Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
Hot

মায়ের সঙ্গে গুম হয় ৯ বছরের শিশুও

কোথাও তাদের মন্তব্য দেখেছি ‘আই লাভ মাই ফ্যামিলি, বিজয় সুনিশ্চিত’। কোথাও মসজিদের মিনার আঁকার চেষ্টা হয়েছে। কোথাও মানুষের অবয়ব। এ রকম দেয়ালের দৃশ্য আমরা দেখেছি। কিছু ফোন নম্বর আমরা পেয়েছি। পুর্ণাঙ্গ না পেলেও আংশিক দেখে বোঝা গেছে, এটা কোনো মোবাইল নম্বর ছিল এভাবেই কথাগুলো বর্ণনা করছিলেন গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের এক সদস্য। গুম কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশের পর মানবজমিন-এর সঙ্গে এ সব বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলেন কমিশনের এক সদস্য। তিনি বলেন, একটি সেলে ঢোকানো মানে চূড়ান্ত পর্যায়ে এক ধরনের নির্যাতন। চার থেকে সাড়ে চার ফিট লম্বা-তিন থেকে সোয়া তিন ফিট চওড়া ঠিক মাথার কাছে বাথরুমের জন্য একটি প্যান বসানো। এ রকম একটি স্যাঁতস্যাঁতে স্থানে একজন মানুষ রাখলে দিন এবং রাতের কোনো পার্থক্য বোঝা যায় না। আলো প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই। সীমিত বাতাস প্রবেশ করলেও প্রচণ্ড গরম। এই  পরিবেশে যদি একজন মানুষকে দিন, মাস কিংবা বছরের পর বছর রাখা হয় এই নির্যাতনের চেয়ে বড় আর কী হতে পারে। সেই মানুষটি জানে না কয়দিন ধরে তিনি সেখানে আছেন। একমাত্র জানার উপায় ছিল যখন সকালের নাস্তা দেয়া হতো তা দেখে বুঝতেন একটি দিন অতিক্রম করলাম। নাস্তা হিসেবে দেয়া হতো ডিম অথবা রুটি। ৮টির মতো স্থানে গোপন সেলে প্রবেশ করে বেশ কয়েকটি স্থানে গুহা মানবের মতো দেয়ালে আঁচড় কাটা দেখেছি। কখনো হাতে নখ দিয়ে, ইটের টুকরো অথবা ভাতের থালা দিয়ে আঁচড় কাটা হয়েছে। এভাবে দিন গণনা করতেন। এছাড়া তার কাছে বিকল্প কোনো উপায় ছিল না। এভাবে কোথাও আমরা ১৮২ দিন কোথাও ৩০০ দিনেরও বেশি সময় দেখেছি। সাল হিসেবে ২০২৩, ১৭, ১৮ বা তার আগে। 

এই গোপন সেলগুলোর পাশেই রয়েছে বড় ধরনের একটি কক্ষ। যেখানে বৈদ্যুতিক ঘূর্ণায়মান চেয়ার রাখা হতো। বৈদ্যুতিক শক দেয়া হত। মানুষকে বেঁধে ওপরে ওঠানোর যন্ত্র থাকতো। ঝুলিয়ে দেয়া হতো সিলিং এর সঙ্গে। এ রকম যন্ত্রের অস্তিত্ব পেয়েছি। তারও আগে আমরা ভিক্টিমদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি যে দৃশ্য তারা বর্ণনা করেছে তার মিল পেয়েছি। আমরা অনেক প্রত্যক্ষদর্শী পেয়েছি। অনেকের জবানবন্দিতে এসেছে কীভাবে ভিক্টিমদের নদীতে পেট কেটে ফেলে দেয়া হতো। ইনজেকশন পুশ করে তাদের নিস্তেজ করা হতো। এরপর পলিথিনের ব্যাগ পেঁচিয়ে হত্যা করে পেট কেটে বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দেয়া হতো। যে নৌকায় লাশ নেয়া হতো সেই ঠিকানা আমরা পেয়েছি। পোস্তগোলা। সুন্দরবন থেকে র‌্যাব দস্যুদের কাছ থেকে নৌকাটি উদ্ধার করে পরে গুম করা লাশ গভীর নদীতে ফেলে দেয়ার কাজে ব্যবহার করা হতো। যে সময়টিতে তারা এ কাজ করতো তখন র‌্যাব’র অনেকগুলো স্পিডবোট নৌকাটিকে পাহারা দিতো যাতে সেখানো কোনো নৌকা প্রবেশ করতে না পারে। কখনো ভিকটিমদের ব্রিজের ওপর নিয়ে গুলি করে পানিতে ফেলা হতো। মৃতদেহ রেললাইনে রেখে আসা হতো যাতে বিকৃত হয়ে যায়। এবং মরদেহ শনাক্ত করতে না পারে। বন্দিদের ডেডবডি চলন্ত গাড়ির নিচে ফেলে দেয়া হতো। এই ঘটনাগুলো আমরা প্রমাণ করার মতো অবস্থায় পেয়েছি। তদন্ত চলমান থাকায় ভিকটিমদের নিরাপত্তার স্বার্থে এবং সম্ভাব্য অপরাধী যাদের আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি তারা যাতে পালাতে না পারে তাই বিস্তারিত আমরা বলতে পারছি না। আমরা এখনো অব্যাহত চেষ্টা চালাচ্ছি যাদের এখনো আমরা সন্ধান পাইনি তাদের সঙ্গে শেষ কী ঘটেছে সেটা জানার।

