Trending

মাদক কারবারিদের সদর দফতর

ভয়ংকর চনপাড়া বস্তি – হেরোইন ইয়াবা ফেনসিডিল গাঁজা মদের ২৫০ স্পট, অবৈধ অস্ত্রের মহড়া নিত্যদিন, আছে ভাড়াটে কিলার, দেড় বছরে বহু হতাহত

রাজধানী-লাগোয়া জেলা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র (চনপাড়া গ্রাম)। কায়েতপাড়া ইউনিয়নে অবস্থিত বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে পুনর্বাসন কেন্দ্রে গড়ে উঠেছে চনপাড়া বস্তি। তিন দিকে নদী এবং একদিকে খালবেষ্টিত প্রায় দ্বীপের মতো এই বস্তিটি এখন মাদক চোরাকারবারি ও খুনি, অপরাধীদের অন্যতম ‘সদর দফতর’। মদ, গাঁজা, ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিল এবং অবৈধ অস্ত্র এখানে কেনাবেচা হচ্ছে প্রকাশ্যে। আলাদিনের চেরাগ এই বস্তির নিয়ন্ত্রণে হরহামেশাই চলে অবৈধ অস্ত্রের মহড়া। এলোপাতাড়ি গুলি আর মুর্হুমুর্হ গুলির শব্দ এই বস্তিতে নিত্যদিনের ঘটনা। গত দেড় বছরে সংঘর্ষে অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, চনপাড়ার ভাসমান লোকজন শুরুতে দিনমজুরের কাজ করতেন। তবে আশির দশকের শুরুর দিকে এই অঞ্চলে মাদক কেনাবেচা শুরু হয়। এই এলাকায় একাধিক বাহিনী মাদক বেচাকেনাসহ চাঁদাবাজি, অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত। ভাড়াটে কিলারদের নিরাপদ আস্তানাও এই বস্তি। গত কয়েক বছরে মাদককারবারি ও অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে চনপাড়া। হালে সারা দেশে মাদক সরবরাহ হয়ে থাকে এ বস্তি থেকেই। চনপাড়া বস্তির ছোট ছোট টিনের ঘর, পাকা-আধাপাকা দালানে লুকানো রয়েছে ‘রহস্য’। রয়েছে আড়াই শ মাদকের স্পট। বস্তিবাসীদের বেশির ভাগই ব্যস্ত সময় কাটে মাদক, অস্ত্র বেচাকেনায়। সেখানে প্রমোদের জন্য রয়েছে চারটি স্পট। চলে অসামাজিক কার্যকলাপ। সোয়া ১ লাখ লোকের বসবাস এ বস্তিতে। এখানে বসবাসরত মানুষ ও অপরাধচক্রের সঙ্গে জড়িত অধিকাংশই এখানকার স্থানীয় বাসিন্দা নন। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভাসমান অবস্থায় এসে এ গ্রামে আশ্রয় নিয়ে স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছেন। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে জানতে চাওয়া হয় নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তাফা রাসেলের কাছে। তিনি বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। মাঝে-মধ্যেই আমরা চনপাড়ায় অভিযান চালাই। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রগুলো বলেছে, মাদকের আন্তজেলা ডিপো হিসেবে পরিচিতি পাওয়া চনপাড়ার অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করে রীতিমতো ফুলেফেঁপে উঠেছেন শমসের মেম্বার। তার কথাই চনপাড়ায় শেষ কথা। অলিখিত আইন। এখানে প্রতিপক্ষ যেই হোক, সবাই শমসেরের লোক। শমসের চনপাড়া বস্তি থেকে প্রতিদিন চাঁদা আদায় করেন সাড়ে ৪ লাখ টাকা। চাঁদার টাকায় দুজন গানম্যান নিয়ে চলেন তিনি। বন্দুকের ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায় করে তার লোকজন। আর কেউ চাঁদা না দিলে তার কপালে নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ। এসব আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত এক-দেড় বছরে নিহত হয়েছেন ছয়জন। প্রভাবশালী ও পুলিশের এক শ্রেণির কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় শমসের তার আধিপত্য ধরে রেখেছে। তার রয়েছে সশস্ত্র বাহিনী। অবৈধ অস্ত্রের মজুদ রয়েছে তার নিয়ন্ত্রণে। স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭৪ সালে ওয়াসার ১২৬ একর জমির ওপর দেশের বিভিন্ন স্থানে নদীভাঙনে বাড়িঘর হারানো আশ্রয়হীন মানুষকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়। এর নাম দেওয়া হয় চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র। শুরুতে সাড়ে ৫ হাজার পরিবারের পুনর্বাসন করা হলেও বর্তমানে চনপাড়ার মোট বাসিন্দা লক্ষাধিক। ভোটার রয়েছেন প্রায় ১৭ হাজার।

