Trending

মার্জার কোন পথে

ব্যাংক সেক্টরে সর্বত্রই অসন্তোষ-অনিশ্চয়তা ‘মাড়োয়ারীদের হাতে দেশের ব্যাংক সেক্টর তুলে দিতেই হঠাৎ করে বাংলাদেশ ব্যাংক মার্জার সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছে। অতীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা এস কে সুরের তত্ত্বাবধানে মাড়োয়ারীদের প্রতিনিধি হিসেবে বসানো হয়েছে কিছু ব্যাংকে। যারা দেশের স্বার্থের বদলে এখন আদানীসহ ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ দেখছেন’

ব্যাংক খাতকে ‘অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড’ বা চালিকা শক্তি বলা হয়ে থাকে। এই খাতের ভালো অবস্থা কিংবা মন্দ অবস্থা দুটোরই প্রভাব দেশের অর্থনীতির ওপর পড়ে বলে উদ্বেগও থাকে। বাংলাদেশের এই ব্যাংক খাত নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে উদ্বেগ। আর এই উদ্বেগকে নতুন করে আরও ঘনীভূত করেছে ব্যাংকের একীভূতকরণ (মার্জার)। মার্জারকে আর্থিকখাত সংশ্লিষ্টরা শুরুতে সাধুবাদ জানালেও পরবর্তীতে বিষয়টি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, অযৌক্তিক ও বৈষম্য হিসেবে দেখছেন। একই সঙ্গে দুর্নীতিবাজ ও অসৎ ব্যাংক মালিকদের রক্ষায় দেশে ব্যাংকিং সেক্টরকে অস্থিতিশীল করতে দুরভিসন্ধিমূলক ভাবে এই মার্জারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি একীভূত করার বিষয়টিকে দেখছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের চাপিয়ে দেওয়া বা নির্দিষ্ট ব্যাংককে টার্গেট করে নিজস্ব সিদ্ধান্ত হিসেবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন পক্ষ থেকে নানা আপত্তিও উঠতে শুরু করেছে। এছাড়া ব্যাংক পাড়া ও দেশের অর্থনীতিতে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করেছে ‘মার্জার ইফেক্ট’। ব্যাংকের আমানতকারী ও গ্রাহকরা অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। ব্যাংক কর্মকর্তারাও এক ধরনের অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ ব্যাংকখাতকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ এবং কোন কোন ব্যাংক প্রধানমন্ত্রী বরাবর খোলা চিঠি দিয়েছে। অথচ দীর্ঘদিন থেকে আলোচনায় থাকা ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো বিশেষ করে লুটপাটে জর্জরিত একটি বিতর্কিত শিল্প গোষ্ঠীর হাতে থাকা ব্যাংকগুলোকে মার্জার করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে আলোচনায় ছিল ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকসহ ওই গ্রুপের আওতাধীন অন্যান্য একাধিক ব্যাংকের নাম। অথচ ব্যাংক একীভূতকরণের বিষয় সামনে আসলে দেখা যায় এসব ব্যাংকের নামই নেই।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের বিষয়ে মূল দায়িত্ব পড়েছে সাবেক ডেপুটি গভর্নর ও বর্তমান নীতি উপদেষ্টা আবু ফারাহ মো. নাছের-এর উপর। বাংলাদেশ ব্যাংকের গত কয়েক বছরে বিভিন্ন নীতি-নির্ধারণী বিষয়ে তার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এমনকি তার চাকরির বয়স ৬২ শেষ হওয়ার পরও উপদেষ্টা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে রেখে দেয়াকে অনেকে ভিন্ন চোখে দেখছেন। গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারকে ভুল পরামর্শ দিয়ে সুস্থ ব্যাংককে অসুস্থ করে দিয়েছেন। একই সঙ্গে ব্যাংক একীভূতকরণের এই চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তে তার একক হাত রয়েছে বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। আর তাই ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে পাঁচটি ব্যাংককে একীভূত করতে চাইছে তাদের বেশির ভাগই একীভূত হতে চাচ্ছে না। একীভূতকরণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংক দাবি করেছে ব্যাংক একীভূত হলেও আমানত নিরাপদ থাকবে।

