মার্কিন নির্বাচনে নাক গলাচ্ছে ব্রিটেন, অভিযোগ ট্রাম্পের
আগামী ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তবে এর মধ্যেই বন্ধু দেশ ব্রিটেনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও আসন্ন নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তার অভিযোগ, ব্রিটেনের বর্তমান শাসক দল লেবার পার্টি আমেরিকার নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করছে। ট্রাম্পের দাবি, লেবার পার্টির কর্মী-সমর্থকেরা ব্রিটেন থেকে আমেরিকায় গিয়ে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে ভোট দেওয়ার জন্য ভোটারদের প্রভাবিত করছেন। যদিও অন্য দেশের নির্বাচনে নাক গলানোর অভিযোগ নাকচ করেছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার।
বিষয়টি নিয়ে ট্রাম্প এবং তার প্রচার দলের সদস্যেরা ওয়াশিংটনে আমেরিকার কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন। সেখানে সরকারিভাবে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘অবৈধ বিদেশি সহায়তার’ অভিযোগ জানানো হয়েছে। ট্রাম্প বলছেন, আমেরিকার মাটিতে দাঁড়িয়ে সে দেশের জাতীয় স্বার্থ-বিরোধী কাজ করছেন ব্রিটেনের শাসক দলের সমর্থকেরা। এ নিয়ে তদন্তের দাবিও করেছেন ট্রাম্প।
বিতর্কের সূত্রপাত লিঙ্কডইন নামে সামাজিকমাধ্যমের একটি প্ল্যাটফর্মের পোস্ট নিয়ে। লেবার পার্টির ‘হেড অব অপারেশনস’ সোফিয়া পটেল কিছুদিন আগে একটা পোস্ট করেছিলেন। যেখানে তিনি লেখেন, ভোটের আগে বর্তমান এবং সাবেক মিলিয়ে কমপক্ষে ১০০ লেবার কর্মী-সমর্থক আমেরিকায় যাচ্ছেন। আরও অন্তত ১০ লেবার সমর্থক বা কর্মী ব্রিটেন থেকে নর্থ ক্যারোলাইনায় যেতে পারেন। যারা যেতে ইচ্ছুক তারা যেন তার সঙ্গে অবিলম্বে যোগাযোগ করেন বলে পোস্টে লিখেছিলেন সোফিয়া।
ওই পোস্টের উদাহরণ সামনে এনেই ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, হ্যারিসের হয়ে প্রচার চালাতেই লেবার পার্টির ওই সমর্থকেরা আমেরিকায় যাচ্ছেন।
দলীয় সমর্থকদের যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তথা লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমার। কিন্তু সেই সঙ্গেই আমেরিকার নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।
স্টারমারের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনি রীতি মেনেই প্রতিবার ভোটের সময়ে তাদের দলের কিছু স্বেচ্ছাসেবক যুক্তরাষ্ট্রে যান। লিফলেট বিলি, দরজায় দরজায় গিয়ে ভোটারদের সচেতন করাই তাদের কাজ। এর বিনিময়ে কোনো দলের পক্ষ থেকে বিপুল অর্থ বা কোনো উপহার তারা পান না।
তিনি বলেছেন, শুধুমাত্র রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়াতেই এই কাজ করে থাকেন লেবার সমর্থকেরা। নিজেদের খরচেই যুক্তরাষ্ট্রে সফর করেন তারা। তাদের সেখানে থাকার ব্যবস্থা অনেক ক্ষেত্রে দল করে দেয়। এর বেশি কিছুই নয়।
ব্রিটেনের পরিবেশমন্ত্রী স্টিভ রিড-ও এক বিবৃতিতে স্পষ্ট জানিয়েছেন, লেবার পার্টির কোনো কর্মী বা সমর্থকের এই যুক্তরাষ্ট্র সফরের খরচ সরকার বা দল জোগায় না। প্রত্যেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে সেখানে যান।
ট্রাম্পের প্রচার দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, মুখে স্বেচ্ছাসেবকদের কথা বললেও লেবার পার্টির উচ্চপদস্থ নেতারা ডেমোক্র্যাটদের জাতীয় কনভেনশনে গিয়ে কমলার প্রতি তাদের সমর্থনের কথা জানিয়ে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চিফ অব স্টাফ মরগ্যান ম্যাকসুইনি এবং ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের যোগাযোগ সংক্রান্ত বিভাগের প্রধান ম্যাথু ডয়েলের নাম নির্বাচন কমিশনের কাছে জানিয়েছে ট্রাম্পের প্রচার দল।
ব্রিটিশ সরকার অবশ্য জানিয়েছে, তারা শিকাগোর ওই কনভেনশনে নিজেদের খরচে স্বেচ্ছায় গিয়েছিলেন, ডেমোক্র্যাটিক পার্টি তাদের সফর-খরচ বহন করেনি।
ব্রিটেনের বেশ কিছু রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞের মতে, প্রচারের শেষ সময়ে বাজিমাত করতে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনছেন ট্রাম্প। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন লেবার পার্টিকে ‘অতি বাম’ আখ্যা দিয়ে বহু বার আক্রমণ শানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন কমিশনের নিয়ম মেনে লেবার পার্টির স্বেচ্ছাসেবকেরা যা করছেন, তা নিয়েও অভিযোগ এনেছেন তিনি।
স্টারমার অবশ্য ট্রাম্পের সঙ্গে তার সুসম্পর্কের কথাই বলছেন। ভোটে জিতে ট্রাম্প ফের ক্ষমতায় এলে দু’দেশের সম্পর্কে এর প্রভাব পড়বে না বলেই মত তার। গত মাসে ট্রাম্পের সঙ্গে নিউইয়র্কে দেখা হয়েছিল তার।
স্টার্মারের কথায়, আমাদের মধ্যে গঠনমূলক বিষয় নিয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছিল। আর ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমার দায়িত্ব তার সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রেখে চলা, যাকে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ খুব শীঘ্রই নির্বাচিত করতে চলেছেন।