চনপাড়ায় সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, এই গ্রামে স্থলপথে ঢোকার একমাত্র পথ ডেমরা থেকে বালু সেতু। বালু সেতু পার হলেই চনপাড়া মোড়। চনপাড়াকে ৯টি ওয়ার্ডে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডের অসংখ্য অলিগলি। বাড়িঘর একটার সঙ্গে অন্যটা লাগোয়া। চনপাড়ার দুই দিকে শীতলক্ষ্যা নদী এবং একদিকে বালু নদ। পার্শ্ববর্তী ডেমরা, নোয়াপাড়া ও মুড়াপাড়া থেকে নদীপথে চনপাড়ায় ঢোকা যায়। চনপাড়ায় প্রবেশের জন্য তিনটি খেয়াঘাট আছে। স্থানীয়রা জানান, বেশির ভাগ মাদকের চালান চনপাড়ায় নদীপথে ঢোকে। স্থলপথেও অভিনব কায়দায় মাদকের ছোট-বড় চালান আনা হয়। অস্ত্রের কেনাবেচাও চলে এখানে। চনপাড়ার ভিতরে আড়াই শতাধিক চিহ্নিত মাদকের স্পট রয়েছে। পুলিশের অভিযানেও কাজ হয় না। মাদককারবারিদের নেটওয়ার্ক এতটাই শক্তিশালী যে, অভিযানের খবর আগেভাগেই চলে যায় মাদককারবারিদের কাছে। বস্তির তিন দিকেই পানি হওয়ায় দ্রুত সটকে পড়ে অপরাধীরা। জানা গেছে, এক সময় চনপাড়ায় সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য বিউটি আক্তার ওরফে কুট্টির নিয়ন্ত্রণ ছিল। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বিউটির স্বামী এম এ হাসান ওরফে হাসান মুহুরি খুন হন। দুই বছরের মাথায় ২০১৯ সালের জুনে খুন হন বিউটিও। বিউটি ও বিউটির স্বামী হত্যা মামলায় জয়নাল, শাহীন, রাজা, আনোয়ারকে আসামি করা হয়। বিউটি মারা যাওয়ার পর চনপাড়া মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে নেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান বজলুর রহমান। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ প্রায় ডজনখানেক মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সম্প্রতি তিনি জেলখানায় মৃত্যুবরণ করেন। চনপাড়ার একাধিক সূত্র বলেছে, সত্তরের দশকের শেষের দিকে দুটি স্পটে গাঁজা বিক্রি ও সেবন হতো। শুক্কুর ও আলী নামে দুই ব্যক্তি এই স্পট দুটি নিয়ন্ত্রণ করতেন। আশির দশকের শুরুর দিকে মাদকের বিস্তৃতি বাড়তে থাকে। ২০১১ সালের পর থেকে মাদক পুরো চনপাড়ায় ছড়িয়ে পড়ে। ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ সব ধরনের মাদক এখানে বিক্রি হয়। গত ৫ বছরে পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ রূপ নিয়েছে। হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে যে কোনো ধরনের মাদক। শুধু মাদকই নয়, অপরাধীরা আশ্রয়স্থল হিসেবেও বেছে নেয় চনপাড়াকে। গত দুই দশকে মাদক চোরাকারবার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে চনপাড়ায় খুন হয়েছেন পুলিশের এক সদস্যসহ অন্তত ১৫ জন। প্রায় প্রতিদিনই দুই-তিনটা মামলা হয় বলেও জেলা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান। যদিও অভিযোগ রয়েছে, চনপাড়ার মাদক চোরাকারবারিদের কাছ থেকে মাসোহারা পায় পুলিশও। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান,  গত ১০ বছরে ভয়ানকভাবে চনপাড়ায় মাদকের বিস্তার ঘটেছে। প্রতিটি অলিগলিতে মাদকের কেনাবেচা চলে। কয়েকজন ব্যক্তিই এসবের নিয়ন্ত্রক। তাদের শেল্টার দেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এলাকার শিক্ষিত ছেলেমেয়ে এই কারণে মাদকসেবন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। উপাসনালয়ের সামনেও মাদক বিক্রি চলে। এসব নিয়ে মাদক চোরাকারবারিদের মধ্যে মারামারির ঘটনা নিত্যদিনের। এই গ্রামের পুরনো বাসিন্দাদের অনেকেই তাদের ছেলেমেয়েকে গ্রামের বাইরে রাখেন। গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।
৪৪ বছরে ১৭ খুন : অনুসন্ধানে জানা গেছে, চনপাড়া পুনর্বাসনে গত ৪৪ বছরে ১৭টি ভয়াবহ খুনের ঘটনা ঘটেছে। তবে এ সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে স্থানীয়রা মনে করেন। ১৯৭৬ সালে বাদশা মিয়া খুনের মধ্য দিয়ে চনপাড়ায় খুনের শুরু হয়। ১৯৭৯ সালে খুনের শিকার হন খয়ের পার্টির সদস্য হাফেজ আলী, ১৯৮২ সালে খুন হন পারভেজ মিয়া, ১৯৯৪ সালে খুনের শিকার হয় চাঁন মিয়া, ২০০৩ সালে ফিরোজ সরকার, ২০০৪ সালে ফারুক মিয়া। ২০০৫ সালে খুন হন পুলিশের এএসআই হানিফ মিয়া ও ক্রিকেটার ফালান মিয়া। ২০০৮ সালে খুন হন আবদুর রহমান, ২০১১ সালে হত্যার শিকার হন র‌্যাবের সোর্স খোরশেদ মিয়া। ২০১৬ সালের ১২ মার্চ প্রজন্ম লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনির হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে হত্যার শিকার হয় আসলাম হোসেন নামে এক স্কুলছাত্র। ২০১৭ সালের ২৯ নভেম্বর থানা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক হাসান মুহুরিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।  সূত্রে জানা যায়, চনপাড়ায় রয়েছে ৪০ জনের মতো ভাড়াটে কিলার। রূপগঞ্জের আলোচিত সব খুনের সঙ্গে চনপাড়ার কিলাররা জড়িত রয়েছে। এ বস্তিতে বিচরণ করতেন নারায়ণগঞ্জের এক সময়কার শীর্ষ সন্ত্রাসী কামরুজ্জামান কামু, আনোয়ার, ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী টোকাই সাগর, মুরগি মিলন, পিচ্চি হান্নানসহ অনেকে। ’৭৪এ-র পরবর্তী রূপগঞ্জের আলোচিত ৪২ হত্যাকান্ডের ২৯টি সংঘটিত হয়েছে এ বস্তিতে বসবাসরত কিলারদের মাধ্যমে। চাঞ্চল্যকর শিল্পপতি রাসেল ভূঁইয়া, খালেদ বিন জামাল, তারেক বিন জামাল, ছাত্রদল নেতা শফিকুল ইসলাম, কাঞ্চনের মোক্তার হোসেন, ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন, উপশহরের ঠিকাদার বেলায়েত হোসেনসহ আলোচিত অধিকাংশ হত্যা মামলার আসামি চনপাড়া বস্তি এলাকার।