এদিকে তড়িঘড়ি করে ব্যাংক একীভূত করার প্রতিবাদ জানিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলছে, তড়িঘড়ি ও জোরপূর্বক একীভূতকরণ ব্যাংকিং খাতে অব্যাহত দায়মুক্তির নতুন মুখোশ। ব্যাংক একীভূত করার উদ্যোগের বাস্তবায়ন স্থগিত রাখারও আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি। এক বিবৃতিতে টিআইবি বলেছে, স্বেচ্ছাচারীভাবে চাপিয়ে দেওয়া কয়েকটি ব্যাংক একীভূতকরণের ঘোষণা এবং এ প্রক্রিয়ায় থাকা ভালো ব্যাংকগুলোর অস্বস্তি, একীভূত হতে কোনো কোনো দুর্বল ব্যাংকের অনীহা, সব মিলিয়ে ব্যাংকিং খাতে শঙ্কা, অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা গভীরতর করেছে, যা একীভূতকরণের পুরো প্রক্রিয়াটিকে শুরুর আগেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।

ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ এবং স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্ক কোর্টল্যান্ডের প্রফেসর ড. বিরূপাক্ষ পাল এই প্রক্রিয়াকে ‘ফোর্সড ম্যারেজ’ বলে উল্লেখ করেছেন। একই সঙ্গে এটা শুধু ব্যাংকগুলোকে তাদের টক্সিক অ্যাসেট লুকাতে সহায়তা করবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেওয়া পদক্ষেপকে কেবল জোরপূর্বক একত্রীকরণের বিকৃত পদ্ধতি হিসেবেও উল্লেখ করেছেন।

দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেছেন, ব্যাংক খাতকে নিয়ে দীর্ঘদিনের ষড়যন্ত্রের অংশ এই মার্জার। মাড়োয়ারীদের হাতে তুলে দিতেই হঠাৎ করে বাংলাদেশ ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংকগুলোকে চাপিয়ে দিচ্ছে এই সিদ্ধান্ত। এর আগেও আর্থিকখাতকে বিপাকে ফেলতে পি কে হালদারকে টাকা পাচারের সুযোগ দেয়া হয়েছে। ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে দীর্ঘদিন বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্তৃত্ব করার সুযোগ দেয়া হয়েছে এস কে সুরের মত বিতর্কিত ব্যক্তিকে। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদেরকে এস কে সুরের তত্ত্বাবধানে মাড়োয়ারীদের প্রতিনিধি হিসেবে বসানো হয়েছে অন্যান্য ব্যাংকে। যারা এখন আদানীসহ ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ হাসিল করছেন।

সূত্র মতে, পদ্মা-এক্সিম ব্যাংকের মার্জার অনেকেই মানলেও বিপত্তি ঘটেছে সিটি ব্যাংক-বেসিক ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক-ইউসিবি ব্যাংক এবং সোনালী ব্যাংক-বিডিবিএল ব্যাংক নিয়ে। এসব ব্যাংকের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তকে কোনভাবেই মানতে নারাজ। ব্যাংক খাতকে আরও অস্থির করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মার্জার ‘দুরভিসন্ধিমূলক’ সিদ্ধান্ত বলছেন। এই সিদ্ধান্তের পর ওইসব ব্যাংক থেকে টাকা তোলার হিড়িক পড়ে। এমনকি এক পর্যায়ে ৫টি বাদে অন্যান্য ব্যাংককে আর মার্জার করা হচ্ছে না এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলেও টাকা তোলার হিড়িক কমেনি। আর তাই ব্যাংক বাঁচাতে বাধ্য হয়েই ছুটির দিনেও ব্যাংক কর্মকর্তাদের গ্রাহকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝাতে হচ্ছে ‘আপনার টাকা ব্যাংকে নিরাপদ’।

