Bangladesh

মানুষ যাবে কোথায়?

অসহায় সাধারণ মানুষ। বাজারের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছেন না তারা। একই পণ্য আজ যে দাম দেখে গেছেন কাল কিনতে গিয়ে দেখেন বেড়ে গেছে দশ থেকে বিশ টাকা কেজিতে। এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি আর কখনো হয়নি তারা। এমন অবস্থায় কোনো রকমে দিন কাটছে তাদের। শ্রমজীবী মানুষেরা হাপিত্যেশ করছে । নিত্যপণ্যের এমন গতির লড়াইয়ে মানুষ যাবে কোথায়? হাতে সীমিত টাকা নিয়ে বাজারে গিয়ে অনেক প্রয়োজনীয় পণ্য না কিনেই ফিরতে হচ্ছে। করুণ এক অবস্থা ঘরে ঘরে। 

গতকাল কাওরান বাজারে দেখা উজ্জ্বল নামের এক বেসরকারি চাকরিজীবীর সঙ্গে। কী কিনছেন জিজ্ঞেস করলে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। বলেন, ২০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি করি।

বিজ্ঞাপন স্ত্রী ও এক সন্তান নিয়ে বসবাস। ঘরভাড়া আর আগের ঋণ দিয়ে হাতে কিছুই থাকে না। সারা মাস চলে আবার ঋণের ওপর। খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতে হয়। আলুভর্তা যে খাবো তারও উপায় নেই। আলুর কেজি ৭০ টাকা। 

আমাদের মতো মানুষের ক্ষুধার যন্ত্রণা নিয়েই দিন পার করতে হচ্ছে। আমরা যাবো কোথায়? এত মানুষই বা কোথায় যাবে? কার কাছে এর সুরাহা চাইবো? সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে পিয়াজ, আলু, সবজিসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য নেই। বাজার ব্যবস্থায় কর্তৃপক্ষের নজরদারি নেই। যার যেমন খুশি সেভাবেই বিক্রি করছে। বিক্রেতাও অসহায়। তাদের কথা এত দামে পণ্য বিক্রি করতে আমাদেরও বিবেকে বাধে। কিন্তু করবো কী? আমাদেরও যে বেশি দামে কিনে আনতে হয়। বিক্রেতাদের কথা বাজারে পণ্যের অভাব নেই। কিন্তু দাম কমছে না। এমন পরিস্থিতি আর কখনোই দেখিনি। 

গতকাল সরজমিন রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকার রায়েরবাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারটিতে এক কেজি দেশি  পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা দরে। আলু ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। রসুনের কেজি ২৮০, আদা ২৪০ টাকা। ডিম ৫৫ টাকা হালি। শিম ১৬০ টাকা, পটোল ৬০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, ঊসি ৬০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কচুমুখি ৮০ টাকা, ফুলকপি ৬০ থেকে ৭০ টাকা পিস, বাঁধাকপি ৫০ থেকে ৬০ টাকা পিস, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা কেজি, পেঁপে ৪০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, বেগুন ১০০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ভালোমানের চিকন চাল মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৭৪ থেকে ৭৫ টাকা কেজি। নাজিরশাল ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা আর  বিআর-২৮ মোটা চাল তাও বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। শীতের মৌসুম শুরু হলেও এক আঁটি লালশাক বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা । পালংশাক-মূলাশাকও ২০ টাকা আঁটি বলে একদাম হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতারা। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা কেজি। সোনালি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি। দেশি মুরগি আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫শ’ থেকে ৭শ’ টাকা কেজি। এক কেজি খাসির মাংস কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ১১শ’ টাকার ওপরে। 

রায়ের বাজারে বাজার করতে আসা সোহানুর রহমান নামে এক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, বাজারে নিত্যপণ্যের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। কিন্তু সেই তুলনায় আমাদের আয় বাড়ে না। বৌ-বাচ্চা নিয়ে এখন টিকে থাকা দায় হয়ে গেছে। জুয়েল নামে এক রিকশাচালক বলেন, সারা মাস দিনে-রাতে রিকশা চালিয়ে যা পাই, তার বেশির ভাগই চলে যায় ঘরভাড়ায়। হাতে থাকে সামান্য। তা নিয়ে বাজারে গিয়ে পড়তে হয় বেকায়দায়। না পারি মাংস কিনতে, না ভালো মাছ। এখন মোটামুটি একটি মাছ কিনতে গেলেও কেজিপ্রতি ৪শ’ টাকা গুনতে হয়। আগে ডিম দিয়ে চালাতাম। তাও এখন ৬০ টাকা হালি। আর ৮০ টাকা ১০০ টাকার নিচে তো কোনো সবজিই নেই। এমন নিদারুণ কষ্ট করে আর বাঁচা যায় না। এভাবে চলতে থাকলে সাধারণ মানুষ না খেতে পেয়ে মরবে। মো. মালেক নামে এক নাইটগার্ড বলেন, রাতে মানুষের বাড়ি পাহারা দিয়ে মাসে ৮ হাজার টাকা বেতন পাই। তাই দিয়ে কোনোরকম চার সদস্যের সংসার চলে। বর্তমানে যেই অবস্থা তাতে করে ঘরভাড়া দিয়ে আর বাজারের টাকা থাকে না। তাই মাসখানেক হলো- দিনে রিকশা চালাই আর রাতে নাইটগার্ডের ডিউটি করছি। 

