Trending

মানবেতর জীবনে বন্ধ কারখানার শ্রমিকরা

♦ তীব্র মূলধনসংকটে মালিকরা ♦ ঋণ-এলসি দিচ্ছে না ব্যাংক

৫ আগস্ট ও পরবর্তী সময়ে ভাঙচুর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ছোটবড় প্রায় ১০০ কারখানা এখনো বন্ধ রয়েছে। এসব কারখানায় কর্মরত ছিলেন প্রায় ১ লাখ শ্রমিক, তারা এখন পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অন্যদিকে আর্থিকসংকট, ব্যাংক ঋণ না পাওয়া, রাজনৈতিক কারণে মালিকরা আত্মগোপনে থাকায় কারখানা চালু করতে পারছেন না। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গত বছরের আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত শ্রমিক অসন্তোষের কারণে কারখানাগুলোতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। সাত মাস ধরে শিল্পকারখানাগুলো বন্ধ থাকায় কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খুলছে না অথবা ঋণ পুনঃতফসিল করার সুবিধা দিচ্ছে না ব্যাংক। ফলে তীব্র মূলধন সংকটে পড়েছেন মালিকরা। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্কের কারণে শিল্পকারখানার মালিকদের অনেকেই গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন এবং বিদেশে পালিয়ে গেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কারখানাগুলোর মধ্যে বেক্সিকো গ্রুপের ১৪টি টেক্সটাইল ও পোশাক কারখানা, বেঙ্গল গ্রুপের তিনটি প্লাস্টিক কারখানা এবং আশুলিয়া, সাভার, জিরাবো ও জিরানী এলাকার কয়েকটি পোশাক কারখানা রয়েছে।

সরকার বেক্সিমকো গ্রুপের ৩১ হাজার ৬৬৯ জন শ্রমিক এবং ১ হাজার ৫৬৫ জন কর্মকর্তার মজুরি ও অন্যান্য পাওনা পরিশোধে ৫২৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেছে। আজ থেকে শ্রমিকদের মধ্যে তা পরিশোধ শুরু হবে। বেক্সিমকো গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা সীমিত পরিসরে ব্যবসা পুনরায় শুরু করার জন্য পরপর দুটি এলসি খোলার অনুমতি দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে বারবার অনুরোধ করেছেন। বেক্সিমকো গ্রুপের টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট বিভাগের মানবসম্পদ (এইচআর) এবং কমপ্লায়েন্স বিভাগের প্রধান খালিদ শাহরিয়ার বলেন, মালিকানা কার সেটা বিবেচনা না করে কারখানাগুলো পরিচালনা করা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে কর্মী এবং তাদের পরিবারকে বাঁচানো যায়। অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও, সরকার ব্যবসা পুনরায় চালু করার অনুমতি দেয়নি।

আরিফ হোসেন নামের এক শ্রমিক বলেন, বন্ধ কারখানার শ্রমিকরা মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। আমরা সরকারের কাছে কারখানা চালু রাখার দাবি জানাচ্ছি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন সেন্টারের সহসভাপতি জলি তালুকদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ছোটবড় ৯০টির বেশি পোশাক কারখানার প্রায় ১ লাখ শ্রমিক মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। ৫ আগস্টের পর বন্ধ কারখানার শ্রমিকরা বেঁচে থাকা নিয়ে হুমকিতে পড়েছে। সরকারের উচিত ছিল বেক্সিমকোর মতো অন্য কারখানারার শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের। ঈদের আগে এসব শ্রমিকের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধে সরকার উদ্যোগ নেবে বলে আমরা আশা করছি। বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন বলেন, গত বছরের আগস্টে প্লাস্টিক পণ্য, সিমেন্ট ব্যাগ, প্যাকেজিং উপকরণ এবং গ্রুপের কেন্দ্রীয় গুদাম উৎপাদনকারী তিনটি কারখানা পুড়ে গেছে। জিরানীতে অবস্থিত এই কারখানাগুলোতে ২ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করত, ৮০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হতো মাসে। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, কারখানা পুনর্নির্মাণ এবং নতুন যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ৪০০ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ পুনঃতফসিল করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত চারটি পোশাক কারখানা এখনো উৎপাদন শুরু করেনি। বিজিএমইএর প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, শ্রমিক অসন্তোষের কারণে গত বছরের জুলাই থেকে কিছু কারখানা বন্ধ রয়েছে এবং ভাঙচুরের কারণে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

bacan4d slot toto