মার্কিন এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্রে রাশিয়ায় ইউক্রেনের হামলা : প্রতিশোধের হুঙ্কার মস্কোর
রাশিয়ার অভিযান শুরুর আগে ইউক্রেনে ‘নীরবে’ অস্ত্র সরবরাহ করে যুক্তরাষ্ট্র -ব্লিঙ্কেন
গত তিন বছর ধরে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যে যুদ্ধ চলছে তা ভয়ানক মোড় নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। শনিবার ইউক্রেন থেকে রাশিয়া লক্ষ্য করে বিপুল সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করা হয়। ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের বৃষ্টির পর রাশিয়া এই ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছে এবং প্রতিশোধ নেওয়ার কথা বলেছে। রাশিয়া দাবি করেছে যে ইউক্রেন থেকে তার ভূখ-ের দিকে আটটি আমেরিকান এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছিল, যা আকাশে গুলি করে ধ্বংস করা হয়। রাশিয়া তার ভূখ-ে ইউক্রেনের ড্রোন ধ্বংস করার কথাও বলেছে।
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে রাশিয়া। এই বর্ধিত উত্তেজনার কারণে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের পুলকোভো বিমানবন্দরে বিমান চলাচলও ব্যাহত হয়েছে। এখানে কিছু সময়ের জন্য ফ্লাইট বন্ধ রাখতে হয়েছিল। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও দাবি করেছে যে, তাদের বাহিনী পূর্ব ইউক্রেনের লুহানস্ক অঞ্চলের নাদিয়া গ্রাম দখল করেছে। লেনিনগ্রাদের গভর্নর আলেকজান্ডার ড্রোজডেনকো জানিয়েছেন যে শনিবার রাতে এবং রোববার সকালে ধ্বংস হওয়া ড্রোনের সংখ্যা রেকর্ড-ব্রেকিং ছিল। এই উন্নয়ন ইউক্রেন যুদ্ধের একটি নতুন এবং বিপজ্জনক মোড় নির্দেশ করে।
পশ্চিমী দেশগুলোর সমর্থন পাওয়া ইউক্রেনের এসব পদক্ষেপের জবাব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। রাশিয়া এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে যুদ্ধের একটি বড় টার্নিং পয়েন্ট বলে মনে করে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও এ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আমেরিকার কাছ থেকে এ ক্ষেপণাস্ত্র পেয়েছে ইউক্রেন। কিছু আগে আমেরিকার বাইডেন প্রশাসন ইউক্রেনকে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল, তারপরে ইউক্রেন এটি যুদ্ধক্ষেত্রে চালু করেছে।
আমেরিকান ক্ষেপণাস্ত্র এটিএসিএমএস এমজিএম-১৪০ আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম নামে পরিচিত। এটি একটি দূরপাল্লার সুপারসনিক কৌশলগত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। ১৩ ফুট লম্বা এই আমেরিকান মিসাইলের রেঞ্জ ৩০০ কিমি। ইউক্রেন এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করলে রাশিয়া যুদ্ধে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘ওরেশিঙ্কৎ’ ব্যবহার করবে বলে হুমকি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
রামিয়ার বিবৃতিতে বলা হয়, শুক্রবার ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এটিএসিএমএস অপারেশনাল-ট্যাকটিকাল মিসাইল দিয়ে বেলগোরদ অঞ্চলে হামলা চালানোর চেষ্টা করে। রাশিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আটটি মিসাইল ধ্বংস করে। কোন সময় বা কোথায় এ ঘটনা ঘটেছে তা বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়নি। পশ্চিমা সহযোগীদের সমর্থনে কিয়েভের এ পদক্ষেপের জবাব দেওয়া হবে বলেও হুশিয়ারি দেওয়া হয়। ইউক্রেন এখনও এই অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
গত মাসে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনকে এই অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার সমালোচনা করেন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এর আগে সতর্ক করে বলেছিলেন, ইউক্রেন পশ্চিমা অস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার ভূখ-ে হামলা চালালে মস্কো হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক মিসাইল দিয়ে কিয়েভে হামলা চালাবে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের প্রথম তিন দিনে রাশিয়া ইউক্রেনের লক্ষ্যবস্তুতে ৩০০টি ড্রোন এবং ২০টি মিসাইল হামলা চালিয়েছে। কিয়েভের বাহিনী এর একটি বড় অংশ ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
রাশিয়ার অভিযান শুরুর আগে ইউক্রেনে ‘নিরবে’ অস্ত্র সরবরাহ করে যুক্তরাষ্ট্র -ব্লিঙ্কেন : মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, রাশিয়া তার বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করার আগেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ শুরু করেছিল। গত শনিবার প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করেছিলাম যে, [বিশেষ সামরিক অভিযান] হওয়ার আগে, সেপ্টেম্বরে শুরু হয়ে আবার ডিসেম্বরে আমরা নীরবে ইউক্রেনের কাছে স্টিংগার, জ্যাভলিনের মতো প্রচুর অস্ত্র পেয়েছি’।
রাশিয়া বারবার বলেছে যে, ইউক্রেনে অস্ত্রের ফানেলিং মস্কোর সংকল্পকে হ্রাস করবে না বা বিশেষ সামরিক অভিযানের গতিপথ পরিবর্তন করবে না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ নেওয়ার পরে কিয়েভের জন্য সমর্থন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করার প্রতিশ্রুতি পূরণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এমআই-২৮এনএম হেলিকপ্টার কুরস্ক সীমান্ত এলাকায় ইউক্রেনীয় সৈন্যদের ঘূর্ণনকে বাধা দেয় : এদিকে রাশিয়ান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, এমআই-২৮এনএম হেলিকপ্টারের ক্রুরা কুরস্ক অঞ্চলের সীমান্ত এলাকায় বিমান ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে শত্রুর সাঁজোয়া যান ধ্বংস করে ইউক্রেনীয় সেনাদের ঘূর্ণনকে ব্যর্থ করেছে। মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘একটি মিশ্র কৌশলগত গোষ্ঠীর অংশ হিসাবে এমআই-২৮এনএম হেলিকপ্টারগুলিতে সেনা বিমান চলাচলের ক্রুরা কুরস্ক অঞ্চলের সীমান্ত অঞ্চলে ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীর ইউনিটগুলির ঘূর্ণনকে ব্যাহত করেছে’। মন্ত্রণালয় উল্লেখ করেছে যে, স্থল বাহিনীকে সমর্থন করার জন্য যুদ্ধ মিশনের সময়, সেনাবাহিনীর বিমানচালকরা বিমান নিয়ন্ত্রকের স্থানাঙ্কে ক্ষেপণাস্ত্র চালায় এবং ইউক্রেনীয় সেনাদের সাঁজোয়া যান এবং কর্মীদের ধ্বংস করে।