Uncategorized

মিথ্যা মামলা মহামারি আকার ধারণ করেছে

আইন কমিশন বলছে, দেশের অধিকাংশ আদালতে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও হয়রানিমূলক মামলা দায়ের ‘মহামারি’ আকার ধারণ করেছে। এ কারণে কারাভোগ, হয়রানি ও ক্ষতির শিকার হচ্ছে অনেক নিরপরাধ মানুষ, বিশেষ করে ফৌজদারি মামলায়। গত ২৯ আগস্ট আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দাখিল করা প্রতিবেদনে এ কথা বলে আইন কমিশন। তবে এর সঙ্গে একমত নন অনেক আইনজীবী।

কোন আদালতে কী ধরনের কতটি মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও হয়রানিমূলক মামলা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত নেই আইন কমিশনের ৪৬ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে। অধস্তন নাকি উচ্চ আদালতে এসব মামলা হয়েছে, তারও তথ্য নেই।

আইন কমিশনের এই প্রতিবেদন নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন অনেক আইনজীবী। তারা বলছেন, ফ্যাক্টস-ফাইন্ডিংস ছাড়া এ ধরনের তথ্য কমিশন দিতে পারে না। তা ছাড়া কমিশনের এটি কাজ নয়। তাদের কাজ হলো, আইন ও মামলাসংশ্লিষ্ট বিষয়ে গবেষণা এবং সুপারিশ করা।  সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সমকালকে বলেন, “এ ধরনের তথ্য ফ্যাক্টস-ফাইন্ডিংসের ওপর নির্ভর করে। সবসময়ই মিথ্যা মামলা কমবেশি ছিল। তবে ‘মহামারি আকার ধারণ’ করেছে বলা কতটা সমীচীন তা ভেবে দেখতে হবে।” তিনি বলেন, ‘আইন কমিশন যদি পরিসংখ্যান বা কেস স্টাডি দিতে পারত তাহলে যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া যেত। তাই এমন তথ্য তুলে ধরা উচিত, যাতে আদালতের প্রতি জনগণের ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি না হয়।’

ঢাকা মহানগর আদালতের পিপি আব্দুল্লাহ আবু বলেন, ‘মহামারি শব্দটির অর্থ ব্যাপক। কমিশন যা বলেছে, প্রসিকিউটর হিসেবে আমার কাছে সে রকম মনে হয় না।’ তিনি বলেন, ‘বিচারে অভিযোগ প্রমাণ না হলে আসামি খালাস পান। সে ক্ষেত্রে কমিশনের কথা কতটা সঠিক তা ভেবে দেখতে হবে।’ আইন কমিশনের ওই প্রতিবেদনে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা কমাতে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে– হয়রানিমূলক মামলা নিরুৎসাহিত করা, নালিশি মামলার ক্ষেত্রে ২০০ ধারায় মামলার আবেদনকারীর (ফরিয়াদি) অভিযোগ যাচাই নিশ্চিত করা, ফৌজদারির ক্ষেত্রে মিথ্যা মামলা হলে বাদীর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২১১ ধারার বাধ্যবাধকতা আনা এবং মামলা নিষ্পত্তি দ্রুত করা।

আইন কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা রোধে প্রচলিত আইন, বিশেষ করে পেনাল কোড ও কোড অব সিভিল প্রসিডিউরে ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত ধারায় সংস্কার জরুরি। পেনাল কোডের ২৫০ ধারায় ক্ষতিপূরণের বিধান থাকলেও তার সর্বোচ্চ মাত্রা ১ হাজার টাকা এবং এর অতিরিক্ত ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে, যা বর্তমান আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে খুবই কম। তা ছাড়া মিথ্যা মামলার কারণে যেসব নিরপরাধ মানুষকে কারাগারে থাকতে হয়েছে, তাদের ক্ষতিপূরণ বিষয়ে আইনি কাঠামো করা আবশ্যক।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কৌঁসুলি ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘আইন কমিশনের বক্তব্য সঠিক নয়। কেননা ফ্যাক্টস-ফাইন্ডিংস ছাড়া এমন কথা বলা যায় না। তারা সুপারিশ করতে পারে। এটা বলার এখতিয়ার তাদের নেই।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশের সব আদালতে গত ১৫ বছরে প্রায় ১ কোটি ৬২ লাখ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এরপরও ঝুলছে ৪০ লাখের বেশি মামলা। ১৫ বছরের ব্যবধানে দেশে মামলাজট তিন গুণ হয়েছে। এই জটের ২২টি কারণ চিহ্নিত করেছে আইন কমিশন। এর মধ্যে রয়েছে– বিচারকস্বল্পতা, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা, মামলার সুষম বণ্টন না হওয়া, প্রশাসনিক শৈথিল্য, অর্থ বরাদ্দ না হওয়া, কর্মকর্তা-কার্মচারীর জবাবদিহির অভাব ইত্যাদি। প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলা সদরগুলোতে দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতে এজলাস সংকট রয়েছে। ফলে বিচারককে একই এজলাস ভাগাভাগি করে বিচারকাজ করতে হয়।  

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button