মারমুখী রাজনীতি গণতন্ত্রকে ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে : টিআইবি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলেছে, তফসিল ঘোষণার আগে ও পরে দৃশ্যমান সব নির্দেশক অনুযায়ী অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের সম্ভাবনা প্রায় নির্মূল হয়ে গেছে।
গতকাল রবিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংস্থাটি আরো জানিয়েছে, একদিকে নির্বাচন কমিশন দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ, অন্যদিকে পূর্বনির্ধারিত ফর্মুলায় ক্ষমতায় যাওয়া বা আঁকড়ে থাকার পরস্পর বিপরীতমুখী অবস্থানে অনড়, সহিংস ও অস্থিতিশীল রাজনীতিতে হেরে যাচ্ছে দেশের মানুষ। এতে অগণতান্ত্রিক শক্তির বিকাশের ঝুঁকিও বাড়ছে।
টিআইবি বলছে, নির্বাচনকালীন সরকারের নিরপেক্ষ ও স্বার্থের সংঘাতমুক্ত ভূমিকা নিশ্চিত করতে যথাযথ পরিবেশ তৈরির জন্য নির্বাচন কমিশন তার নিজস্ব নির্বাচনী কৌশলপত্র অনুযায়ী কোনো উদ্যোগ নেয়নি। নিরপেক্ষ, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব—এই মর্মে রাজনৈতিক দল ও সাধারণ ভোটারদের আস্থা অর্জনে কমিশন কার্যকর পদক্ষেপের উদাহরণ দেখাতে পারেনি। দায়সারাভাবে আলোচনার আহ্বান জানিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। নিয়ম রক্ষার নামে বাস্তবে প্রতিযোগিতাহীন একতরফা নির্বাচনের এজেন্ডার সহায়ক ভূমিকায় লিপ্ত রয়েছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘গত এক মাসে প্রায় ২০০টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে, ট্রেনেও আগুন দেওয়া হয়েছে। আমরা জানি না, গণপরিবহনে আগুন দিয়ে কিভাবে গণতন্ত্র হয়। আবার এই নাশকতার দায় নিয়েও পাল্টাপাল্টি রাজনীতি হচ্ছে। এই আত্মঘাতী রাজনীতি থেকে আমরা কবে বেরিয়ে আসতে পারব?’
সব সহিংসতার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আপরাধের বিচারকে ভিন্নমত ও প্রতিপক্ষ দমনের হাতিয়ার বানানোর সুযোগ নেই। অথচ তাই হচ্ছে। মৃত মানুষ, প্রবাসী ব্যক্তির নামে মামলা হচ্ছে। যাঁদের নামে মামলা হচ্ছে তাঁদের না পাওয়া গেলে পরিবারের সদস্যদের আটক করা হচ্ছে।’
মারমুখী রাজনীতি গণতন্ত্রকেই ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে—এমন মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলছেন, ‘সহিংস রাজনীতিকে উপলক্ষ বানিয়ে অগণতান্ত্রিক শক্তির উত্থানের আশঙ্কা অমূলক নয়। রাজনৈতিক দল ও নেতাকর্মী, নির্বাচন কমিশন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, প্রশাসনসহ সব অংশীজনকে এই বাস্তবতা উপলব্ধি করে শান্তি ও সমঝোতার পথ অবলম্বনের আহ্বান জানাই।
দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থে সব পক্ষকে আমরা আহ্বান জানাই, এবার গণতন্ত্রকে সুযোগ দিন, জনস্বার্থকে প্রাধান্য দিন, জনগণকে সুযোগ দিন।’
বিবৃতিতে বলা হয়, নিয়ম রক্ষার নামে একতরফা নির্বাচন ক্ষমতা নিশ্চিত করতে পারে, গণতন্ত্র, জনগণের আস্থা ও ভোটাধিকার নয়। একইভাবে সহিংসতা গণতান্ত্রিক উদ্দেশ্য অর্জনের পথ হতে পারে না। দেশের মানুষকে জিম্মি করে ক্ষমতার রাজনীতি থেকে সরে আসতে হবে।