Bangladesh

মামলা-গ্রেপ্তার নেই, গুপ্ত হত্যা, হামলায় নয়া আতঙ্ক

হেলমেট-মুখোশ পরে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে গুপ্ত হামলার ঘটনায় নয়া আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। গুপ্ত হামলায় এখন পর্যন্ত ৪ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকে। একই কায়দা-কৌশলে গত এক মাস ধরে দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। মাথায় হেলমেট, মুখে মুখোশ পরে নম্বর প্লেটবিহীন মাইক্রোবাস অথবা মোটরসাইকেলে রাতের অন্ধকারে এসে গুপ্ত হামলা করা হচ্ছে। 

এর বাইরে রাতের অন্ধকারে মামলার আসামি বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ, বাড়িঘর ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণের মতো ঘটনা ঘটছে। কিন্তু কোনো ঘটনায়ই থানায় অভিযোগ ও মামলা হচ্ছে না। অনেক ঘটনায় পুলিশ স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা ও তদন্ত করলেও এসব ঘটনায় এমন কিছু লক্ষ্য করা যায়নি।

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, গুপ্তহত্যা ও হামলার ঘটনায় নিরপরাধ মানুষ ভুক্তভোগী হয়। যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটায় তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন এবং কাজটি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের করতে হবে। ভুক্তভোগীরা অনেক সময় ভয় ও হয়রানির কারণে মামলা করে না। এ ক্ষেত্রে পুলিশ স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা ও তদন্ত করে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনতে পারে। 

গত ১৯শে নভেম্বর সীতাকুণ্ডের কুমিরা ইউনিয়নের যুবদল সভাপতি মো. আলমগীরের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে।

তার বাড়িতে স্ত্রী মরিয়ম বেগম ৩ সন্তান নিয়ে থাকেন। গভীর রাতে মুখোশধারী লোকজন হামলা করে। হামলার সময় ইট পাটকেল নিক্ষেপ এবং রকেট ফ্লেয়ার বিস্ফোরণ করে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। মরিয়ম বেগম জানিয়েছেন, রাত ৩টায় বিকট শব্দে ঘুম ভাঙে। জেগে দেখি একের পর এক ককটেল, ইটের টুকরা এসে ব্যালকনিতে পড়ছে। জানালা ভেঙে টুকরো খাটে এসে পড়ে। হামলায় মরিয়মের ছোট শিশু ও বৃদ্ধ শ্বশুর আহত হন। এই হামলার পর তারা থানায় মামলা বা কোনো অভিযোগ দায়ের করেননি। ৮ই নভেম্বর বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সোনালী সিএনজি স্টেশনে হামলা ও ভাঙচুর করে মুখোশধারীরা। ভোর রাতে মাইক্রোবাসে একদল মুখোশধারী হামলা চালিয়ে পালিয়ে যায়। সীতাকু- থানার নিকটবর্তী পৌর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক সামশুল আলম আজাদের বাড়িতে হামলা করা হয়েছে। সীতাকুন্ডের ঘটনা নিয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ মানবজমিনকে বলেন, গুপ্ত হামলার কোনো অভিযোগ আমার এলাকায় নেই। কেউ যদি সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ দেয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো। 

নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলাতে সবচেয়ে বেশি বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিএনপি জানিয়েছে, উপজেলার অন্তত ২৯ জন নেতাকর্মীর বাড়িতে হামলা করা হয়েছে। এসব হামলার ঘটনায় পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে জানিয়েছে বিএনপি। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা যুবদল নেতা জাহিদুর রহমান রাজনের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ আছে। গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি আত্মগোপনে আছেন। তার বাড়িতে হামলায় আঘাতের চিহ্নগুলো এখনো রয়েছে। পরিবারের দাবি মধ্যরাতে মোটরসাইকেল নিয়ে অর্ধশতাধিক লোকজন এসে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। লাঠিসোটা ও ইট নিয়ে হামলা চালায়। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব মামুদুর রহমান রিপনের বাড়িতে হামলার অভিযোগ আছে। বাড়ির প্রধান ফটকে হামলার চিহ্ন রয়েছে। প্রাচীরের উপর বাতিটিও ভাঙা রয়েছে। প্রধান ফটকের দরজাটিও খুলে নিয়ে গেছে বলেও অভিযোগ করেন রিপন। একই উপজেলা ছাত্রদল নেতা সাহেদের বাড়িতে হামলা হয়েছে। সেখানে ঘরে জানালায় ও টিনের বেড়ায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সাহেদের পিতা জানান, ককটেল ফাটিয়ে এ হামলা চালানো হয়েছে।

