Hot

মাদকে নজরদারি কম, বাড়ছে ব্যাপ্তি

রাজধানীর পল্লবীর বাউনিয়াবাঁধ এলাকায় গত ৩০ অক্টোবর দুর্বৃত্তদের দুই গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ সময় তাদের গুলিতে বাসার সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে থাকা গৃহবধূ আয়েশা আক্তার প্রাণ হারান। ওই ঘটনায় পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে– মাদক কারবারি ফতেহ ও তার ভাই মামুনের সঙ্গে আল ইসলাম ও মোমিন গ্রুপের দ্বন্দ্ব রয়েছে। বাউনিয়াবাঁধের মাদক বিক্রেতা মামুনের কাছে চাঁদা দাবি করে তাকে জিম্মি করে মোমিনের লোকজন। পরে মোমিন গ্রুপের সদস্যের গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার নিরপরাধ গৃহবধূর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। 

সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন বস্তি ও ক্যাম্পকেন্দ্রিক মাদক কারবারিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। প্রায়ই প্রকাশ্যে সংঘাতে জড়াচ্ছে তারা। পল্লবীর মিল্লাত ক্যাম্প, বেগুনটিলা ক্যাম্প ও জুট পট্টিতে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রাজধানীর সবচেয়ে বড় মাদক স্পট হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মাদক কারবারিদের মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই সংঘর্ষ ও গোলাগুলি হচ্ছে। এতে এ পর্যন্ত অন্তত আটজনের মৃত্যু এবং আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুলিশের ঢিলেঢালা নজরদারি ও দুর্বল গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের সুযোগ নিয়ে রমরমা কারবার চালিয়ে যাচ্ছে মাদক কারবারিরা। চলমান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে মাদক নির্মূলে মনোযোগ পুরোপুরি দেওয়া কঠিন। এই সুযোগে মাদকের ব্যাপ্তি বাড়ছে। বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে মাদক কেনাবেচা করতে দেখা যাচ্ছে। আবার নতুন নতুন কৌশলে বাংলাদেশে ঢুকছে মাদক। সীমান্ত এলাকায় প্রায়ই ধরা পড়ছে চালান। সীমান্তের ওপার থেকে আসা নানা ধরনের মাদক ছড়িয়ে পড়ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।

জাতিসংঘের মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ইউএনওডিসির মতে, যে পরিমাণ মাদকদ্রব্য ধরা পড়ে, তা বিক্রি হওয়া মাদকের মাত্র ১০ শতাংশ। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক কার্যালয়ের তথ্যমতে, দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশির ভাগ দেশে ইয়াবা সরবরাহ করে মিয়ানমার। ২০০৬ সাল থেকে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা পাচার শুরু হয়। ২০১২ সালে চীন ও থাইল্যান্ডের মধ্যে চুক্তির পর মিয়ানমারের মাদক উৎপাদনকারীদের জন্য সেসব দেশে পাচার কঠিন হয়ে পড়ে। এর পর তারা বাংলাদেশকেই মাদক পাচারের প্রধান রুট হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও সমাজ অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক সমকালকে বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। মাদকের বিস্তার কমেনি, অনেক ক্ষেত্রে হাতবদল হয়েছে। আবার পুরোনোরা ফিরে এসেছে। মাদক কারবারিরা বুঝে গেছে, কাকে কীভাবে ম্যানেজ করে এই নেটওয়ার্ক সচল রাখতে হয়। মাদক কারবারের আর্থিক ভাগ-বাটোয়ারা অনেক দূর পর্যন্ত যায়। তারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিশেষ অবস্থার সুযাগ নিচ্ছে। মাদকাসক্ত ব্যক্তি তার মাদকের টাকা সংগ্রহ করতে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির মতো ঘটনায় জড়াচ্ছে।

পুলিশ সদরদপ্তরের মুখপাত্র এআইজি ইনামুল হক সাগর বলেন, ১৮ অক্টোবর থেকে দেশব্যাপী শুরু হওয়া পুলিশের বিশেষ অভিযানে মাদকের বিরুদ্ধেও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। 
পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে পুলিশ চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই খুনোখুনি মোকাবিলায় বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। পাশাপাশি মাদকের ব্যাপারে কোনো তথ্য পেলে সেখানে অভিযানে যায়। তবে আরেকটু গুছিয়ে নেওয়ার পর মাদকের বিরুদ্ধে পুরোপুরি মনোযোগী হবে। এ ছাড়া অধিকাংশ জায়গায় পুলিশের নতুন মুখ। মাদক নেটওয়ার্ক ও জড়িতদের ব্যাপারে জানতে একটু সময় লাগবে। তাই মাদক মামলার সংখ্যাও কমছে। 