পদ্মা-এক্সিম অসামঞ্জস্য চুক্তি : তড়িঘড়ি করে গত ৪ এপ্রিল একীভূত করার বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ নীতিমালাও প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগেই এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে পদ্মা ব্যাংক একীভূত করা হয়। এমনকি মার্জার কিভাবে বা বিষয়টা কি এ নিয়ে কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুই ব্যাংকের মধ্যে চুক্তিও হয়ে যায়। অথচ ইসলামী ধারার একটি ব্যাংকের সঙ্গে অন্য একটি সাধারণ ব্যাংকের চুক্তি অসামঞ্জস্য। এমনকি দুটি ব্যাংকের কোনটার অবস্থাই খুব একটা ভালো নয়। পদ্মা ব্যাংকতো দীর্ঘদিন থেকে খাদের কিনারে। আর এক্সিম ব্যাংকের অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। ব্যালেন্স শীটও শক্তিশালী নয়। একাধিক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, অন্যান্য ব্যাংকের ঋণই এই ব্যাংকটির মূলধন বা শক্তি। এই ব্যাংকটিকেই মার্জার করা দরকার ছিল। অথচ এই ব্যাংকটিকেই দায়িত্ব দেয়া হলো অন্য একটি ভঙ্গুর ব্যাংককে। তাহলে কিভাবে এই মার্জার প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের।

সিটি-বেসিক মার্জার হচ্ছে না : দেশ সেরা ব্যাংকের তালিকায় শীর্ষের দিকেই রয়েছে বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক। আর অনিয়ম-দুর্নীতি ও সুশাসনের অভাবে দীর্ঘদিন থেকে খাদের কিনারে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক। একীভূতকরণ নিয়ে আলোচনা শুরু হলে সংশ্লিষ্টরা ভেবেছিলেন রাষ্ট্রীয় কোন ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে যাচ্ছে বেসিক ব্যাংক। আর তাই দুই ব্যাংকের পরিষদই বাংলাদেশ ব্যাংকের একীভূতকরণের চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ। গত ১৯ মার্চ সিটি ব্যাংকের পরিষদকে বেসিক ব্যাংককে একীভূত করার পরামর্শ দেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ মার্চ সিটি ব্যাংকের পরিষদকে বেসিক ব্যাংককে একীভূত করার বিষয়টি চাপিয়ে দেয়া হয়। এরপর গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসরুর আরেফিনের বৈঠকে বেসিক ব্যাংক একীভূত করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত এবং এমওইউ (চুক্তি) করতে বাধ্য করা হয়।

অথচ ওই সময়েও বেসিক ব্যাংককে রাখা হয়নি বা বলা হয়নি। এককভাবেই বাংলাদেশ ব্যাংক সিটি ব্যাংককে চাপিয়ে দেয়। এরপর সিটি ও বেসিক ব্যাংকের পরিষদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু দুই ব্যাংকের পরিষদই একীভূতকরণের এই চুক্তি মানতে নারাজ। দুই ব্যাংক মার্জার নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। কোন ব্যাংকের বোর্ডই মার্জারের পক্ষে নয়। সিটি ব্যাংকের বোর্ডে মার্জারের বিষয়টি পাস না হওয়ায় ইতোমধ্যে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উল্লাস প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ মিষ্টি বিতরণও করেছেন। অপরদিকে বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত না হওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে শতভাগ রাষ্ট্র মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক। গত ১৭ এপ্রিল বেসিক ব্যাংকের বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে ব্যাংকটির সর্বমহলে উৎসব বিরাজ করছে। এ বিষয়ে বেসিক ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবু মোফাজ্জল বলেন, গণমাধ্যমে বলা হয়েছিলো বেসিক ব্যাংক বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে।

