Bangladesh

‘মিত্রদের’ মন খারাপ শরিকরাও হতাশ

দফায় দফায় বৈঠক ও আলোচনার পর শেষ মুহূর্তে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। জোট ও শরিকদের জন্য ৩২টি আসনে ছাড় দিয়েছে দলটি। তবে আওয়ামী লীগের আসন বণ্টনের পরও মন খারাপ ১৪ দলীয় জোট শরিকদের। গতবারের চেয়ে আসন কমিয়ে এবার তিনটি দলকে মাত্র ছয়টি আসন দেওয়া হয়েছে। আসন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবদারও কানে তোলেনি ক্ষমতাসীনরা। এতে চরম ক্ষুব্ধ শরিক দলের নেতারা। অন্যদিকে জোট ও শরিকদের বাইরে নির্বাচনে আসা কয়েকটি ‘মিত্র’ দলেরও প্রত্যাশা ছিল আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার। কিন্তু তাদের সঙ্গেও শেষ পর্যন্ত আসন নিয়ে কোনো সমঝোতা হয়নি। ভোটের মাঠে থাকা ইসলামি দলগুলোর কিছু চাওয়া থাকলেও শেষ পর্যন্ত আশা পূরণ হয়নি।

বিএনপিবিহীন এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ শুরু থেকেই ছিল কৌশলী ভূমিকায়। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের স্বার্থে তাদের চাওয়া ছিল-দলগুলো নিজেদের মতো ভোটে অংশ নিক। এ কারণে শরিক ও মিত্রদের আসন ছাড়ের বিষয়ে নানা হিসাবনিকাশ মিলিয়েছে দলটি। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ তাদের দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়েও এবার শুরু থেকেই নমনীয় ছিল। যে কারণে প্রায় প্রতিটি আসনেই এক বা একাধিক দলেরই স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনি মাঠে রয়েছেন।

এ বিষয়গুলোয় ঘোর আপত্তি ছিল আওয়ামী লীগের শরিকদের। তাদের আশা ছিল, বিএনপি নির্বাচনে না আসায় তারা একাদশ সংসদ নির্বাচনের চেয়ে এবার বেশি আসন পাবেন। কিন্তু উলটো তাদের আসন আরও কমিয়ে আনা হয়েছে। প্রথমে শরিকদের জন্য সাতটি আসনে ছাড়ের কথা বলা হয়েছিল। এতে জোট শরিকরা হতাশা প্রকাশ করেন। সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা এবং আসন বাড়ানোর দাবিও তোলেন। কিন্তু তাদের এই দাবি মানেনি আওয়ামী লীগ। উলটো সাতটি থেকে শেষ পর্যন্ত আরও একটি কমিয়ে ছয়টি আসন দেওয়া হয়েছে তাদের। এছাড়া ছাড় পাওয়া আসনে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বহাল রাখার সিদ্ধান্তও ভালোভাবে নেয়নি শরিকরা। বর্তমানে সংসদ-সদস্য এমন দুই শরিক দলের নেতাকেও এবার ছাড় দেওয়া হয়নি। তারা হলেন তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম-২ আসনের সংসদ-সদস্য সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সাধারণ সম্পাদক ও ফেনী-১ আসনের সংসদ-সদস্য শিরিন আখতার। এর মধ্যে সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী নিজ দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচনি মাঠে থাকলেও শিরিন আখতার শেষ দিনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। সব মিলিয়ে এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে ক্ষুব্ধ ১৪ দলের শরিকরা।

জানতে চাইলে শিরিন আখতার বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। আসন সমঝোতা নিয়ে ক্ষোভ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে ইনু ভাই (জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু) বলতে পারবেন। সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী যুগান্তরকে বলেন, আসন সমঝোতার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তাতে আমরা খুশি হতে পারিনি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সঙ্গে যাই করুন না কেন, দেশের এই ক্রান্তিকালে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান জানিয়ে আমরা নির্বাচনে আছি। সারা দেশের ৪২টি আসনে আমাদের দলের প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক ফুলের মালা নিয়ে নির্বাচন করবে।

এদিকে ১৪ দলীয় জোট শরিকদের বাইরে এবার নির্বাচনি মাঠে আছে আরও বেশকিছু রাজনৈতিক দল। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম), তৃণমূল বিএনপি, কল্যাণ পার্টি, সুপ্রিম পার্টি প্রমুখ। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) চেয়ারম্যান ও ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ মো. আবু জাফর নির্বাচনি মাঠে রয়েছেন। তৃণমূল বিএনপির শমসের মবিন চৌধুরী সিলেটে এবং তৈমূর আলম খন্দকার নারায়ণগঞ্জে ভোট করছেন। তাদের চাওয়া ছিল-ভোট করার জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগিতা পাওয়া। তবে তাদের সঙ্গে কোনো আসন সমঝোতা করেনি আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের এমন আচরণে মন খারাপ দলগুলোর নেতাদের। এতদিনে কেউ কেউ এ নিয়ে মুখও খুলতে শুরু করেছেন। শনিবার ফরিদপুরের মধুখালীতে এক বর্ধিত সভায় নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার হুমকি দেন বিএনএম চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ মো. আবু জাফর। তিনি বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে-এমন আশ্বাসে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি। এরপর যদি দেখি নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে না, ভোটের পরিবেশ নেই, তাহলে বিএনএম নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে।

জানা গেছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মোট ২৯টি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে ইসিতে নিবন্ধিত ইসলামি বা ইসলামি ভাবধারার ১১টি দলের মধ্যে ভোটের মাঠে আছে সাতটি দল। দলগুলো হলো-বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন (বটগাছ), ইসলামী ঐক্যজোট (মিনার), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট (মোমবাতি), ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ (চেয়ার), জাকের পার্টি (গোলাপ ফুল), বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন (ফুলের মালা) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (একতারা)।

নির্বাচনে অংশ নেওয়া ইসলামি দলগুলোও আওয়ামী লীগ বা সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত। এসব দল বিভিন্ন আসনে প্রার্থী দিলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা ছাড়া তাদের প্রার্থীদের জেতার সম্ভাবনা খুব কম। ফলে এসব দলের নেতারাও তাকিয়ে ছিলেন আওয়ামী লীগের দিকে। নানাভাবে চেষ্টা করেছেন ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আসন সমঝোতা করতে। ২৩ ও ৩০ নভেম্বর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন ১৪ ইসলামি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ ১৬ নেতা। তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন। এ দলগুলোর সঙ্গেও আসন সমাঝোতা করেনি আওয়ামী লীগ।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d