এদিকে রাজধানীর আজিমপুর এলাকার অনেকেই নিয়মিত সদাই করেন পলাশী বাজার থেকে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কেজিপ্রতি দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়। আলু ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি। রসুনের কেজি ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা। আদা ২৪০/২৬০ টাকা। ডিম ৫৫ টাকা হালি। পটোল ৮০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, টমেটো ১৪০ টাকা, শিম ১৬০ টাকা, বরবটি ১০০/১২০ টাকা, কচুরমুখি ১০০ টাকা, ফুলকপি ৬০/৭০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০/৬০ টাকা, ঊসি ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা কেজি, পেঁপে ৫০/৬০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, বেগুন ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেট চিকন চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা কেজি। নাজিরশাল ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা।

বাজারে কেনাকাটা করতে আসা তরিকুল ইসলাম নামে এক বেসরকারি ব্যাংক কর্মচারী বলেন, অর্থনীতির ভাষায়- কোনো জিনিসের জোগান সীমিত থাকলে তার দাম বাড়তে পারে। কিন্তু আমাদের বাজারে সকল পণ্যের জোগান পর্যাপ্ত রয়েছে। কোনো কিছুর সংকট নেই। টাকা হলে সবই পাওয়া যাচ্ছে। তবুও দাম বেড়েই চলেছে। মূলত বাজারব্যবস্থায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কারোরই কোনো সঠিক নজরদারি নেই। আর এরই সুযোগে কিছু অসাধু মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ী যেমন খুশি মুনাফা লুটছেন। একদিকে কৃষক তাদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। অপরদিকে আমরা ক্রেতারা অতিরিক্ত দাম দিয়ে পণ্য কিনছি। 

এলিফ্যান্ট রোড এলাকার হাতিরপুল বাজারও বেশ জমজমাট। সেখানেও পর্যাপ্ত সংখ্যক মানুষ কেনাকাটা করেন। বাজারটিতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও পণ্যের বাড়তি দাম নিয়ে সাধারণ মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। বাজারটিতে ১ কেজি দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা দরে। আলু ৭০ টাকা কেজি। ডিম ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা হালি। কচুরমুখি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, পেঁপে ৬০ টাকা, পটোল ৮০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকা, শিম ১৬০ টাকা, টমেটো ১৫০ টাকা, বেগুন ১০০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চাল, মাংসের মূল্য অন্যান্য বাজারের মতোই। 
মো. ফিরোজ হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, অবকাঠামো উন্নয়নের নামে দেশে অনেক বড় বড় প্রকল্পের কাজ চলছে। কিন্তু বাজারব্যবস্থার দিকে কারোর নজর নেই। সাধারণ মানুষ যে কতো কষ্টে আছে তা শুধুমাত্র বাজারে আসলেই দেখা যায়। একটি পণ্য কিনতে মানুষ অন্তত ৫টা দোকানির সঙ্গে দরকষাকষি করেন। তিনি বলেন, সিন্ডিকেটের সদস্যরা এতই ক্ষমতাধর যে সরকারও তাদের কিছু করতে পারছে না। 

তবে সোহরাব হোসেন, মোক্তার হোসেন, লিয়াকত আলী, বাচ্চু মিয়া, মো. লতিফসহ কাওরান বাজার, হাতিরপুল বাজার, রায়ের বাজারের বেশকিছু খুচরা বিক্রেতা বলেছেন, আমরা যেই দামে পাইকারি বাজার থেকে পণ্য কিনি, সেই দামের সঙ্গে পরিবহন, দোকান ভাড়াসহ বিভিন্ন খরচ যুক্ত করে বিক্রি করি। এখানে আমাদের কোনো কারসাজি নেই। তারা বলেন, আমাদেরও পরিবার-পরিজন নিয়ে বাস করতে হয়। সংসারের খরচ আছে। মানুষ এখন দুই কেজির জায়গায় আধা কেজি করে পণ্য কিনছেন। বড় মাছের দিকে কেউ হাতই বাড়াচ্ছেন না। বর্তমান বাজারে ব্যবসা করে দুই পয়সা কামাই করতে আমাদেরও ঘাম ছুটে যাচ্ছে।  

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d