মালিতে শান্তিরক্ষী থাকছে না
মালিতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর কয়েকজন সদস্য
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সর্বসম্মতভাবে মালিতে থেকে শান্তি রক্ষা কার্যক্রম শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
আফ্রিকার দেশ মালিতে শান্তি রক্ষা মিশনের সমাপ্তি ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির নিরাপত্তা পরিষদের সব সদস্যরাষ্ট্রের সম্মতিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার এক ঘোষণায় জাতিসংঘ জানায়, আগামী ছয় মাসের মধ্যেই দেশটিতে থাকা শান্তিরক্ষীদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে।
জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, শান্তিরক্ষী হিসেবে মালিতে বাংলাদেশের ১ হাজার ৩৯৬ সেনাসদস্য আছেন। এ ছাড়া দেশটিতে ২৮৩ জন পুলিশ সদস্য পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হিসাবমতে মালিতে শান্তিরক্ষী হিসেবে সেনা পাঠানো শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। আর পুলিশ সদস্য পাঠানোয় রয়েছে তৃতীয় স্থানে। দেশটিতে শান্তিরক্ষী হিসেবে ১৫ হাজার ২০৯ জনের নিয়োগের অনুমোদন রয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন দেশের সামরিক বাহিনীর সদস্য আছেন ১৩ হাজার ২৮৯ জন। পুলিশ সদস্য রয়েছেন সংখ্যা ১ হাজার ৯২০ জন।
নিরাপত্তা পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে পাস হওয়া প্রস্তাব অনুযায়ী, মালিতে গতকাল থেকে শান্তিরক্ষীদের প্রত্যাহার কার্যক্রম শুরু হবে এবং ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব শান্তিরক্ষী প্রত্যাহার করা হবে।
মালিতে থাকা শান্তিরক্ষীদের নিরাপদে ও সুশৃঙ্খলভাবে ফিরিয়ে আনতে দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পূর্ণ সহযোগিতা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেছেন, ‘আগামী কয়েক মাসের মধ্যে শান্তিরক্ষীদের নিজ দেশে ফেরানো হবে।’
জাতিসংঘ ২০১৩ সালে মালিতে মিনুসমা নামের শান্তি রক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। দেশটিতে বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনাই ছিল এই কার্যক্রমের লক্ষ্য।
আল–জাজিরার খবরে বলা হয়, গত জুনে মালির অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুলায়ে দিয়োপ শান্তিরক্ষীদের সরিয়ে নেওয়ার আনুষ্ঠানিক আহ্বান জানান। এই আহ্বান জানানোর সময় নিরাপত্তা পরিষদকে উভয় পক্ষের মধ্যে ‘আস্থার ঘাটতির’ কথা জানিয়েছিলেন তিনি।
মালিতে এক দশকের বেশি সময় ধরে সরকারি বাহিনী ও সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সংঘাত চলছে। এই সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। বিদ্রোহীদের হামলা থেকে বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষায় প্রশংসা কুড়িয়েছেন শান্তিরক্ষীরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশন সমাপ্ত হলে দেশটির নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হবে ও সাধারণ মানুষ অরক্ষিত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বেন।
শান্তিরক্ষা মিশন নিয়ে জাতিসংঘ ও মালির সামরিক জান্তার মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে টানাপোড়েন চলছিল। ২০২১ সালে মালি রাশিয়ার ভাড়াটে সেনা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভাগনারের সঙ্গে মিত্রতা করার পর থেকেই শান্তিরক্ষীদের ওপর একের পর এক বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছিল সরকার।