Bangladesh

মাদক ব্যবসায়ীর সন্তানকে পড়াতে রাজি না হওয়ায় ৪ মাস জেল খাটলেন বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রী

মাদক ব্যবসায়ীর সন্তানকে প্রাইভেট পড়াতে রাজি হননি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এক ছাত্রী। এ জন্য তাঁর ওপর নেমে এসেছিল অকল্পনীয় নিপীড়ন। ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগসাজশে তাঁকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে গ্রেপ্তার করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিদর্শক (এসআই) শেখ মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন। বিভাগীয় তদন্তে বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় এই কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে।

গত ১২ মার্চ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক অফিস আদেশে এই সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানানো হয়। এ ছাড়া আদালতের নির্দেশে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ফৌজদারি মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি।

নিপীড়নের শিকার ওই বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থী সদ্য মা হয়েছেন। তিনি এ ঘটনায় এখনো আতঙ্কিত বলে জানিয়েছেন তাঁর স্বামী। কারণ, এখনো তাঁদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তবে তিনি বলেছেন, ‘একটাই সান্ত্বনা—আমরা অন্যায় করিনি, এখন এ কথা বুক ফুলিয়ে বলতে পারব।’

অফিস আদেশ অনুযায়ী সাজ্জাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর খিলক্ষেতের বাসায় অভিযান চালিয়ে এক হাজার ইয়াবা বড়ি উদ্ধার দেখিয়ে ওই ছাত্রীকে আটক করেন সাজ্জাদ।

পদে পদে আইন লঙ্ঘন

অফিস আদেশ অনুযায়ী সাজ্জাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর খিলক্ষেতের বাসায় অভিযান চালিয়ে এক হাজার ইয়াবা বড়ি উদ্ধার দেখিয়ে ওই ছাত্রীকে আটক করেন সাজ্জাদ। বাসা থেকে পৌনে তিন ভরি স্বর্ণ ও ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা নিয়ে যান। ওই দিনই তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে তাঁর বাবার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ঘুষও নেন তিনি।

কোনো নারীকে অন্য কোনো নারী দ্বারা তল্লাশি করার বিধান থাকলেও তা লঙ্ঘন করেন তিনি।

সাজ্জাদ ওই সময় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মহানগর (উত্তর) কার্যালয়ের গুলশান সার্কেলে কর্মরত ছিলেন। তদন্তে উঠে এসেছে তিনি ওই দিন রাত সাড়ে নয়টায় অভিযান চালিয়ে ওই ছাত্রীকে বিধিবহির্ভূতভাবে গ্রেপ্তার করেন। যদিও ইয়াবা জব্দের তালিকা এবং ওই ঘটনায় দায়ের করা এজাহারে অভিযানের সময় সাতটা উল্লেখ করেছেন সাজ্জাদ।

ওই অভিযানে উত্তরা সার্কেলের এসআই রোকেয়া আক্তার এবং গুলশান সার্কেলের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান ঘটনাস্থলে না থাকা সত্ত্বেও সাজ্জাদ তাঁদের অভিযানকারী দলের সদস্য হিসেবে দেখান। কোনো নারীকে অন্য কোনো নারী দ্বারা তল্লাশি করার বিধান থাকলেও তা লঙ্ঘন করেন তিনি।

অভিযানে নিরপেক্ষ সাক্ষীদের উপস্থিতিতে তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়নি এবং জব্দ দেখানো ইয়াবা ঘটনাস্থলে গণনা করা হয়নি। সাজ্জাদ জব্দ তালিকার ১ নম্বর সাক্ষীর স্বাক্ষর ঘটনাস্থলে নিলেও সেটা খালি ফরমে নেন। ২ নম্বর সাক্ষীর স্বাক্ষর ঘটনাস্থলে না নিয়ে তাঁর তেজগাঁও অফিসে নিয়েছেন, যা প্রচলিত নিয়মের লঙ্ঘন।

সাজ্জাদের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, তিনি চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী মো. রায়হানের সঙ্গে যোগসাজশ করে ওই ছাত্রীকে মাদক ব্যবসায়ী বানিয়ে রায়হানের প্রতিহিংসা চরিতার্থে কাজ করেছেন। তিনি ঘটনাস্থলের আশপাশের নিরপেক্ষ লোককে সাক্ষী না করে বিধিবহির্ভূতভাবে অন্য এলাকার বাসিন্দা ও মাদক ব্যবসায়ী মো. মামুন খানকে সাক্ষী করেছেন।

এসব অভিযোগে সাজ্জাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয় এবং কারণ দর্শাতে বলা হয়। লিখিত জবাবে তিনি ব্যক্তিগত শুনানির আবেদন করেন। তবে গত বছরের ৭ আগস্ট শুনানিতে তাঁর বক্তব্য সন্তোষজনক না হওয়ায় বিধি অনুযায়ী তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, সাজ্জাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের একটি ছাড়া সবগুলোই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

সাজ্জাদের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, তিনি চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী মো. রায়হানের সঙ্গে যোগসাজশ করে ওই ছাত্রীকে মাদক ব্যবসায়ী বানিয়ে রায়হানের প্রতিহিংসা চরিতার্থে কাজ করেছেন।

সংশ্লিষ্ট মাদক কর্মকর্তা ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মাদক ব্যবসায়ীর সন্তানকে পড়াতে না চাওয়ায় তাঁর পক্ষ হয়ে এই কর্মকর্তা ছাত্রীকে ফাঁসিয়েছেন। পরীক্ষা চলাকালীন তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

সাজ্জাদের বিভাগীয় মামলাটি তদন্ত করেছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মুজিবুর রহমান পাটোয়ারী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সাজ্জাদের অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তাঁরা তদন্তে ওই ছাত্রীর কোনো দোষ পাননি, তাঁর সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে।

একাধিকবার চেষ্টা করেও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চাকরিচ্যুত উপপরিদর্শক শেখ মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন ও মাদক ব্যবসায়ী মো. রায়হান ও মামুন খানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ ঘটনায় আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ হওয়ার নয়। এরপরও আমরা ক্ষতিপূরণ দাবি করব। মাদক ব্যবসায়ীর সন্তানকে প্রাইভেট পড়ায়নি বলে আমার স্ত্রীকে কারাগারে থাকতে হয়েছে। সামাজিকভাবে আমাদের হেয় প্রতিপন্ন হতে হয়েছে।

ছাত্রীর স্বামী

ফৌজদারি মামলায় ধীরগতি

ছাত্রীকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোয় সাজ্জাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক আহসানুর রহমানকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। মামলাটি তদন্তের জন্য আদালত সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন।

আহসানুর রহমান বলেন, আদালত ওই ছাত্রীকে খালাস দিয়েছেন। সাজ্জাদের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দিয়েছেন। সাজ্জাদ উচ্চ আদালতে আবেদন করে বারবার মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ নিচ্ছেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, সাজ্জাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের একটি ছাড়া সবগুলোই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর প্রতি যে অন্যায় হয়েছে, তার কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি তাঁরা। বরং এখনো তাঁদের বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তাঁর স্বামীর। বর্তমানে স্বামী-স্ত্রী দুজনই পেশায় আইনজীবী।

ওই ছাত্রীর স্বামী বলেন, ‘এ ঘটনায় আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ হওয়ার নয়। এরপরও আমরা ক্ষতিপূরণ দাবি করব। মাদক ব্যবসায়ীর সন্তানকে প্রাইভেট পড়ায়নি বলে আমার স্ত্রীকে কারাগারে থাকতে হয়েছে। সামাজিকভাবে আমাদের হেয় প্রতিপন্ন হতে হয়েছে।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d