২৯শে অক্টোবর রাজশাহীর চিকিৎসক গোলাম কাজেম আলী চেম্বার থেকে রোগী দেখে মোটরসাইকেলযোগে বাসায় ফিরছিলেন। রাত পৌণে ১২টার দিকে একটি মাইক্রোবাস তার গতিরোধ করে। পরে মাইক্রোবাস থেকে মুখোশধারীরা নেমে ডাক্তার কাজেমের বুকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। একই রাতে পল্লী চিকিৎসক এরশাদ আলীকে তার ফার্মেসি থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরদিন সকালে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়। গত ১৮ই নভেম্বর রাত ৯টায় নওগাঁ শহরের রাজাকপুর এলাকায় বাড়ি ফেরার পথে পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি নেতা কামাল আহমেদকে মুখোশধারীরা কুপিয়ে হত্যা করে। নওগাঁয় এ ধরনের আরও ৪টি গুপ্ত আক্রমণে আহত হন স্থানীয় যুবদল ও বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসাইন, জাহিদুর রহমান এবং আবু রায়হান। গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষ থেকে এখন পর্যন্ত পাবনা, নাটোর, নওগাঁ এবং রাজশাহীতে কমপক্ষে ১৮টি গুপ্ত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলায় দু’জন বিএনপি’র এবং দু’জন জামায়াতের নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। গত এক মাসে নাটোরে ১০টি এবং রাজশাহীতে ৩টি গুপ্ত হামলার ঘটনা ঘটেছে। রাজশাহীর ৩টি হামলার ঘটনায় জামায়াতের দু’জন গুপ্ত হত্যার শিকার হয়েছেন। নওগাঁয় সবচেয়ে বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে রানীনগর উপজেলায়। রানীনগরে ৩টি, আত্রাই ও নওগাঁ সদর উপজেলায় একটি দুটি করে ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুটি মামলা হয়েছে। মামলায় কোনো আসামির নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে এখন পর্যন্ত একটি ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ই অক্টোবর থেকে ১৭ই নভেম্বর পর্যন্ত নাটোর জেলার নলডাঙ্গা উপজেলা, সিংড়া উপজেলা, সদর উপজেলা এবং লালপুর উপজেলায় মোট ১০টি চোরাগুপ্তা হামলার শিকার হয়েছেন বিএনপি’র ৩ জন, জামায়াতে ইসলামীর ৬ জন এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ১ জন।  

এদিকে, উল্টো গুপ্ত হামলার শিকার ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করছে পুলিশ। নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলায় মুখোশধারীদের গুপ্ত হামলার শিকার এক ইসলামী বক্তাকে বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে করা মামলায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার জুমার নামাজের পরপরই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। নলডাঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক আরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে করা গত ২০শে নভেম্বর মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম আবু নওশাদ নোমানী (৩৩)। তিনি নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বাঁশিলা গ্রামের ময়েজ উদ্দিনের ছেলে। গত ১৬ই অক্টোবর রাতে নলডাঙ্গা-বাঁশিলা সড়কে তিনি গুপ্ত হামলার শিকার হন। মুখোশধারীরা রড দিয়ে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দিয়ে রাস্তায় ফেলে যায়। এ ঘটনায় একটি মামলা হলেও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।

অপরাধ বিশ্লেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের  শিক্ষক তৌহিদুল হক বলেন, আমাদের দেশে নির্বাচনী প্রতিযোগিতা ক্রমান্বয়ে প্রতিহিংসা ও বিরোধপূর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। নির্বাচনী মাঠে দলের কেউ যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এবং বিরোধীদলীয় কেউ থাকলে তাকেও সরানো না গেলে হবে না। পুরো নির্বাচনী মাঠকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনার প্রতিযোগিতা চলে। যতগুলো গুপ্তহত্যা ও হামলার ঘটনা ঘটছে তার প্রেক্ষাপটগুলো একই। ব্যক্তি নিজে যদি তার সুবিধার জন্য কাউকে হত্যা, হামলা বা ভাঙচুরের মতো ঘটনা ঘটায় তাহলে অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটবে। আইনের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়লে কেউ আর আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রাখবে না। তিনি বলেন, বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও ভয়ভীতি দেখানোর মতো অগণতান্ত্রিক পরিস্থিতি বা নির্বাচনকে সামনে রেখে একটা অপসংস্কৃতির যে চর্চা শুরু হলো সেটি কোনো দল না দেশের সামগ্রিক পরিবেশকে নষ্ট করবে। 

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমিও এসব বিষয় পত্রিকার খবরের মাধ্যমে জেনেছি। সামনে নির্বাচন। এ সময় পুলিশ প্রশাসন কেন এসব বিষয় গুরুত্ব দিচ্ছে না, তদন্ত করছে না সেটি দেখার বিষয় নির্বাচন কমিশনের। কারণ কমিশন এখন পুলিশ প্রশাসনকে পরিচালিত করতে পারে। মূল বিষয় হচ্ছে বিরোধী হউক আর পক্ষের হউক সেটি কথা না। এ ধরনের ঘটনায় নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট হবে। এখন থেকে এই অবস্থা হলে ভয়ে ভোটাররা ভোট দিতে আসবে না। তাই আমি মনে করি নির্বাচন কমিশনেরও বিষয়গুলো দেখা দরকার। যেসব এলাকায় ঘটনা ঘটছে সেসব এলাকায় পুলিশ সুপার-ডিসি আছেন। তারা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে চলার কথা। আর নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়া তাদের দায়িত্ব। ভোটার যে দলেরই হউক। ভোট দেয়ার অধিকার তার আছে। যারা কোনো দল করেন না কিন্তু ভোটার এমন ব্যক্তিরাও ভয় পাবে। তিনি বলেন, পুলিশ অ্যাকশন না নিলে সরকার ও সরকারি দলের ক্ষতি হবে। দেশে-বিদেশে বদনাম হবে। 

পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন) আনোয়ার হোসেন বলেন, ঘটনা ঘটলে অবশ্যই মামলা হবে। যেখানে খুনের ঘটনা ঘটবে সেখানে মামলা হতেই হবে। কেউ না হলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে। খুনের ন্যাচার দেখে যদি মনে হয় আঘাত করে খুন করা হয়েছে সেক্ষেত্রে সরাসরি হত্যা মামলা হবে। যেক্ষেত্রে মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ থাকবে তখন একটি মামলা নিয়ে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট সংগ্রহ করে মৃত্যুর কারণ শনাক্ত করতে হবে। বিএনপি নেতাদের বাসায় হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, নেতাদের বাসায় হামলা কেন হবে? প্রতিটা ঘটনাই তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করতে হবে। প্রত্যেকটা ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য সবক’টি ইউনিটকে বলে দিয়েছি। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা যাতে কোথাও না হয়।  

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
xx1toto
bacansport
bacan4d
toto slot
situs toto