এরপর থেকে বেসিকের আমানতকারীরা আতঙ্কে রয়েছে। এতে ব্যাংকটির বড় ক্ষতি হচ্ছে। এজন্য আমরা অর্থমন্ত্রণালয়ে অনুরোধ করবো যাতে বেসরকারি কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত না করা হয়। এর আগে গত মঙ্গলবার বেসিক ব্যাংকের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে গভর্নরের দপ্তরে এক স্মারকলিপি দেয়া হয়। এমনকি ব্যাংকটির পক্ষ থেকে অসামঞ্জস্যপূর্ণ, অযৌক্তিক ও বৈষম্যপূর্ণ এই ধরণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। অনেকেই মত দিয়েছেন, আলোচিত বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির হোতা প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুকে বাঁচাতে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংককে দেশের অন্যতম সেরা সিটি ব্যাংকের সাথে একীভূতকরণের চেষ্টা চলছে। বেসিক ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবু মোহাম্মদ মোফাজ্জল বলেন, মার্জারের সিদ্ধান্তের ফলে গ্রাহকরা ডিপোজিট (আমানত) তুলে নেয়া শুরু করেছে। এতে আমাদের তারল্য সঙ্কট তৈরি হয়েছে।

ন্যাশনাল-ইউসিবি মার্জার নিয়ে বিস্ময় : বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড (এনবিএল) একীভূত হবে অপর বেসরকারি ঋণদাতা ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের সাথে। এই ব্যাংকেও মার্জারের সিদ্ধান্তে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। গত দুইমাস আগে এনবিএল’র পরিচালনা পরিষদ পুনর্গঠন করা সত্ত্বেও একীভূতকরণ নিয়ে বিস্মিত ব্যাংকটির সর্বস্তরের কমকর্তা-কর্মচারী। অথচ গত দুই মাসে ব্যাংকটি অনেকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আর তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের চাপিয়ে দেয়া মার্জারের প্রস্তাবে বোর্ড থেকে অনুমোদন মিলেনি। এতে ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেখা দিয়েছে। ন্যাশনাল ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, গত দুইমাস আগে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে একাধিক পরিচালক পদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। এরপর থেকে ব্যাংকটি অনেকটা ঘুরে দাঁড়ায়। কিন্তু, একীভূত করার সিদ্ধান্তে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আমরা ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোনভাবেই চাচ্ছি না ইউসিবি’র সঙ্গে মার্জার হোক। ন্যাশনাল ব্যাংকের একজন শীর্ষ নির্বাহী বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ডেকে একীভূত করার সিদ্ধান্ত জানানো হলেও আমাদের পরিচালনা পরিষদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেনি।

এদিকে বেসরকারি খাতের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) শীর্ষ নির্বাহীদের গত ৯ এপ্রিল হঠাৎ ডেকে পাঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করেন ব্যাংকটির নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আনিসুজ্জামান চৌধুরী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ কাদরী। সেখানে তাঁদেরকে জানিয়ে দেওয়া হয়, ন্যাশনাল ব্যাংককে ইউসিবির সঙ্গে একীভূত করতে হবে। ব্যাংকটির একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করার কোনো সুযোগই পাননি ইউসিবি নেতৃত্ব। এই দুই ব্যাংকের মার্জারের বিষয়টিও আর্থিকখাত সংশ্লিষ্টদের পছন্দ হয়নি। তাদের মতে, দীর্ঘদিন থেকেই তারল্য সঙ্কটে ভুগছে ইউসিবি। এই ব্যাংকটিকে নিয়ে পৃথকভাবে কাজ করা দরকার ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের। অথচ এই ব্যাংকটিকেই চাপিয়ে দেয়া হলো তাদের থেকে দ্বিগুণ মূলধনের একটি ব্যাংককে। যা অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং অযৌক্তিক।