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মাদকদ্রব্য উদ্ধারের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অক্টোবরে ৫ লাখ ৯০ হাজার ৯৭৭ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ৩ কেজি ১৯৫ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইস, ১১ কেজি ৮০২ গ্রাম হেরোইন, ২৬ হাজার ৫৯৯ বোতল ফেনসিডিল, ১ হাজার ৪১২ কেজি গাঁজা এবং ২০ বোতল এলএসডি জব্দ করা হয়। মাদক পাচার ও অন্যান্য চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে ২৪৩ জনকে আটক করা হয়। এর আগের মাস সেপ্টেম্বরে ১২ লাখ ৮২ হাজার ৯৪৩ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ৯ কেজি ৪১৩ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইস, ১৬ কেজি ৮৭৪ গ্রাম হেরোইন, ২৯ হাজার ১৬৪ বোতল ফেনসিডিল, ১ হাজার ৯৯৮ কেজি গাঁজা এবং ১৩ বোতল এলএসডি উদ্ধার হয়েছে। 

আগস্টে যখন ছাত্র-জনতার আন্দোলন তুঙ্গে তখনও বন্ধ হয়নি মাদক পাচার। আগস্টে ১২ লাখ ৬১ হাজার ৪৬৭ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ১২ কেজি ৯১৩ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ আইস, ৭ কেজি ৩৫ গ্রাম হেরোইন, ১৫ হাজার ৭২৬ বোতল ফেনসিডিল, ১ হাজার ৩৭৭ কেজি ৫৮ গ্রাম গাঁজা এবং ২০ বোতল এলএসডি জব্দ করে বিজিবি। 
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় ৮ সেপ্টেম্বর অভিযান চালিয়ে ১ লাখ ৬০ হাজার ইয়াবা বড়ি উদ্ধার এবং এক পাচারকারীকে আটক করে বিজিবি।
দেশে মাদক প্রবেশের অন্যতম রুট কক্সবাজারের টেকনাফ। সেখানে চিহ্নিত মাদক কারবারিদের মধ্যে আব্দুর রহমান, একরাম, নুরুল হুদাসহ অনেককে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ ‘বড় ভাই’ বদল করে কারবার চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। 

পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে কারবারিরা 
বিদ্যমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির পুরোটাই কাজে লাগিয়েছে মাদক কারবারিরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও সরকার পতন পরবর্তী পরিস্থিতির কারণে জুলাইয়ের শেষভাগ থেকে আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল নাজুক। বিশেষ করে মাদকবিরোধী কোনো জোরালো কার্যক্রম চালানো সম্ভব হয়নি। নজরদারির এই ঘাটতির কারণে ওই সময়ে বিভিন্ন রুটে ইয়াবা-গাঁজাসহ বিপুল পরিমাণ মাদক ঢাকায় আনা হয়। এরপর সুবিধাজনক স্থানে তা সংরক্ষণ করে পাইকারি কারবারিরা। এক পর্যায়ে পুলিশ-র‍্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ অন্য সংস্থা কার্যক্রম শুরু করলেও তা গতি পায়নি। 

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দলটির কিছু নেতাকর্মী মাদক কারবারিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। কেউ আবার রুট নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাদের সঙ্গে যোগসাজশ ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু কর্মকর্তার। মাদক কারবারিদের সহায়তার বিনিময়ে নির্দিষ্ট হারে চাঁদা নিতেন তারা। তবে সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে এবং সেই কর্মকর্তারা বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। ফলে এখন প্রায় নির্বিঘ্নে মাদক পরিবহন ও বিক্রি করছে কারবারিরা। কারণ পুলিশ-র‍্যাব সক্রিয় হলেও তাদের তৎপরতা এখনও স্বাভাবিক পর্যায়ে আসেনি। যানবাহনের সংকটসহ অন্যান্য কারণে পর্যাপ্ত টহল নেই। অনেক স্থানে পুলিশ কোনো যানকে থামার নির্দেশ দিলে বা তল্লাশি করতে গেলে উল্টো গালাগাল শুনতে হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শক্ত হাতে ব্যবস্থা নেওয়ার মতো অবস্থায় নেই দায়িত্বশীলরা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, অস্থিতিশীল সময়ে পুলিশ-র‍্যাবের শক্তিশালী ভূমিকা না থাকার পাশাপাশি সীমান্তে শিথিলতার সুযোগও নিয়েছে মাদক কারবারিরা। ইয়াবা, আইস, গাঁজা ইত্যাদি মাদক বিপুল পরিমাণে ঢুকেছে এবং সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ইয়াবার নতুন রুট রেলপথ
ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথ চালুর পর এটাকে নতুন রুট হিসেবে ব্যবহার শুরু করেছে ইয়াবা কারবারিরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি এড়াতে তারা এই পথ বেছে নিয়েছে। ডিএনসির এক কর্মকর্তা বলেন, কক্সবাজারের ট্রেন চট্টগ্রাম ছাড়া আর কোথাও যাত্রাবিরতি দেয় না। ফলে ট্রেনে কেউ মাদক বহনের তথ্য পেলেও মাঝপথে কোনো স্টেশনে ট্রেনে উঠে অভিযান চালানোর সুযোগ নেই। এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে কারবারিরা যাত্রী সেজে ট্রেনে ইয়াবা আনছে। সাধারণত কালোবাজার থেকে বা অন্য কারও নামে টিকিট কেনে তারা। যাতে সহজে তাকে শনাক্ত করা না যায়। আবার নির্ধারিত আসনের বদলে অন্য আসনে বসে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট যাত্রীকে অনুরোধ করে আসন বদল বা ফাঁকা থাকা আসন বেছে নেওয়া হয়। আবার ট্রেনটি ঢাকায় পৌঁছানোর আগে গাজীপুর বা টঙ্গীতে থামলে সেখানেই তারা নেমে যায়। এতে ধরা পড়ার সম্ভাবনা আরও কমে যায়। 

