Bangladesh

মার্কিন প্রতিনিধি দল ঢাকায়: ভোট বর্জন, অনিয়ম ও নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরল বিএনপি

ঢাকায় সফররত যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। বৈঠকে দেশের রাজনৈতিক ও মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। একই সঙ্গে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পূর্বাপর রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলির বিস্তারিত তথ্যসংবলিত একটি ফাইলও প্রতিনিধি দলের কাছে হস্তান্তর করেছেন তারা। 

এতে ‘একতরফা’ নির্বাচনে জনগণের ভোট বর্জন, ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ‘ডামি স্বতন্ত্র প্রার্থী’ দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার, নানা অনিয়ম ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীর ওপর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। অবশ্য বৈঠক শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে চাননি বিরোধী দলটির নেতারা।

গতকাল শনিবার বিকেল ৩টায় রাজধানীর গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিনে এ বৈঠক হয়। দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আক্তারের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন পররাষ্ট্র দপ্তর এবং এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর মাইকেল শিফার, ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের (এনএসসি) দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সিনিয়র ডিরেক্টর এইলিন লাউবেখার ও ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। বৈঠকে বিএনপির পক্ষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন।

সাড়ে তিন মাস কারাভোগের পর ১৫ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। মুক্তির পর বিএনপির এ দুই নেতার বিদেশিদের সঙ্গে এটিই প্রথম বৈঠক।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির আন্তর্জাতিক উইংয়ের আহ্বায়ক আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, তারা আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, আমরা এসেছি, কথাবার্তা বলেছি। আর কিছু বলার নেই। নির্বাচনের বিষয়ে কোনো কথা হয়েছি কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, কথা হয়েছে। কিন্তু আমরা কিছু বলতে চাই না। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কারাগারে ছিলেন, আপনিও কারাগারে ছিলেন এ বিষয়ে কিছু কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, ‘আপনারা যত প্রশ্ন করবেন, আমার উত্তর হচ্ছে– কিছু বলার নেই।’

যুক্তরাষ্ট্রের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষ থেকে কেউ গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি। তবে বৈঠকের পর বিএনপি নেতাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের হাস্যোজ্জ্বল ছবি দিয়ে মার্কিন দূতাবাস তাদের ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাস দেয়। সেখানে বলা হয়েছে, ‘ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিকে বোঝা এবং স্বীকৃত সমাধান খুঁজে বের করার মূল চাবিকাঠি হলো গঠনমূলক সংলাপ। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং কারাগারে বিরোধী হাজার হাজার সদস্যের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনাকে আমরা স্বাগত জানাই। ভবিষ্যতেও আলোচনার সঙ্গে যুক্ত থাকতে আমরা উন্মুখ।’

বৈঠক সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল ২৮ অক্টোবরের পূর্বাপর ঘটনা এবং নির্বাচন-পরবর্তী বিএনপির অবস্থান সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। জবাবে বিএনপি বলেছে, রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের প্রকৃত ঘটনা, গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীর মধ্যে ১৫ জনের মৃত্যু, ভোটে অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে আসন ‘ভাগবাটোয়ারা’ এবং দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন যে একতরফা ছিল ও সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ ভোট বর্জন করায় ওই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত সংসদ যে জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল নয়– এ বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে।
বিএনপি সূত্র আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চিঠির বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে। এ সময় মার্কিন প্রতিনিধি দল জানায়, এটি দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের একটি অংশ। এর মানে এই নয় যে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ে তাদের অবস্থানের পরিবর্তন হয়েছে।

সূত্র জানায়, বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচনের আগের আড়াই মাসে অন্তত ২৬ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কারাগারে নেতাকর্মীর সুচিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। এখনও কারাগারে রয়েছেন আট হাজার নেতাকর্মী। এ সময় সদ্য কারামুক্ত মির্জা ফখরুল ও আমীর খসরু নিজেদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি উল্লেখ করে কারাগারে থাকাকালীন নেতাকর্মীর চিত্রও তুলে ধরেন।
বিএনপি নেতারা আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয় কাজে ব্যবহার করেছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে ভোটারদের ৫ শতাংশও ভোট দিতে যায়নি। এ সময় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা, নির্বাচনের আগে গণহারে নেতাকর্মীকে সাজা, নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা-নির্যাতনের তথ্যও তুলে ধরেন বিএনপি নেতারা। তারা বলেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করছে। কিন্তু তাতে বাধা দিচ্ছে পুলিশ।

ভোট-পরবর্তী ৩০ জানুয়ারি ঢাকাসহ সারাদেশে শান্তিপূর্ণ কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচিতে বাধা ও গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তারা বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করতে গেলেও বাধা দেওয়া হয়। ওই দিন রাজধানীর উত্তরার কর্মসূচি থেকে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খানকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে পুলিশ। এ সময় মঈন খানকে থানায় আটকে রেখে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে একটি ফাইল যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি দলের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেখানে নির্বাচনে অনিয়মসহ হামলা, মামলা, নির্যাতন, গ্রেপ্তারসহ নানা তথ্য-উপাত্তও প্রমাণস্বরূপ দেওয়া হয়েছে। এসব আলোচনার বাইরে ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ে বিএনপির অবস্থান নিয়েও দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, সফররত মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আরেক দফা বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। বৈঠক হলে আরও বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরবে বিএনপি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d