মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফাঁদে বিমানের ঢাকা-রোম ফ্লাইট
ঢাকা-রোম ফ্লাইট পুনরায় চালুর সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। কিন্তু জটিলতা তৈরি হয়েছে ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে। সেই নিষেধাজ্ঞার পরোক্ষ প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের ওপর। বিশেষ করে ঢাকা-রোম রুটে ফ্লাইট পরিচালনায় নানাবিধ সমস্যার মুখে পড়ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৫ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া ঢাকা-রোম (পূর্বে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে বিমান) রুটে ফের ফ্লাইট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিমান কতৃপক্ষ। কিন্তু নির্ধারিত রুটে নির্বিঘ্নে ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারবে না বিমান। কারণ সেই রুটে ইরানের আকাশসীমা রয়েছে। যা ব্যবহারে বন্ধুরাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিধি-নিষেধ রয়েছে। নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের পরিবর্তে তিনটি দেশের আকাশ ব্যবহার করে ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারবে বাংলাদেশ বিমান। তবে এতে ব্যয় এবং যাত্রার সময় বাড়বে। বাড়তি জ্বালানির প্রয়োজন হবে এবং একটির পরিবর্তে তিনটি দেশকে ওভারফ্লাই চার্জ দিতে হবে।
বিজ্ঞাপন বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের আকাশপথ ব্যবহারে বিমানের কোনো বাধা নেই। সংকট হচ্ছে ওই আকাশপথ ব্যবহারে জন্য ইরানকে বিমানের নির্ধারিত ফি পরিশোধ করতে হবে। আর এতেই বিমান মার্কিন বিধি-নিষেধের মধ্যে চলে আসবে। বিমানের তরফে অ্যারোটাইম হাবকে বলা হয়েছে আন্তর্জাতিক নিয়ম মোতাবেক ইরানের আকাশপথ ব্যবহারের যাবতীয় ফি পরিশোধে প্রস্তুত বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশ কোনো অবস্থাতেই পশ্চিমাদের সঙ্গে কনফ্লিক্ট চায় না, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। ফলে ইরানকে ওভারফ্লাই এর পেমেন্ট পরিশোধ বা অন্য যেকোনো কাজে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বোঝাপড়া জরুরি। এটা করেই এগুবে ঢাকা। উল্লেখ্য, পেমেন্ট না দিলে বিমানকে আকাশপথ ব্যবহার করতে দেবে না ইরান, সেটাও বিবেচনায় রয়েছে বাংলাদেশের। এক্ষেত্রে বিমানের সামনে আপাতত বিকল্প হচ্ছে- ইরানের আকাশপথ ব্যবহার না করে অন্য তিন দেশের আকাশপথ ব্যবহার করে রোমে যাওয়া। সেক্ষেত্রে ফ্লাইটের সময় ও ব্যয় উভয়ই বাড়বে। সারাসরি গেলে এ রুটে যাত্রার সময় ৮-৯ ঘণ্টা। বিকল্প পথে রোমে যেতে সময় লাগবে সাড়ে ১০ ঘণ্টা। বিমানের দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা বলছেন, ২০১৫ সালে সর্বশেষ ফ্রাঙ্কফুট হয়ে ঢাকা-রোম রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করেছে বিমান।
তাতে যাত্রাপথ দীর্ঘ হয়েছিল এবং যাত্রীসংখ্যা অনেক কমে গিয়েছিল। একপর্যায়ে রুটটিই বন্ধ করতে বাধ্য হয় তৎকালীন কর্তৃপক্ষ। পুনরায় রুটটি চালু করতে হলে এবং তা ইকোনমিক্যালি ভায়াবল করতে হলে বিমানকে ইরানের ওপর দিয়েই যেতে হবে এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে ওভারফ্লাই চার্জ পরিশোধ করতে হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কারণে দেশটিকে ওভারফ্লাই চার্জের জন্য অনুমতি দিচ্ছে না। ফলে বাংলাদেশ উভয় সংকটে পড়েছে। সমঝোতা ছাড়া পা বাড়ালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দূরত্ব বাড়বে। আর যদি ঢাকা ওভারফ্লাই চার্জ পরিশোধ না করে তাহলে ইরান বিমানকে ওভারফ্লাই করার অনুমতি দেবে না। বিমানের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা ইতিমধ্যে ইরানকে কিছু অর্থ দিয়েছি এবং যুক্তরাষ্ট্র এ কারণে সমস্যা তৈরি করছে। তিনি বলেন, আমরা ইরানের আকাশ ব্যবহার করতে না পারলে আমাদের আরও তিনটি দেশের আকাশ ব্যবহার করতে হবে। রুট পরিবর্তন করলে ফ্লাইট পরিচালনার ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি ফ্লাইটের সময়কাল প্রায় দেড় ঘণ্টা বাড়বে। এতে টিকিটের দাম বেশি হওয়াসহ আল্টিমেট ভোগান্তি হবে যাত্রীদের।
সঙ্কট সমাধানে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত
এদিকে বিমানের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা রাতে মানবজমিনকে বলেন, বিদ্যমান উভয় সঙ্কটের সমাধানে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করেছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিষয়টি ওয়াশিংটনের বিবেচনায় উপস্থাপন করা হয়েছে। ঢাকা আশা করছে এ বিষয়ে দ্রুত ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া আসবে। তবে রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোন রেসপন্স মিলেনি। স্মরণ করা যায়, ১৯৮১ সালে ঢাকা-রোম রুটে ডানা মেলে বিমান। নানারকম বাধা-বিপত্তি, উত্থান-পতন সত্ত্বেও প্রায় ৩৪ বছর নির্বিঘ্নে রুটটিতে (বিরতিহীন ভাবে) ফ্লাইট চলেছে।
কিন্তু ২০১৫ সালে রুট পরিবর্তনসহ কর্তৃপক্ষের উদাসীন আচরণে শেষ পর্যন্ত রোম রুট বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ( প্রায় ৮ বছর) বিরতি শেষে মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আগামী ২৬ শে মার্চ ঢাকা-রোম রুটে পুনরায় ফ্লাইট চালু করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিশেষ ছাড়ে টিকিট বিক্রি শুরু করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।