USA

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘সুপার টুইসডে’ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ

সুপার টুইসডে—মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দলীয় প্রাথমিক বাছাই প্রক্রিয়ায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম একটি দিন। আসছে নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে এবার সুপার টুইসডে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামীকাল মঙ্গলবার।

কী হয় বিশেষ এই দিনে? কেনই–বা জটিল নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় দিনটি এত গুরুত্বপূর্ণ?—এমন প্রশ্ন জনমনে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়তে হলে প্রার্থীকে আগে নিজ দলে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হয়। জিতে আসতে হয় অঙ্গরাজ্যগুলোর প্রাথমিক বাছাই আর ককাসে। সেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধিত ভোটাররা নিজ দলের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেন। এরপরই দলের সম্মেলনে বিজয়ী প্রার্থী দলের মনোনয়ন পান।

সুপার টুইসডেতে একসঙ্গে এক ডজনের বেশি অঙ্গরাজ্যের প্রাইমারি ও ককাসে ভোট হয়। ভোট দেন লাখো নিবন্ধিত ভোটার। অর্থাৎ এদিন যিনি সবচেয়ে বেশি প্রাথমিক বাছাইয়ে জয় পাবেন, দলীয় মনোনয়নে তিনিই শেষ হাসি হাসবেন, এটা প্রায় নিশ্চিত। একই সঙ্গে বিশেষ এই দিনে মার্কিন পার্লামেন্টের দুই কক্ষের (প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেট) সম্ভাব্য প্রার্থীদেরও প্রাথমিক বাছাইয়ে ভোটের মুখোমুখি হতে হয়।

এবারের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দল থেকে তেমন বিরোধিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে না বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে। তাই দলীয় প্রার্থী হিসেবে বাইডেন নভেম্বরের নির্বাচনে লড়ছেন, সেটা প্রায় নিশ্চিত।

অন্যদিকে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী হওয়ার লড়াইয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পথে প্রধান চ্যালেঞ্জ নিকি হ্যালি। ট্রাম্প-হ্যালির এ লড়াইয়ে ৫ মার্চের সুপার টুইসডে স্পষ্ট ব্যবধান গড়ে দেবে।

সুপার টুইসডের ভোটের লড়াইয়ের বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক—

সুপার টুইসডে কী

এটা এমন একটি দিন, যখন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক অঙ্গরাজ্যে একসঙ্গে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বেছে নিতে প্রাথমিক বাছাই ও ককাস অনুষ্ঠিত হয়।

অঙ্গরাজ্য পর্যায়ে এই ভোটাভুটিতে সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাঁদের পক্ষে দলীয় প্রতিনিধি জড়ো করেন। এই প্রতিনিধিরা দলের জাতীয় সম্মেলনে নিজ নিজ অঙ্গরাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করেন। সেখানে তাঁরা প্রাথমিক ও ককাসের ভোটের ফলাফলের নিরিখে মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে ভোট দেন।

রিপাবলিকান দল থেকে মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে যেকোনো প্রার্থীকে ২ হাজার ৪২৯ প্রতিনিধির মধ্যে ১ হাজার ২১৫ জনের সমর্থন প্রয়োজন হয়। আগামীকাল মঙ্গলবারের ভোটাভুটিতে ৮৭৪ জনের সমর্থন কে কতটা পান, সেটা দেখা বিষয়।

অন্যদিকে এদিন ৩ হাজার ৯৭৯ ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধির মধ্যে ১ হাজার ৪৩৯ জনকে ঠিক করা হবে। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁদের সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিনিধি বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অনুকূলে যাবেন।

জো বাইডেন

জো বাইডেনফাইল

কয়টি অঙ্গরাজ্যে ভোট

এবারের সুপার টুইসডেতে যুক্তরাষ্ট্রের ১৫টি অঙ্গরাজ্যে ভোটাভুটি হবে।

অঙ্গরাজ্যগুলো হলো আলাবামা, আলাস্কা, আরকানসাস, ক্যালিফোর্নিয়া, কলোরাডো, মেইন, ম্যাসাচুসেটস, মিনেসোটা, ওকলাহোমা, টেনেসি, টেক্সাস, উটাহ, নর্থ ক্যারোলাইনা, ভারমন্ট ও ভার্জিনিয়া। এ ছাড়া আমেরিকান টেরিটরি সামোয়াতেও ভোট হবে।

নামটি এল যেভাবে

‘সুপার টুইসডে’ নামের উৎপত্তি নিয়ে কিছুটা অস্পষ্টতা রয়েছে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের সম্পাদক ড্রিউ ডিসিলভার বলেন, এ নামের সঙ্গে পরিচিত হতে গেলে অন্ততপক্ষে ১৯৭৬ সালে ফিরে যেতে হবে। ওই সময় যদিও জুনে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ প্রাইমারিগুলোকে সুপার টুইসডে বলা হতো। তখন ক্যালিফোর্নিয়া, নিউইয়র্ক এবং ওহাইওতে প্রাথমিক বাছাই হতো।

যদিও বেশির ভাগ বিশ্লেষক একমত, ১৯৮৮ সাল থেকে আমরা কমবেশি সুপার টুইসডে শব্দটি সম্পর্কে জানতে পারি। ড্রিউ ডিসিলভার নিজেও এমনটা লিখেছেন।

১৯৮৪ সালের নির্বাচনে জিতেছিলেন রিপাবলিকান দলের রোনাল্ড রিগ্যান। তিনি ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী ওয়াল্টার মোন্ডেলকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট হন। এর বছর চারেক পর যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলের একদল ডেমোক্র্যাট একযোগে প্রাথমিক বাছাই আয়োজনের কথা ভাবেন। তাঁদের যুক্তি ছিল, এক দিনে প্রাথমিক বাছাই আয়োজন করা হলে তাঁরা শক্তিশালী দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে আরও জোরালো ভূমিকা রাখতে পারবেন। সেই সঙ্গে তাঁদের চূড়ান্ত মনোনীত প্রার্থী দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সফল হতে পারবেন।

১৯৮৮ সালে এ উদ্যোগ কাজ করেনি। তবে সুপার টুইসডে নামটি পরিচিত হতে শুরু করে অনেকগুলো অঙ্গরাজ্যে একসঙ্গে প্রাথমিক বাছাই আয়োজনের দিন হিসেবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button