সংস্কৃতিকর্মী সাজিয়ে সুন্দরী মেয়েদের পাচার : অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতিবছর চনপাড়া পুনর্বাসন এলাকা থেকে ২০ থেকে ২৫ জন সুন্দরী মেয়েকে সংস্কৃতিকর্মী সাজিয়ে তিন থেকে ছয় মাসের ভিসায় কলকাতা, সিঙ্গাপুর, সৌদি, বাহরাইন, কাতার, দুবাই, আরব-আমিরাত, পাকিস্তান ও আফ্রিকায় পাঠানো হয়। এতে বোঝার কোনো উপায় থাকে না। সুন্দরী মেয়েদের ভালো কাজের কথা বলে পাঠানো হয়।

খয়ের-মলম ও ছিনতাইকারী গ্রুপ : চনপাড়ায় রয়েছে খয়ের-মলম ও ছিনতাকারী গ্রুপ। এরা রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় অপকর্ম করে বেড়ায়। প্রায় ৪০টি টিম রয়েছে খয়ের-মলম পার্টির। আর ছিনতাকারী গ্রুপ রয়েছে ২৫টি।

ইয়াবা তৈরির কারখানা : অনুসন্ধানে জানা যায়, চনপাড়ায় ইয়াবা তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। ইয়াবা কারবারির ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, চনপাড়ায় ইয়াবা পাচার কাজে ব্যবহার করা হয় নারীদের। এসব নারী শরীরের বিভিন্ন স্থানে রেখে ইয়াবা নিয়ে আসছে। চনপাড়ার নারী ভ্যাম্পায়াররা কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে ইয়াবা পাচারের প্রশিক্ষণ রপ্ত করে আসে। বর্তমানে চনপাড়ার তিন ডজন নারী প্রশিক্ষণ নিয়ে ইয়াবা পাচারের কাজ করছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor