মার্কিন প্রতিবেদনে বিএনপির হরতাল-অবরোধ ও সহিংসতা প্রসঙ্গ
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল থিংক ট্যাংক ইউনাইটেড স্টেটস ইনস্টিটিউট অব পিস (ইউএসআইপি) -এর একটি প্রতিবেদনে ২৮ অক্টোবর রাজধানী ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে সহিংসতা ও পরবর্তীতে বিরোধী দলগুলোর ডাকা হরতাল-অবরোধে গাড়িতে অগ্নিসংযোগের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। ২২ নভেম্বর এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
ইউএসআইপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিরোধী সমর্থকরা একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। বেশ কয়েকজনকে গুরুতর আহত করেছে। একটি পুলিশ হাসপাতালে আগুন দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা করেছে এবং সাংবাদিকদের লাঞ্ছিত করেছে।
বিশ্বব্যাপী সহিংসতা প্রতিরোধ ও মারাত্মক সংঘর্ষ প্রশমনে স্বাধীন একটি প্রতিষ্ঠান ইউএসআইপি। ১৯৮৪ সালে মার্কিন কংগ্রেস ইউএসআইপি গঠন করে।
‘নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা রাজপথে ছড়িয়ে পড়েছে’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়- বিএনপি দাবি করেছে, তাদের সমর্থকদের সহিংসতার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে উসকানি দেওয়া হয়েছে অথবা তাদের প্রতিবাদ হেয় করার জন্য সরকার নাশকতা চালিয়েছে। কিন্তু সহিংসতা ও স্থাপনা ধ্বংসে বিএনপির ভূমিকা বিশ্বাসযোগ্যভাবে অস্বীকার করা যায় না।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচন বানচালে সমাবেশের পর বিরোধী দল কৌশল পরিবর্তন করেছে। ধর্মঘট ও অবরোধের মাধ্যমে সারা দেশে পরিবহন ও বাণিজ্য অচল করার কর্মসূচির ডাক দিয়েছে তারা। বিরোধী নেতৃত্বাধীন অবরোধের প্রথম দুই সপ্তাহে অন্তত ১০০টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। বিএনপি আবারও এই সহিংসতায় সরকারের যোগসাজশের প্রমাণ দিচ্ছে, কিন্তু তাদের সমর্থকরা অনেক ক্ষেত্রেই এসব সহিংসতায় জড়িত। সরকারের দাবি, অবরোধ ও সহিংসতায় অর্থনীতির বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হচ্ছে।
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের ভূমিকাও উঠে এসেছে ইউএসআইপির প্রতিবেদনে। এতে পশ্চিমা সরকারগুলোর ওপর বিএনপির নির্ভরতার প্রসঙ্গে বলা হয়, গত দুই বছরে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্যান্য পশ্চিমা সরকারগুলো রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রেখে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উন্নতির জন্য চাপ দিয়েছে। বিরোধীরা এই বাহ্যিক চাপকে লুফে নিয়েছে। বিএনপি ধারাবাহিকভাবে মার্কিন নীতি ও বিবৃতির প্রশংসা করেছে। একজন বিএনপি নেতা মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তার দলের ‘ত্রাণকর্তা’ বলে অভিহিত করেছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিএনপি নির্বাচন বয়কটের বৈধতা হিসেবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক মিশন না পাঠানোর সিদ্ধান্তকে উদ্ধৃত করেছে। বিএনপি দাবি করেছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ যে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অনুকূল নয় তা ইইউর সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। ২৮ অক্টোবর সহিংস সংঘর্ষের পর বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা বলেছিলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ না করলে বাংলাদেশ সরকারকে পশ্চিমা সরকারগুলোর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
অন্যদিকে, ভারত ও চীন বাংলাদেশ ইস্যুতে তাদের স্থিতাবস্থা আরও জোরদার করছে। যদিও ভারত বাংলাদেশে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য আহ্বান জানিয়ে আসছে। তবে তারা দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন নীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের নির্বাচনকে দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে পুনর্ব্যক্ত করেছে নয়াদিল্লি। পশ্চিমাদের চাপের মুখে আওয়ামী লীগ দিল্লির এই কূটনৈতিক সমর্থনকে স্বাগত জানিয়েছে।
চীন বাংলাদেশে মার্কিন হস্তক্ষেপের সমালোচনা করে আসছে। সম্প্রতি দেশটি বলেছে, বাংলাদেশের নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হওয়া উচিত উচিত। এই বিবৃতিকে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অবস্থান বলে আখ্যা দিয়ে চীনের নিন্দা করেছে বিএনপি।