USA

মার্কিন নাগরিকত্ব পেতে যাচ্ছেন ৫ লাখ অবৈধ অভিবাসী

যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাস করা কয়েক হাজার অভিবাসীকে নাগরিকত্ব দিতে একটি নতুন উদ্যোগের কথা ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এই উদ্যোগের আওতায় মার্কিন নাগরিককে বিয়ে করেছেন এমন প্রায় পাঁচ লাখ অভিবাসীকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।

যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের বছরে বাইডেনের পদক্ষেপ রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের গণনির্বাসন পরিকল্পনার ঘোর বিপরীত।

হোয়াইট হাউসের একটি ইভেন্টে বাইডেন যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে অভিবাসী পরিবারগুলোকে আলাদা করা এবং অবৈধ অভিবাসীদের সম্পর্কে উসকানিমূলক ভাষা ব্যবহার করার জন্য ট্রাম্পের সমালোচনা করেন।

বাইডেন বলেন, ‘আমি সীমান্ত বা অভিবাসন নিয়ে রাজনীতি করতে আগ্রহী নই। আমি এটা ঠিক করতে আগ্রহী।’

গতকাল মঙ্গলবার দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, বাইডেনের নতুন এই পদক্ষেপে প্রায় পাঁচ লাখ অভিবাসী নাগরিকত্ব পাবেন। এ জন্য একজন অভিবাসীর গত ১৭ জুন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের ১০ বছর পূর্ণ হতে হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের একজন নাগরিকের সঙ্গে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হতে হবে। মার্কিন নাগরিকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ মা-বাবার ২১ বছর বয়সের কম বয়সী প্রায় ৫০ হাজার অনাগরিক শিশুও একইভাবে নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ পাবেন।

এই যোগ্যতার ভিত্তিতে অভিবাসীর আবেদন অনুমোদিত হলে তিনি গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদন করতে তিন বছর সময় এবং একটি অস্থায়ী ‘ওয়ার্ক পারমিট’ বা কাজের অনুমতি পাবেন। তা ছাড়া এর মধ্যে তিনি নির্বাসন থেকে রেহাইও পাবেন।

বাইডেন আগামী ৫ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দল থেকে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রার্থী হচ্ছেন—সেটা অনেকটা নিশ্চিত। তিনি ট্রাম্পের অনেক বিধিনিষেধমূলক অভিবাসন নীতি বদলানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চান। তবে চলতি মাসের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত অতিক্রমকারী অধিকাংশ অভিবাসীকে আশ্রয়ে বাধা দেন। ক্ষমতায় থাকাকালে ট্রাম্প যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন, চলতি মাসে সেই নিষেধাজ্ঞারই প্রতিফলন ঘটিয়েছেন বাইডেন। এ কারণে অভিবাসন আইনজীবী ও বেশ কিছু ডেমোক্র্যাটের সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।

ধারণা করা হচ্ছে, মার্কিন নাগরিকদের অভিবাসী স্বামী বা স্ত্রীদের জন্য বাইডেনের নতুন এই কর্মসূচি তাঁর নির্বাচনী প্রচারের বার্তাকে শক্তিশালী করতে পারে। তিনি বার্তা দিতে চান, তিনি মানবিক অভিবাসনব্যবস্থাকে সমর্থন করেন এবং এদিক থেকে তিনি ট্রাম্পের চেয়ে আলাদা। কারণ, ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে বৈধ ও অবৈধ অভিবাসন উভয় বিষয়ে কঠোর অবস্থানে আছেন।

তবে বাইডেনের এই কর্মসূচি আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। টেক্সাসের গভর্নর রিপাবলিকান গ্রেগ অ্যাবট রাজ্য অভিবাসন নীতি নিয়ে আদালতে বাইডেনের বিরুদ্ধে মামলা চালিয়ে যাচ্ছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, নতুন এই উদ্যোগ ‘স্পষ্টভাবে বেআইনি’ এবং ‘ভোটের ক্ষেত্রে তা অপরাধ’।

যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার পথ সহজ করেছে। যাঁরা মার্কিনিদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ এবং ভিসা নিয়ে বৈধভাবে এই দেশে এসেছেন, তাঁদের জন্য নাগরিকত্ব পাওয়া সহজ।

নতুন এই উদ্যোগে স্বামী, স্ত্রী ও তাঁদের সন্তানদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের না হয়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আবেদনের সুযোগ দেবে। এই উদ্যোগ দীর্ঘসূত্রতা ও পারিবারিক বিচ্ছেদ দূর করবে। আগামী মাসগুলোতে এই কর্মসূচি চালু হতে পারে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মেক্সিকোর নাগরিকেরা বেশি সুবিধা পাবেন। তবে স্থায়ীভাবে থাকার অনুমতি পেতে ঠিক কত দিন লাগতে পারে, এখনো স্পষ্টভাবে জানা যায়নি।

স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদন মঞ্জুর হওয়ার পর তাঁরা মার্কিন নাগরিকত্ব চেয়ে আবেদন করতে পারবেন। জনসাধারণের নিরাপত্তার হুমকি বা যাদের অপরাধমূলক ইতিহাস আছে, তাঁরা এ ক্ষেত্রে অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button