এখন পর্যন্ত কতজন গুম হয়েছেন তাদের প্রকৃত সংখ্যা জানতে চাইলে গুম কমিশনের এই সদস্য বলেন, আমাদের কাছে কমিশন গঠনের পর অভিযোগ করেছে ১ হাজার ৬শ’রও উপরে। আমাদের ধারণা আরও কিছু মানুষ আমাদের কাছে অভিযোগ করবেন। সব অভিযোগ আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখছি। এখনই প্রকৃত সংখ্যা বলা যাবে না। কারণ ভিকটিমদের মধ্যে ভীতি কাজ করছে। আমাদের সামনে এসে কথা বলবে- এটা ভাবতে পারছে না। তাদের ধারণা পলায়নপর স্বৈরাচার নানানভাবে তাদের ক্ষতি করতে পারে। তাদের মধ্যে আস্থার সংকট রয়েছে। দোদুল্যমানতা কাজ করছে পরিস্থিতিগত কারণে। তিনি বলেন, সারা বাংলাদেশে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত আমরা ৮-৯টি স্থানের সন্ধান পেয়েছি। এর বাইরে আরও স্থানের সন্ধান পাবো বলে আমাদের ধারণা। গুম করে রাখা স্থানগুলোতে পরিদর্শন করে দেখেছি, সামাজিক স্থান, মসজিদ, সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার আছে এমন স্থান তারা বেছে নিয়েছে। মসজিদটি ছিল সেল থেকে ৫০ গজ বাইরে। অনেকক্ষেত্রে আমার গাছ-গাছালি, বন পেয়েছি। কিন্তু প্রতিটি স্থাপনা নির্দিষ্ট করে বলা যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। বাহিনী গুলোকে শনাক্ত করা সম্ভব। বাহিনীর হেড অফিস, সিপিসি তার মধ্যেই সেলগুলো ছিল। গুম হওয়াদের বয়স প্রসঙ্গে গুম কমিশনের এই সদস্য বলেন, অল্প বয়সের ৩ থেকে ৪ জনকে পেয়েছি যারা তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে গুমঘরে ছিল। এছাড়া ২২ থেকে ৩৫-৪০ বছর পর্যন্ত সংখ্যাটা বেশি। ৯ বছরের এক শিশুকে পেয়েছি। তার মা’কে রাজধানীর একটি বাস কাউন্টার থেকে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। সেখান থেকে ভিকটিম নারীকে উঠিয়ে নেয়া হয় তখন কন্যাশিশুটি তার মায়ের সঙ্গে ছিল। মেয়েসহ ওই নারী গুম হলে পরবর্তীতে কয়েকদিন পর শিশুটিকে অপরিচিত স্থানে রাস্তায় ফেলে দেয়া হয়। 

কিন্তু শিশুটির মা এখনো ফেরত আসেনি। এখন পর্যন্ত ৭শ’ জনের ঘটনা আমরা যাচাই করেছি। এর মধ্যে এ রকম ঘটনা পেয়েছি দু’টি। বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী, কমিশনার চৌধুরী আলম, সুমনসহ অন্যদের ভাগ্যে কী ঘটেছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ঘটনাগুলো কাদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে এটা আমরা মোটামুটি সিদ্ধান্ত পর্যায়ে আছি। নিখোঁজ এই নেতাকর্মীদের ভাগ্যে কী ঘটেছে এটা আমরা তখন জানতে পারবো- যাদের আমরা চিহ্নিত করেছি তাদের সঙ্গে কথা বলার মধ্যে দিয়ে। গুমের সঙ্গে র‌্যাব, ডিবি’র সিটিটিসি, ডিজিএফআই’র সম্পৃক্ততা পেয়েছি। প্রথমত, যেই ভিকটিমকে উঠিয়ে নেয়া হলো তার পক্ষে শনাক্ত করা খুব কঠিন কোন বাহিনী তাকে উঠিয়ে নিয়েছে। এটা ভিক্টিম-প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা, কোর্ট বয়ানের সঙ্গে মিলছে ও মামলার বাদীর ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। যেমন র‌্যাব-২ এর গাড়ি দেখা গেছে। র‌্যাব-১ এর গাড়ি দেখা গেছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৬-৭ তারিখ এরপর ৬ থেকে ৭ জনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জেনেছি। এবং তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। গুম কমিশনের কাজ করতে গিয়ে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে কি না? তিনি জানান, এখন পর্যন্ত আমরা কোনো বাধার মুখোমুখি হইনি। কিন্তু অসহযোগিতা পেয়েছি। ইনডাইরেক্টলি মিসগাইড করা হয়েছে। গোপন যে সেলগুলো আমরা পেয়েছি কোনোটাই কিন্তু তারা আমাদের দেখিয়ে দেয়নি। আমাদের এগুলো চিহ্নিত করে বের করতে হয়েছে। যেটা খুব কষ্টসাধ্য এবং দুঃসাধ্য ছিল। ভিকটিমকে চোখবাঁধা অবস্থায় হাঁটিয়ে কখনো ডানে কখনো বাঁয়ে নিয়েছে। ডানকে বাম বলেছে। কখনো বাঁশের রাস্তাকে সিঁড়ি বলেছে। এ বিষয়ে মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, মানবাধিকারকর্মী হিসেবে গত ১৫ থেকে ১৬ বছরেরও বেশি সময় আমি কাজ করছি। গুম সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করছি প্রায় ১৪ বছর ধরে। যে সকল ভিক্টিম গুম থেকে ফিরে এসেছেন তাদের সঙ্গে কথা বলে যে বয়ান আমরা পেয়েছি শুধু লোমহর্ষক নয়। বর্বরতার সমস্ত সীমা লঙ্ঘন করেছে। দ্বিতীয়, একটি দেশের সংবিধান বলছে ‘কোনোভাবে রাষ্ট্র নিপীড়নমূলক কাজ করবে না। কিন্তু সেই রাষ্ট্রই তার বাহিনীগুলোকে গোপন সেল তৈরির অনুমতি দিয়েছে- সেটি কল্পনাতীত।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacantoto4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d toto
slot toto
bacan4d
bacan4d
togel online
Toto Slot
saraslot88
Bacan4d Login
bacantoto
Bacan4d Login
bacan4d
bacan4drtp
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot maxwin
slot bacan4d
slot maxwin
bacan4d togel
bacan4d login
bacan4d login
bacan4d login
bacantoto 4d
slot gacor
bacansport
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot77 gacor
JAVHD
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
gacor slot
slot gacor777
slot gacor bacan4d
bacan4d
bacansport
toto gacor
bacan4d
bacansports login
slot maxwin
slot dana
slot gacor
slot dana
slot gacor
bacansports
bacansport
bacansport
bacansport
bawan4d
bacansports
bacansport
slot gacor
judi bola
slot maxwin
slot maxwin
bacansport
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot demo
slot gacor
slot gacor
slot gacor
toto slot
slot gacor
demo slot gacor
slot maxwin
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot toto