Bangladesh

মুক্তিযোদ্ধার চূড়ান্ত তালিকার কাজ শেষ হয়নি ১০ বছরেও

বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকা নিয়ে বিতর্ক থাকায় ষষ্ঠ দফায় ২০১৪ সালে নতুন করে চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করে সরকার। রাজনৈতিক বিবেচনায় বাইরে থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অন্তর্ভুক্ত করে প্রকৃত তালিকা প্রণয়নই ছিল লক্ষ্য। এ জন্য অনলাইনে ২০১৪ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত গ্রহণ করা হয় প্রায় দেড় লাখ ব্যক্তির আবেদন। ২০১৭ সালের ২২ জানুয়ারি আবেদনকারীদের যাচাই-বাছাই শুরু হয় সারাদেশে। পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে যে পাঁচ দফা বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল, সে তালিকাও যাচাই করে প্রকাশের কার্যক্রম শুরু হয়। তবে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর এ কার্যক্রম চূড়ান্তভাবে বন্ধের কথা থাকলেও তা হচ্ছে না।

নির্বাচনী ডামাডোলে গত দুই মাস বন্ধ মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) এ-সংক্রান্ত ৯ সদস্যের কমিটির ছয়জনই জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। তারা হলেন মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সংসদ সদস্য শাজাহান খান, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, উপাধ্যক্ষ মো. আবদুস শহীদ, মোস্তাফিজুর রহমান ও মো. শহীদুজ্জামান সরকার। তাদের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ (তাঁর ছেলে প্রার্থী) ছাড়া অন্য সবাই জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। অপর তিন সদস্যের মধ্যে দু’জন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও একজন জামুকার সচিব। গত ১২ অক্টোবর জামুকার সর্বশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে মন্ত্রণালয় ও জামুকা বিভিন্ন সময়ের অনুমোদিত যাচাই-বাছাই সংক্রান্ত দাপ্তরিক দায়িত্ব পালন করছে। ফলে নানা কারণে যাচাই-বাছাই শুরু হওয়ার ১০ বছরেও চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়নে ব্যর্থ হয়েছে মন্ত্রণালয়।

সমকালের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং প্রকৃত ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বন্দ্বে বারবার হোঁচট খাচ্ছে তালিকা প্রণয়নের কার্যক্রম। যাচাই-বাছাই নিয়ে দ্বন্দ্ব গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী ও জামুকা কমিটি বিভিন্ন সময়ে দফায় দফায় উপজেলা প্রশাসনকে যাচাই-বাছাই সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাঠানোর নির্দেশ দিলেও মুক্তিযোদ্ধাদের স্থানীয় বিরোধ এবং আমলাতান্ত্রিক মনোভাবের কারণে ২৬ উপজেলা থেকে কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। এ পর্যায়ে গত জুনে উপজেলা প্রশাসনকে তাদের কাছে থাকা যাচাই-বাছাই সংক্রান্ত অসমাপ্ত নথিপত্র ফেরত পাঠাতে বলা হয়েছিল। সেই নথিপত্র এখনও অনেক উপজেলা প্রশাসন থেকে আসেনি। অনেক উপজেলায় যাচাই-বাছাই কার্যক্রমেও হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ রয়েছে। 

