মানুষের মস্তিষ্কের নিউরন কন্টেক্সটের বাইরে চিন্তা করতে সক্ষম

বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো মানুষের মস্তিষ্কের একক নিউরনের কার্যক্রম সরাসরি পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন যে, নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে মস্তিষ্ক একইভাবে চিনতে পারে। যদিও তা ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে প্রথমবার দেখা হয়েছিল।
স্পেনের Hospital del Mar Research Institute-এর গবেষকদের নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে সেল রিপোর্টস জার্নালে। এতে বলা হয়েছে, মানুষের মস্তিষ্ক বিমূর্ত চিন্তার সক্ষমতা অর্জন করে, যা বুদ্ধিমত্তার অন্যতম প্রধান ভিত্তি।
বিমূর্ত চিন্তা ও নিউরনের সম্পর্ক
বিমূর্ত চিন্তা বলতে এমন ধারণা বোঝায়, যা সরাসরি দেখা বা অনুভব করা না গেলেও মস্তিষ্ক সেটি বুঝতে পারে। যেমন—উপমা, রূপক বা তুলনামূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিষয় বোঝার ক্ষমতা। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি মূলত নিউরনের কাজ, যা কন্টেক্সট বা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর না করেও একই ধারণাকে চিনতে পারে। এর আগে প্রাণীদের ওপর গবেষণায় দেখা গেছে, একটি নির্দিষ্ট বস্তু বা স্থান বদল হলে নিউরনের প্রতিক্রিয়াও বদলে যায়। যেমন, ইঁদুর এক স্থানে কোনো বস্তু দেখলে নিউরন একভাবে সাড়া দেয়, কিন্তু সেটি অন্য স্থানে দেখলে প্রতিক্রিয়া ভিন্ন হয়।
তবে নতুন গবেষণায় এই ধারণার বিপরীত তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় যুক্তরাজ্য ও আর্জেন্টিনার ৯ জন মৃগী (এপিলেপসি) রোগী অংশ নেন, যাদের মস্তিষ্কে ইলেকট্রোড স্থাপন করা হয়েছিল। এতে নিউরনের প্রতিক্রিয়া সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়।
গবেষণার প্রক্রিয়া ও ফলাফল
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের দুটি ভিন্ন গল্প শোনানো হয়, যেখানে একই ব্যক্তিকে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে উপস্থাপন করা হয়েছিল। চমকপ্রদ বিষয় হলো, নিউরনের প্রতিক্রিয়া দুই ক্ষেত্রেই একই ছিল। এমনকি, যখন রোগীরা গল্প বলছিলেন, তখনও নিউরন সেই চরিত্রের কথা বলার আগেই সক্রিয় হয়ে উঠেছিল।
গবেষক রড্রিগো কিয়ান কুইরোগা বলেন, মানুষের মস্তিষ্ক স্মৃতি সংরক্ষণ করে অনেক বেশি বিমূর্ত উপায়ে, যা অন্যান্য প্রাণীদের থেকে আলাদা। আমরা যে-কোনো ধারণাকে নির্দিষ্ট পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল না হয়ে চিন্তা করতে পারি। এটি মানুষের বুদ্ধিমত্তার অন্যতম ভিত্তি। তিনি আরও বলেন, এই ক্ষমতার কারণেই আমরা জটিল সম্পর্ক স্থাপন করতে পারি এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হই।