ভোট না দিলেও তাতে কিছুই বদলাবে না। তাই বিলিয়ন ডলারের প্রচারণার পরও তাদের খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
ট্রাম্প শিবিরের রাজনৈতিক পরিচালক জেমস ব্লেয়ার বলেছেন, ‘এই লোকেরা অতি রাজনৈতিক (সুপার পটলিটিক্যাল) নয়। তাই আমরা অ-সুপার রাজনৈতিক মিডিয়ায় প্রচার চালাচ্ছি।’
সাক্ষাৎকারে কমলা এবং ট্রাম্পের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টারা সেসব ভোটার সম্পর্কে কিছু বিশদ তথ্য প্রকাশ করেছেন। উভয় শিবিরের এখন টার্গেট অল্প বয়সী, কালো এবং ল্যাটিনো ভোটাররা। কমলার প্রচার শিবির বিশ্বাস করে, তারা এখনও কলেজ শিক্ষিত কিছু শ্বেতাঙ্গ ভোটারের, বিশেষ করে নারীদের মন জয় করতে পারবেন। তারা ঐতিহাসিকভাবে রিপাবলিকানকে ভোট দিয়েছেন। তবে ট্রাম্প তাদের প্রত্যাখ্যান করেছেন।
নিউইয়র্ক টাইমস এবং সিয়েনা কলেজের রণক্ষেত্র রাজ্যগুলোর ভোটের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভোটারদের মাত্র ৩ দশমিক ৭ শতাংশ বা প্রায় ১২ লাখ মানুষ এখনও সিদ্ধান্তহীন। আর তাদের হাতেই মূলত কমলা ও ট্রাম্পের ভাগ্য নির্ভর করছে।
ট্রাম্প ভাজলেন ফ্রেঞ্চফ্রাই, কমলা গেলেন গির্জায়
নির্বাচনকে সামনে রেখে রোববার ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা ভোটের প্রচারে গির্জায় গিয়েছিলেন। অন্যদিকে রিপাবলিকান নেতা ট্রাম্প যান মার্কিন সমাজের আরেকরকম ধর্মশালা ম্যাকডোনাল্ডসে।
উভয় প্রার্থীই বর্তমানে সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ রাজ্যগুলোতে ভোটের প্রচারণা চালাচ্ছেন। সাতটি দোদুল্যমান রাজ্যের একটি জর্জিয়ায় হ্যারিস এবং অন্য আরেকটি রাজ্য পেনসিলভানিয়ায় নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন ট্রাম্প।
কমলা জর্জিয়ার দুটি গির্জায় প্রচারণা চালিয়েছেন। অন্যদিকে পেনসিলভানিয়ার ট্রিভোসে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ফাস্টফুড রেস্তোরাঁ ম্যাকডোনাল্ডসে ফ্রেঞ্চফ্রাই বানিয়ে সমর্থকদের পরিবেশন করেছেন ট্রাম্প।