তবে স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে যে পাঁচ দফা বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রকাশ হয়েছিল, সেই তালিকায় থাকা গেজেটভুক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্যাদি যাচাই করে ২০২১ সালের ২৫ মার্চ আংশিক (কয়েক দফায়) তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। নামকরণ হয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধার সমন্বিত তালিকা। গত আড়াই বছরে কয়েক দফায় সমন্বিত তালিকায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম অন্তর্ভুক্ত হলেও এর কার্যক্রম চলছে। এখন পর্যন্ত সমন্বিত তালিকায় ১ লাখ ৯৩ হাজার ৭৪৩ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম মোজাম্মেল হক চূড়ান্ত তালিকা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমাদের যাচাই-বাছাই শেষ হয়ে গেছে। এখন গেজেট প্রকাশ করা হবে।’ মামলা বা মুক্তিযোদ্ধাদের বিরোধের কারণে যেসব উপজেলা থেকে প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি, সেগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অনন্তকাল যাচাই-বাছাই চলতে পারে না। চেষ্টা করব দায়িত্ব (মন্ত্রীর) হস্তান্তরের আগে তাদের জন্য আরও একবার জামুকার মিটিং করতে। সেটা না হলে তাদের বিষয়ে পরবর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।’ দেড় মাস ধরে জামুকা কমিটির সভা আহ্বান না করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কমিটির কয়েকজন নির্বাচন করছেন। তাদের কাছ থেকে সময় পাওয়া গেলে সভা আহ্বান করা হবে। নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকা প্রায় ১৭ হাজার ব্যক্তির আপিল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘তাদের সিদ্ধান্ত যা হওয়ার হয়ে গেছে। আপিল বা অন্যান্য কারণে যারা বাদ পড়বেন, তাদের জন্য আমি দুঃখিত। পরবর্তী সরকারের জামুকা কমিটি চাইলে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট মুক্তিযুদ্ধ গবেষক শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘আমলাতন্ত্রের জন্যই এই সরকারের ১৫ বছরেও চূড়ান্ত তালিকা হয়নি। এটি খুবই দুঃখজনক। অনেক মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি না পেয়েই মারা গেছেন। আবার তালিকায় এখনও অনেক অমুক্তিযোদ্ধা রয়েছে। আগামী সরকারের মন্ত্রী এসে হয়তো আবার যাচাই-বাছাই শুরু করবেন। এগুলো বন্ধ হওয়া দরকার।’ 

জানা গেছে, সমন্বিত তালিকায় (চূড়ান্ত তালিকা) গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ১ লাখ ৯৩ হাজার ৭৪৩ জন। এ ছাড়া খেতাবপ্রাপ্ত, শহীদ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন ১০ হাজার ৯৯৬ জন। জীবিত মুক্তিযোদ্ধা ৯৭ হাজার ১১২ জন। স্বাধীনতার পর ১৯৮৬ সালে প্রথম ১ লাখ ২ হাজার ৪৫৮ জন মুক্তিযোদ্ধার নাম পাঁচটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ করে জাতীয় কমিটি। ২০০৬ সালে বিএনপি সরকারের আমলে গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ ৯৮ হাজার ৮৮৯ জন। ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ষষ্ঠ দফা তালিকা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়।

জামুকার বিভিন্ন শাখার তথ্যানুযায়ী, ২০১৩-১৪ সালে অনলাইন ও সরাসরি মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ ৪৬ হাজার আবেদন জমা পড়ে। মামলা ও অন্যান্য কারণে ২৬ উপজেলার আবেদন এখনও যাচাই-বাছাই বাকি। এ ছাড়া বীরাঙ্গনা, প্রবাসী সংগঠক, শব্দসৈনিক, বিভিন্ন বাহিনীর বেসামরিক ব্যক্তিদের যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে জামুকার তত্ত্বাবধানে। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ৫১৯ জন বীরাঙ্গনা, ১৭ প্রবাসী সংগঠক, ২৯৬ শব্দসৈনিকসহ বিভিন্ন বাহিনীর বেসামরিক ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। 

প্রকৃত-ভুয়া দ্বন্দ্ব

জানা গেছে, ১৪ হাজার ২১৩ জন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কিনা, তা নিয়ে বিভক্তি রয়েছে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে। আবার কিছু ব্যক্তিকে ২০১৭ সালে অমুক্তিযোদ্ধা বলা হলেও ২০২১ সালের পুনর্যাচাইয়ে ‘ক’ তালিকা, অর্থাৎ বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সুপারিশ করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক আবেদন একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমেও যাচাই করা হচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনেও অনেক ক্ষেত্রে ভিন্নতা রয়েছে। 

