Uncategorized

মার্কিন দূতাবাসের মামলা: দক্ষিণ আমেরিকার জঙ্গল দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মানব পাচারে বাংলাদেশি চক্র

‘ব্রাজিল থেকে কখনো গাড়িতে, কখনো জঙ্গল দিয়ে দিনের পর দিন হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় পানামায়। কখনো টানা দশ ঘণ্টা হাঁটানো হয়। জঙ্গলে পানির সংকট, পোকামাকড়ের কামড়ে শরীর ফুলে গিয়েছিল আমার। পেছনে ফেরার কোনো রাস্তা ছিল না,’ এই বর্ণনা দিয়েছেন অবৈধ পথে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে দেশে ফেরত আসা মোফাজ্জল হোসেন। তাঁর মতো অনেক বাংলাদেশি যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার স্বপ্নে মানব পাচারের শিকার হচ্ছেন।

এভাবে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে দেশ ছাড়া অর্ধশতাধিক বাংলাদেশি দক্ষিণ আমেরিকার দেশ গায়ানায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর বাংলাদেশের একটি মানব পাচার চক্রের সন্ধান পান মার্কিন কর্মকর্তারা। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস এ ঘটনায় গত জুন মাসে গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের করে। ওই মামলার তদন্ত করে রাজধানীর পল্টন এলাকার একটি ট্রাভেল এজেন্সির মালিক মোহাম্মদ রুহুল আমিন এবং আকলিমা আক্তার (বিউটি) নামে তাঁর এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মামলাটি তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ। পুলিশের এই বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) তারেক আহমেদ বলেন, ‘বিপুল অঙ্কের অর্থ নিয়ে সংঘবদ্ধ মানব পাচার চক্রটি দীর্ঘদিন থেকে বহু বাংলাদেশি নাগরিককে অবৈধ পথে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে সাহায্য করে আসছে। আমরা কেবল দুজনকে গ্রেপ্তার করেছি। এই চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’ ডিবির পক্ষ থেকে লিখিতভাবে আদালতকে জানানো হয়েছে, রুহুল আমিনসহ চক্রের সদস্যরা ১০০ জনের বেশি নাগরিককে ইতিমধ্যে গায়ানা ও সুরিনামে নিয়েছে।

নেওয়া হয় ভ্রমণ ও ব্যবসায়ী ভিসায়
মামলার তদন্ত–সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রতারক চক্রের সদস্যরা লোকজনকে যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বড় অঙ্কের টাকা নেন। এরপর প্রথমে তাঁদের নিয়ে যান ভারতের নয়াদিল্লিতে। সেখান থেকে ভ্রমণ ও ব্যবসায়ী ভিসায় নেওয়া হয় তুরস্কের ইস্তাম্বুলে। পরে নতুন বোর্ডিং পাস ও নতুন টিকিটে তাঁদের কোপা ও ক্যারিবিয়ান এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে করে নেওয়া হয় গায়ানা ও সুরিনামে। সেখান থেকে মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করান।

অবৈধ পথে গায়ানায় প্রবেশের অভিযোগে গত ১২ থেকে ১৭ মার্চের মধ্যে ৫০ জনের বেশি বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করে দেশটির রাজধানী জর্জ টাউনের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। এর সূত্র ধরে রুহুল আমিন, আকলিমা ও ফাহাদ হোসেন নামের তিনজনকে আসামি করে মামলাটি করে মার্কিন দূতাবাস। এই চক্রের সঙ্গে জড়িত আরিফ ও সনেট নামে আরও দুজনের খোঁজ পাওয়া গেছে বলে তদন্ত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।

রুহুল আমিনকে গ্রেপ্তার করা হয় গত ১০ জুলাই। তাঁর জাপান ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের কার্যালয় থেকে একটি হার্ডডিস্ক জব্দ করা হয়। রুহুলের বিরুদ্ধে ২০২১ সালে যাত্রাবাড়ী থানায় আরও একটি মানব পাচারের মামলা রয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে রুহুলের আইনজীবী মোহাম্মদ জুয়েল বলেন, তাঁর মক্কেল মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত নন। তিনি কোনো বাংলাদেশিকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাননি। তবে গায়ানায় বৈধভাবে লোক পাঠিয়েছেন।

ভয়ংকর পথে যুক্তরাষ্ট্র যাত্রা
কুমিল্লার যুবক মোফাজ্জল হোসেনের স্বপ্ন ছিল, যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে জীবন বদলে ফেলবেন। এ জন্য শহীদুল্লাহ মজুমদার নামে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী দূরসম্পর্কের এক আত্মীয়ের সঙ্গে ৪০ লাখ টাকার মৌখিক চুক্তি করেছিলেন। কিন্তু মোফাজ্জল মানব পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়ে অবর্ণনীয় কষ্ট ভোগ করে আবার দেশে ফিরে এসেছেন। এ ঘটনায় গত ৫ জুলাই রাজধানীর শাহজাহানপুর থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ আইনে একটি মামলা করেছেন তিনি।

মামলার কাগজপত্র ও মোফাজ্জলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, পাঁচ বছর আগে (২০১৮ সালের ১০ মার্চ) যশোর সীমান্ত দিয়ে প্রথমে তাঁকে ভারতে নেওয়া হয়। পরে উড়োজাহাজে করে তাঁকে নেওয়া হয় আফ্রিকার দেশ কেনিয়ায়। সেখান থেকে আরেক ফ্লাইটে ইথিওপিয়া হয়ে নেওয়া হয় ব্রাজিলে। পরে ব্রাজিল সীমান্ত পার করে তাঁকে নেওয়া হয় পেরু। পেরু থেকে কলম্বিয়া হয়ে তিনি পৌঁছান পানামায়। পরে পানামা থেকে কোস্টারিকা, নিকারাগুয়া, হন্ডুরাস, গুয়াতেমালা হয়ে মোফাজ্জল পৌঁছান মেক্সিকোয়। মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে তাঁকে পাচার করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে।

বৈধ কাগজপত্র না থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন মোফাজ্জল। যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত তাঁকে পাঁচ বছরের জন্য দেশটিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়। মোফাজ্জল হোসেন বলেন, চার মাসের যাত্রায় যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছিলেন তিনি। ব্রাজিলের দুর্গম জঙ্গল পাড়ি দেওয়ার ঘটনা মনে পড়লে এখনো তাঁর গা শিউরে ওঠে। এমনও দিন গেছে সারা দিন কিছু না খেয়ে হাঁটতে হয়েছে। সে জীবনের এক ভয়ানক অভিজ্ঞতা।

যুক্তরাষ্ট্রে এভাবে যাঁরা মানব পাচার করছেন, তাঁদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে কাজ চলছে বলে মার্কিন দূতাবাসের মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ও ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ফজলুর রহমান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, গ্রেপ্তার রুহুল আমিন ও আকলিমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে চক্রের কয়েকজন সদস্যের নাম জানা গেছে। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto