মার্কিন ডলারের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে বিশ্ব!

ডলার এখনো বিশ্ব অর্থনীতির কেন্দ্রে থাকলেও ট্রাম্পের নীতিগত অনিশ্চয়তা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা হারানোয় এর একক আধিপত্য চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২ এপ্রিল ঘোষিত ‘মুক্তি দিবস‘ শুল্ক নীতির পর বিশ্ব অর্থবাজারে যে চাঞ্চল্য তৈরি হয়, তার পরিণতিতে মার্কিন ডলারের দরপতন শুরু হয়। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে কিছুটা পুনরুদ্ধার হয়েছে, তথাপি ডলার তার নিম্নমুখী ধারা ধরে রেখেছে। এটি সাধারণত অর্থনৈতিক অস্থিরতার সময় দেখা যায় না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের আগ্রাসী বাণিজ্যনীতি মার্কিন অর্থনীতিকে সম্ভাব্য মন্দার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই অনিশ্চয়তা বিদেশী বিনিয়োগকারীদের ডলারের প্রতি আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে। ডয়চে ব্যাংক ডলারের সামনে ‘আস্থা সঙ্কট’ দেখছে, যা ট্রাম্পের নীতির প্রতিক্রিয়ায় আরো ঘনীভূত হচ্ছে।
৮০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মার্কিন ডলার ছিল বিশ্ব অর্থনীতির কেন্দ্রীয় মুদ্রা। রিজার্ভ, বাণিজ্য ও ঋণ ব্যবস্থায় এর প্রধান্য অটুট ছিল। ২০২৩ সালের হিসেব অনুযায়ী, বৈশ্বিক রফতানির ৫৪ শতাংশ, আন্তর্জাতিক বন্ডের ৭০ শতাংশ এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ৫৭ শতাংশ ডলারে ছিল।
কিন্তু ‘মুক্তি দিবস’-এর পর এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক থেকে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার মুছে গেছে। ট্রেজারির চাহিদা কমে গেছে এবং বিনিয়োগকারীরা মার্কিন সম্পদ বিক্রি শুরু করেছে। এপ্রিল মাসেই ডলারের মান ৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যা ২০২৫ সালের শুরু থেকে ১০ শতাংশের মতো কমেছে।
বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের কাছে প্রায় ১৯ ট্রিলিয়ন ডলারের মার্কিন ইক্যুইটি, ৭ ট্রিলিয়ন ট্রেজারি এবং ৫ ট্রিলিয়ন কর্পোরেট বন্ড রয়েছে। এই আস্থাহীনতা স্থায়ী হলে ডলারের উপর দীর্ঘমেয়াদে চাপ তৈরি হবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের যুক্তি হলো, ডলারের অতিমূল্যায়ন আমেরিকান রফতানিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই রফতানি সক্ষমতা ফেরাতে ডলারের কিছুটা অবমূল্যায়ন দরকার। কিন্তু অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করছেন, এতে আমদানি খরচ ও মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে পারে এবং ভোক্তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
অন্যদিকে, স্বর্ণের প্রতি আগ্রহ ও ইউরোর দাম বৃদ্ধি এ দু’টি ইঙ্গিত দেয় যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিনিয়োগকারীরা ডলারের পরিবর্তে বিকল্প খুঁজছে। ইউরো বর্তমানে রিজার্ভ মুদ্রার ২০ শতাংশ দখল করে রেখেছে এবং বিশেষজ্ঞদের মতে, ইইউ আর্থিক ঐক্য জোরদার করলে ইউরো হতে পারে ডলারের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী।
সবমিলিয়ে, ডলার এখনো বিশ্ব অর্থনীতির কেন্দ্রে থাকলেও ট্রাম্পের নীতিগত অনিশ্চয়তা এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা হারানোর কারণে এটি একটি নতুন যুগে প্রবেশ করছে। যেখানে তার একক আধিপত্য চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। ফলে মার্কিন ডলার আস্থার সঙ্কটে রয়েছে।