এ প্রসঙ্গে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ কেউ আর্থিক বা অন্য কোনো সুবিধা নিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দেন, মিথ্যা অভিযোগও দেন। এ সুযোগে স্বাধীনতাবিরোধীরাও অতীতে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়েছে। তাই কিছু ক্ষেত্রে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তদন্তের পর অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়।’

জামুকার তথ্যানুযায়ী, ১৬ হাজার ৯৬০ জনের আবেদন আপিল কমিটিসহ বিভিন্ন শাখায় নিষ্পত্তি বা শুনানি পর্যায়ে রয়েছে। এর মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে যাচাই-বাছাইয়ের পর ২০১৭ সালে প্রথম দফা (ক তালিকা) সুপারিশপ্রাপ্ত হলেও পরে আবার স্বীকৃতি বাতিল হয়েছে– এমন ব্যক্তির সংখ্যা ২ হাজার ১৪২। তাদের পুনর্যাচাই-বাছাই হচ্ছে। অন্যদিকে, পুলিশ বাহিনীর ১ হাজার ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা, বেসামরিক গেজেটের ৫০৮ জনসহ প্রায় ২ হাজার ব্যক্তির আপিলও শুনানি বা নিষ্পত্তি পর্যায়ে রয়েছে। 

বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না
রাজনৈতিক বিবেচনার বাইরে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়নের কথা থাকলেও সেটি হচ্ছে না। স্বীকৃতি প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যক্তি ও রাজনৈতিক বিবেচনাকেই নানাভাবে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। বর্তমান সরকারের মেয়াদে নতুন করে সাড়ে ১২ হাজার ব্যক্তিকে গেজেটভুক্ত করেছে মন্ত্রণালয়। যার মধ্যে সংসদ সদস্য, সাবেক সচিবসহ রাজনৈতিক ব্যক্তি রয়েছেন। আছেন ২০১৪ সালে অনলাইনে আবেদন করেননি এমন ব্যক্তিও। এ ছাড়া প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগের ভিত্তিতে গত এক দশকে ১০ হাজারের বেশি অমুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল হলেও তাদের কারও কাছ থেকে ‘মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা’ প্রত্যাহার করা হয়নি; বরং অমুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে নাজেহাল হয়েছেন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা। 

সমকালের অনুসন্ধানে গত এক দশকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হওয়ার পর ফের অমুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন এমন তথ্যও আছে। এ সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪০০। উপজেলা পর্যায় থেকে এসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এদিকে অমুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বাতিলের প্রক্রিয়া চলছে আরও ২৭ জনের ক্ষেত্রে। বর্তমান সরকারের আমলে গেজেটভুক্ত হলেও তাদের অমুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চিহ্নিত করার কারণ প্রসঙ্গে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘ডিজিটাল জালিয়াতি করে যারা গেজেটভুক্ত হয়েছিলেন, তাদেরটা বাতিল হয়েছে। সেটা যখনই ধরা পড়ুক, তা বাতিল হবে।’ 

স্বীকৃতির বাইরে অনেকেই
বর্তমান সরকারের আমলে প্রবাসী সংগঠক ও শব্দসৈনিক, বীরাঙ্গনা, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রণয়ন করা হলেও তা অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। আবার এমন অনেকে স্বীকৃতি পাননি, যারা দেশের অভ্যন্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগঠক হিসেবে কাজ বা যুদ্ধ করেছেন। 

বিশিষ্ট মুক্তিযুদ্ধ গবেষক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা স্বীকৃতির জন্য যুদ্ধ করেননি। তার পরও যখন প্রথম তালিকা হয়েছে, সেখানেই থেমে যাওয়া উচিত ছিল। ভাতাসহ সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পর থেকে বারবার মুক্তিযোদ্ধার তালিকা করা হচ্ছে। অনেক হয়েছে। এই যাচাই-বাছাই এখানেই বন্ধ করা উচিত।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
xx1toto
bacansport
bacan4d
toto slot
situs toto