এর বাইরে পর্যটক সেজে মোটরসাইকেলে বা বাসের যাত্রী সেজে ইয়াবা আনা হচ্ছে। সেই সঙ্গে আকাশপথে ইয়াবা পরিবহনের ঘটনাও বেড়েছে। মাঝে পাঁচ-ছয় মাস বিমানে ইয়াবা আনার তথ্য মেলেনি। তবে গত এক মাসে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় অন্তত তিনটি চালান ধরা পড়ে। গ্রেপ্তাররা জানায়, কক্সবাজার থেকে বিমানে ইয়াবা নিয়ে তারা ঢাকায় আসে।

জেনেভা ক্যাম্পেও ক্ষমতার পালাবদল
রাজধানীর সবচেয়ে বড় মাদক স্পট হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মাদক কারবারিদের মধ্যে তুমুল লড়াই চলছে। প্রায় দিনই দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়াচ্ছে এবং পরস্পরকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছে। এতে এ পর্যন্ত অন্তত আটজনের মৃত্যু এবং অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ছয়জনই ভূঁইয়া সোহেলের সহযোগীদের হাতে এবং দু’জন চুয়া সেলিম ও কোপ মনুর সহযোগীদের হাতে মারা যান। ক্যাম্প দখলের এই লড়াইয়ের পাশাপাশি মাদক কারবারিদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদেরও বদল ঘটেছে। বিগত সরকারের সময়ে সেখানকার মাদক কারবারিদের সহায়তা করত আওয়ামী লীগের সাবেক কাউন্সিলর হাসান নূর ইসলামের লোকজন। কাউন্সিলরের ব্যক্তিগত সহকারী মো. রায়হান টাকার বিনিময়ে ক্যাম্পের শীর্ষ মাদক কারবারি সৈয়দপুরিয়া বাবুর চক্রকে সহায়তা করতেন। আরেক শীর্ষ কারবারি ভূঁইয়া সোহেলের ভরসা ছিলেন সাবেক এমপি জাহাঙ্গীর কবির নানকের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পরিচিত বিপ্লব। 

তবে ৫ আগস্ট সরকার পতনের সঙ্গে বদলে গেছে সেই হিসাব-নিকাশ। এখনও পুরোপুরি বন্দোবস্ত না হলেও বিএনপিপন্থি কয়েকজন ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, স্থানীয় ৩২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির এক নেতা মাদক কারবারিদের সঙ্গে এরই মধ্যে যোগাযোগ করেছেন। তিনি সবাইকে বলেছেন, তাঁকে চাঁদা দিতে হবে।

বিএনপির ওই নেতা বিহারি সম্প্রদায়ের হলেও তিনি এক দশকের বেশি সময় ধরে ক্যাম্পের বাইরে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাঁর নামে একাধিক মামলা হয়। এক পর্যায়ে তিনি ক্যাম্প ছেড়ে অন্যত্র থাকতে শুরু করেন। তবে পট পরিবর্তনের পর ওই নেতা আবারও ফিরেছেন এবং নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

