Trending

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর দেশে ফেরার টিকিট কেনার করুণ কাহিনী

প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির সমীকরণে প্রতিনিয়ত জীবন যুদ্ধে টিকে থাকতে বছরের পর বছর বিদেশে পড়ে থাকাতেই বুঝি যত সাফল্য? তা না হলে স্রোতের বিপরীতে বিপসংকূল সমীকরণই কি কারো শেষ ভরসা হয়? পরিবার পরিজনদের চাওয়া-পাওয়া আর সোনার বাংলার সমুজ্জ্বল বদনখানির মলিনতার শংকা থাকে যাদের চোখে মুখে, তাদের ঋণ কি পরিশোধযোগ্য? কে বোঝে তাদের ব্যথা, কে শোনে তাদের কথা?

এইতো গতদিনের হারিয়ান মেট্রোর খবর, মালয়েশিয়ায় পড়তে আসা এক প্রবাসী ছাত্রের দেশে থাকা তার মানসিক ভারসাম্যহীন স্ত্রীকে দেখতে যাওয়ার টাকা রোজগারের সময় ইমিগ্রেশনের হাতে আটক হওয়ার করুণ কাহিনী।

এডুকেশন মালয়েশিয়া গ্লোবাল সার্ভিস ও মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশনের ওয়েবসাইট মোতাবেক তথ্যে জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় বিদেশী শিক্ষার্থীদের শর্ত সাপেক্ষে পার্ট টাইম কাজের অনুমতি থাকলেও অনুমতি নেই ব্যবসা বা সেলসম্যানের। কম খরচের কলেজগুলো নানা অনিয়মে দেশটির ইমিগ্রেশনের ব্লক লিস্টে থাকায় পার্ট টাইম নামক সামান্য রোজগারেরও পথ থাকে না দেশটিতে পড়তে আসা হাজারো শিক্ষার্থীদের। ফলে অনেক শিক্ষার্থীরা অবৈধভাবে কাজ করে অর্থ উপার্জন করার সময় ইমিগ্রেশনের হাতে ধরাও পড়ছেন অনেকেই।

একইভাবে গত মঙ্গলবার অবৈধভাবে কাজ করতে গিয়ে আটক হয়েছেন এক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। যে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ার ক্লাং ভেলিতে একটি সরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী হয়ে আসেন। 

কাজ আর ডিগ্রীর লোভনীয় অফারে আসা এ শিক্ষার্থী গত এক বছরে দেশটির নিয়মের জালে আটকা পড়ে নিরুপায় প্রায়।

একদিকে হাতে নেই টাকা আরেক দিকে হঠাৎ দেশে থাকা তার স্ত্রীর দেখা দেয় মানসিক সমস্যা। ফলে ওই শিক্ষার্থী সিদ্ধান্ত নেয় দেশে ফেরার। কিন্তু বাঁধসাধে ঐ যে অর্থ। যাকে বলে, যত অনর্থের মূল। তার কাছে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় বিমানে টিকিট কাটতে পারছিল না সে। পরে সিদ্ধান্ত নেয় ফুল টাইম কাজ করে বিমানের টিকিটের টাকা যোগাড় করার। পরিবারের চিন্তা, কলেজের ফিস, নিজের থাকা খাওয়া চারিদিকে যেন অন্ধকার তার।

পরে বাধ্য হয়ে কুয়ালালামপুরের একটি সবজির দোকানে কাজ নেয় সে। সেখানে তার বেতন ধরা হয় মাস প্রতি ২ হাজার রিঙ্গিত।

প্রতিদিনের ইমিগ্রেশন আপডেট থেকে জানা যায়, অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে নিয়মিত অভিযান চলছে দেশটিতে। গত মঙ্গলবার কুয়ালালামপুরের জালান ইপোর পাসার বোরং কমপ্লেক্সে এরই ধারাবাহিকতায় অভিযান চালায় ইমিগ্রেশন। এই অভিযানে মোট ৫৮ জনকে আটক করে তাদের কাগজ পত্র চেক করা হয়। এর মধ্যে বিভিন্ন অভিযোগে ওই শিক্ষার্থীসহ মোট ২২ জনকে ভিসা অপব্যবহার ও অবৈধ ভাবে বসবাসের জন্য গ্রেপ্তার করা হয়।

সেই সাথে অবৈধ বিদেশিদের কাজ দেয়ার অভিযোগে স্থানীয় ৩ কোম্পানির মালিককেও আটক করা হয়।

যদিও আটকের সময়, ওই শিক্ষার্থীসহ বেশিরভাগ আটককৃতরা সেখানে ফুল টাইম কাজ করার কথা স্বীকার করেনি। তবে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগের অপারেশন টিম আগে থেকেই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও তীক্ষ্ণ নজরদারির মাধ্যমে তাদের শনাক্ত করে আটক করেছে বলে জানিয়েছে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ। 

আটককৃতদের মধ্যে রয়েছে, ১৮ জন বাংলাদেশি, ১ জন ইন্দোনেশীয় এবং ৪ জন মিয়ানমারের নাগরিক। পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য তাদেরকে স্থানীয় ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছে।

হারিয়ান মেট্রো বলছে, আটককৃত ওই শিক্ষার্থীর ইচ্ছে ছিলো, ১ মাসের বেতন পেলেই দেশে ফিরবেন মানসিক সমস্যায় থাকা স্ত্রীকে দেখতে। কিন্তু বিধি বাম, তার আগেই গত ৩০ এপ্রিল, মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগের হাতে আটক হতে হয়েছে তাকে।

এটাই কি সেই প্রবাস?

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button