USA

মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কার্টারের বড় সাফল্য-ব্যর্থতা কী

জিমি কার্টার ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এই মেয়াদকালে তাঁর সাফল্যের মধ্যে অন্যতম ছিল ক্যাম্প ডেভিড শান্তি চুক্তি।

অবশ্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কার্টারকে ঘিরে যথেষ্ট বিতর্কও ছিল। বিশেষ করে মার্কিন ভোটাররা তাঁকে একজন দুর্বল প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখেছিলেন। এ কারণে এক মেয়াদ শেষে তাঁকে হোয়াইট হাউস ছাড়তে হয়।

কার্টারের কর্মজীবনের যে উত্তরাধিকার, তা মূলত তাঁর হোয়াইট হাউস ছাড়ার পরের সময়ে প্রতিষ্ঠিত হয়।

স্থানীয় সময় গতকাল রোববার বিকেলে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের বাড়িতে কার্টার মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ১০০ বছর।

কার্টার প্রথম কোনো সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি শতবর্ষে পা রেখেছিলেন। গত অক্টোবরে তিনি তাঁর ১০০তম জন্মদিন উদ্‌যাপন করেন।

কার্টারের প্রয়াণে তাঁর জীবনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা তুলে ধরেছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

পানামা খাল

মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কার্টার তাঁর মেয়াদের প্রথম বছরে একটি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে পদক্ষেপ নেন। তিনি পানামা খালের ব্যবস্থাপনা পানামার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

গত শতকের শুরুর দিকে এই খাল খনন করা হয়। শুরু থেকে খালটি মার্কিন সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল।

১৯৭৭ সালের ৭ সেপ্টেম্বর কার্টার ও পানামার জাতীয়তাবাদী নেতা ওমর তোরিজোস পানামা খাল চুক্তি সই করেন। চুক্তির শর্ত মেনে ১৯৯৯ সালে পানামার কাছে খালটির নিয়ন্ত্রণ আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করে যুক্তরাষ্ট্র।

চুক্তি সইয়ের সময় কার্টার বলেছিলেন, বিশ্বের দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তির কেন্দ্রে থাকা উচিত ন্যায্যতা, বলপ্রয়োগ নয়।

এই পদক্ষেপের জন্য কার্টারকে নিজ দেশে উপহাসের শিকার হতে হয়েছিল। তবে ইতিহাস অবশ্য এই চুক্তিকে কূটনীতির একটি নিপুণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখে আসছে।

কার্টারের মৃত্যুতে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে পানামার বর্তমান প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনো বলেছেন, সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট পানামাকে নিজ দেশের পূর্ণ সার্বভৌমত্ব অর্জনে সহায়তা করেছিলেন।

রাজনীতিতে নৈতিকতা

কার্টার হোয়াইট হাউসে এসে তাঁর পূর্বসূরিদের চর্চা করা ‘অনৈতিক রাজনৈতিক’ বিষয় থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। তিনি মানবাধিকারকে তাঁর প্রশাসনে গুরুত্বের কেন্দ্রে রেখেছিলেন।

১৯৭৮ সালে মার্কিন নেভাল একাডেমিতে একটি বক্তব্য দিয়েছিলেন কার্টার। বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো এমন একটি বিশ্ব গঠনে সহায়তা করা, যা অর্থনৈতিক মঙ্গল, সামাজিক ন্যায়বিচার, রাজনৈতিক আত্মনিয়ন্ত্রণ ও মৌলিক মানবাধিকারের জন্য সর্বত্র মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতি আরও দ্রুত সাড়া দেয়।’

কার্টার ১৯৭৭ সালে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন।

ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি

১৯৭৮ সালের সেপ্টেম্বরে কার্টার তৎকালীন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী মেনাচেম বেগিন ও মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্প ডেভিডে আমন্ত্রণ জানান।

মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফেরাতে কার্টারের মধ্যস্থতায় ১৩ দিনের গোপন আলোচনার পর দুটি চুক্তি সই হয়। কার্টারকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করার সময় এই চুক্তিকে (ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি) একটি কূটনৈতিক বিজয় হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল।

ইরান জিম্মি সংকট

১৯৭৯ সালের নভেম্বরে ইরান জিম্মি সংকটের সূত্রপাত হয়। ১৯৮১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তা চলে।

ইরানের রাজধানী তেহরানে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসে ৫০ জনের বেশি আমেরিকানকে ৪৪৪ দিন জিম্মি করে রাখা হয়েছিল।

কার্টারের জন্য এই সংকট ছিল ‘অগ্নিপরীক্ষা’।

জিম্মি সংকটের অবসানে ১৯৮০ সালের এপ্রিলে একটি ব্যর্থ সামরিক অভিযান চালানও হয়। আর এই ব্যর্থতা একই বছরের শেষ দিকে কার্টারের পুনর্নির্বাচনের সম্ভাবনা শেষ করে দেয়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button