‘ছোট না বড়– কী লাগবে নেন’
জেনেভা ক্যাম্পের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গত ২৮ অক্টোবর রাতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে কয়েকজন মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী। সর্বশেষ ভূঁইয়া সোহেলকেও দুই সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। তার পরও বদলায়নি চিত্র। বুধবার সরেজমিন দেখা যায়, অভিযানের এক সপ্তাহ না পেরোতেই ক্যাম্পের অলিগলিতে প্রকাশ্যেই চলছে মাদক বেচাকেনা। দিনে কিছুটা রাখঢাক থাকলেও সন্ধ্যার পর সে সবের বালাই নেই। ক্যাম্পের ৪ নম্বর সেক্টরের ডাস্টবিনের পাশের একটি পান দোকানের সামনে কয়েকজন ঘোরাফেরা করছিলেন। কাউকে যেতে দেখলেই তারা এগিয়ে যাচ্ছেন, বলছেন– ‘ছোট না বড়’, ‘এই যে নেন, কী লাগবে নেন’ ইত্যাদি। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, তারা মাদক কারবারি পিচ্চি রাজার সহযোগী। রাজা এখনও ক্যাম্পেই থাকছেন। ক্যাম্পের হারুন ফার্মেসি থেকে শামীম হোটেল পর্যন্ত তাঁর লোকজনই বিক্রি করছেন ইয়াবা ও গাঁজা।

ক্যাম্পের পূর্ব পাশের কর্নারে মিলছে ইয়াবা, গাঁজা ও হেরোইন। এই বিক্রেতারা চুয়া সেলিমের দলের বলে জানা গেল। আরেকটি মাদক বিক্রির স্পট হলো কামাল বিরিয়ানির সামনে তিন রাস্তার মোড়। সেখানে হেরোইন ও গাঁজা বিক্রি করে সৈয়দপুরিয়া বাবুর লোকরা।

ভূঁইয়া সোহেল গ্রেপ্তার হলেও তাঁর ভাই টুনটুন, রানা ও কালুর নেতৃত্বে সহযোগীরা ক্যাম্পের ৭ নম্বর সেক্টরের সামনে আলফালাহ মেডিকেলের রাস্তায় মাদক বিক্রি করছেন। জেনেভা ক্যাম্প স্পোর্টিং ক্লাব এলাকার তিন রাস্তার মোড়ে হেরোইন বিক্রি করতে দেখা যায় কামরান ওরফে পোলার ও তাঁর ভাইসহ সহযোগীদের। আবার ক্যাম্পের পূর্ব পাশে ৬ নম্বর লাইনে (হুমায়ুন রোড) হাসিবের লোকজন মাদক বিক্রি করছিলেন। এই চক্রটি নিয়ন্ত্রণ করেন হাসিব ছাড়াও তাঁর চার ভাই– মনির, মিঠু, সোনু ও হীরা। হাসিব ক্যাম্পে থাকেন না। তবে মোহাম্মদপুর এলাকাতেই তার চার-পাঁচটি ফ্ল্যাট রয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া জয়নাল হোটেল এলাকায়ও ইয়াবা ও গাঁজা বিক্রি হচ্ছিল। তারা কোপ মনুর লোক বলে জানা যায়।

এফডিসি রেলগেট যেন গাঁজার হাট 
কারওয়ান বাজার মাছের আড়তের পাশে রেলগেট এলাকায় প্রতিদিন প্রকাশ্যেই চলে মাদক বেচাকেনা। এফডিসি রেলগেট নামে পরিচিত এই পয়েন্টটিতে মূলত গাঁজা বিক্রি হয়। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, রেলগেটে রাস্তার দুই পাশেই কয়েকজন তরুণ-যুবক দাঁড়িয়ে আছেন। কারও কারও হাতে ছোট্ট ব্যাগ। সোনারগাঁও হোটেলের দিক থেকে আসা একটি মোটরসাইকেল রেললাইনের কাছে গিয়ে থামতেই অপেক্ষারত তরুণ-যুবকরা এগিয়ে এলো। তাদের বলতে শোনা গেল, ‘কয়টা, কয়টা?’ এর পর মোটরসাইকেল আরোহী যুবক একজনের কাছ থেকে একটি গাঁজার পুরিয়া নিলেন ১০০ টাকায়। পরক্ষণে চলে গেলেন হাতিরঝিলের দিকে। একটু পর একই স্থানে এসে দাঁড়াল একটি রিকশা। আবার একইভাবে দু-তিনজন এগিয়ে এসে জানতে চাইল, ‘কয়টা, কয়টা?’

ঘণ্টাখানেক সেখানে অবস্থান করে দেখা গেল, একের পর এক গাঁজার ক্রেতা আসছেন। প্রতিবারই একই রকম দৃশ্যের অবতারণা হচ্ছে। আর এসবই ঘটছে সবার চোখের সামনে। তবে পুরো সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো টহল দেখা যায়নি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button