সোনালী-বিডিবিএল’র অনীহা : রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক দুটির চরিত্র ভিন্ন। তারপরও কেন দুটি ব্যাংককে একীভূতকরণের জন্য চাপিয়ে দেয়া হলো এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একই সঙ্গে বিশেষায়িত বিডিবিএল অন্যান্য সরকারি ব্যাংক থেকে ভালো করছে। তবে বাধ্য হয়েই দুই ব্যাংকের বোর্ড একীভূতকরণের সিদ্ধান্তে একমত হয়েছে। তবে একীভূতকরণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বিডিবিএল বোর্ড ও অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন প্রধানমন্ত্রী বরাবর খোলা চিঠি দিয়েছে। অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘মার্জার ইফেক্ট’ ব্যাংক পাড়া ও দেশের অর্থনীতিতে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করেছে। ব্যাংকের আমানতকারী ও গ্রাহকরা অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। তারা আমানত তুলে নিচ্ছে। নতুন করে আমানত রাখতে ভয় পাচ্ছে। গ্রহীতারা ঋণ পরিশোধে বিলম্ব করছে। ব্যাংক কর্মকর্তারাও এক ধরনের অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এর প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। গণমাধ্যমে দেয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভাজন অনুযায়ী দুর্বল ব্যাংককে সবল ব্যাংকের সঙ্গে মার্জ করার কথা থাকলেও এ বিষয়ে আরো বিশ্লেষণ ও পরিকল্পনার প্রয়োজন আছে। কিছু কিছু ব্যাংক আছে, যারা নিজেদের অতীতের দুর্দশা কাটিয়ে ভালো অবস্থায় ফিরতে শুরু করেছে। তারা নিজেদের নিয়ে আশাবাদী। এসব ব্যাংককে হঠাৎ করে অন্য একটি ব্যাংকের সঙ্গে মার্জ করে দিলে কর্মীদের কর্মস্পৃহা থাকে না, আমানতকারীরা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে যায়, উভয় ব্যাংকের পরিবেশ ভিন্ন হওয়ায়, কাজের ধরন ভিন্ন হওয়ায় কাগজে-কলমে একীভূত হলেও, নিজেরা সহজে একীভূত হতে পারে না।

এতে আরো বলা হয়, একটি বাদে সব ইন্ডিকেটরে ভালো থাকা সত্ত্বেও বিডিবিএলকে সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে মার্জের প্রক্রিয়া চলছে। বিডিবিএলের খেলাপি ঋণের পরিমাণ একটু বেশি। তবে সেই ঋণগুলোর বেশির ভাগই সাবেক বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক ও বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থার আমলের। ২০১০ সালে (বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক ও বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থাকে মার্জ করে প্রতিষ্ঠিত হয় বিডিবিএল) প্রতিষ্ঠালগ্নে ঋণখেলাপির হার ছিল ৬০ শতাংশেরও কাছাকাছি। যা বর্তমানে প্রায় ৩৪ শতাংশ। আগামী এক থেকে দুই বছরের মাথায় এই ঋণ খেলাপির হার ১৫ শতাংশের নিচে আসবে বলে বিডিবিএলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মনে করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিডিবিএল কোনো বছরই লোকসানের মুখ দেখেনি। বিডিবিএলের কোনো প্রভিশন ঘাটতি নেই। অন্য রেশিওগুলোও ভালো। তারল্য সঙ্কট নেই। অন্যান্য সরকারি ব্যাংকের মতো বিডিবিএলের মূলধন ঘাটতি নেই, বরং প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশিই আছে।

বিডিবিএল পরিচালনার জন্য সরকারকে কোনো ভর্তুকি দিতে হয় না, উল্টো প্রতি বছরই লাভের একটি বড় অংশ সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হয়। স্মারকলিপিতে বলা হয়, মার্জ করতে হলে একই মালিকানাধীন অনেকগুলো ব্যাংক রয়েছে। সেই প্রাইভেট ব্যাংকগুলোকে একত্রিত করে একটি ব্যাংকে পরিণত করলে ব্যাংকের সংখ্যা অনেক কমে যায়। এদিকে রাষ্ট্রীয় এবং দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের বোর্ড মার্জারের অনুমোদন দিলেও ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের চাপিয়ে দেয়া এই সিদ্ধান্তকে মানতে নারাজ।

কৃষি ব্যাংক-রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক : রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত এই দুই ব্যাংকের একীভূতকরণে সংশ্লিষ্ট কারোরই কোন মত-দ্বিমত বা আগ্রহ নেই। তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের চাপিয়ে দেয়া এ সিদ্ধান্তকেই মেনে নিয়েছেন। এমনকি বিশেষজ্ঞরা যেহেতু পুরো বিষয়টিকে দেখছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্ত তাই এই দুই ব্যাংক নিয়েও তাদের বক্তব্য একই।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d