Trending

মুখ থুবড়ে পড়েছে শিল্প খাত

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার পাশাপাশি গ্যাস, বিদ্যুৎ, মূলধন ও ডলারসংকট, কাঁচামালের অপর্যাপ্ততা, শ্রমসংকট, পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়াসহ নানা কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে দেশের শিল্প খাত। বড় থেকে ছোট সব শিল্পই কমবেশি সংকটে পড়েছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, বছরভিত্তিক হিসেবে গত অক্টোবরে দেশের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পগুলোর মধ্যে সিমেন্ট, লাইম ও প্লাস্টার, রড ও স্টিল, ওষুধ, ওয়েভিং টেক্সটাইল, নিট ফেব্রিক্স, জুট টেক্সটাইল, কাগজ, সফট ড্রিংকস, চা ও কফির উৎপাদন কমে গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে শিল্পোদ্যোক্তাদের মধ্যে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে তার প্রভাব পড়ছে শিল্পের উৎপাদনে। শ্রম অসন্তোষসহ মূলধন সংকটে তৈরি পোশাকসহ বস্ত্র খাতের শিল্পগুলো সংকটে পড়েছে। রড, সিমেন্টের শিল্পগুলো সংকটে আছে ব্যাপকভাবে ভোক্তা চাহিদা কমে যাওয়ায়। সংকট মোকাবিলায় উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীরা সরকারের উপদেষ্টা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থা প্রধানের সঙ্গে আলোচনা করছেন। কিন্তু সমাধান মিলছে না।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত বছর আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরও বড় থেকে ছোট ও মাঝারি শিল্পের উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব বিদ্যমান রয়েছে। গত সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে উৎপাদন কমেছে এমন শিল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- বস্ত্র খাতের গার্মেন্ট, নিটওয়্যার, নিট ফেব্রিক্স, বিল্ডিং, শিপস অ্যান্ড ফ্লোটিং স্ট্রাকচার, কাগজ, সার, পেট্রোলিয়াম পণ্য ও ফলজ প্রক্রিয়াজাত পণ্য।

বস্ত্র খাতের সংকট নিয়ে বিকেএমইএ’র প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ জ্বালানি খাত, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, ব্যাংকিং খাত, কাস্টমস সংক্রান্ত শর্ত; এসব সমস্যা সমাধান না হলে নিশ্চিতভাবে শিল্পের উৎপাদন হ্রাস পাবে, যা রপ্তানি আয়েও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

শুধু মাসভিত্তিক হিসেবে নয়, বার্ষিক হিসাবেও গুরুত্বপূর্ণ শিল্পগুলোর উৎপাদন কমার তথ্য পাওয়া গেছে। বিবিএস প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের অক্টোবরের তুলনায় চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের অক্টোবরে সফট ড্রিংকসের উৎপাদন কমেছে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ, ওয়েভিং টেক্সটাইল শিল্পে উৎপাদন কমেছে ২৯ দশমিক ৩১ শতাংশ, জুট টেক্সটাইলে উৎপাদন কমেছে ৩৫ দশমিক ৫০ শতাংশ, ওষুধশিল্পে উৎপাদন কমেছে ১০ দশমিক ৮১ শতাংশ, সিমেন্ট, লাইম, প্লাস্টার শিল্পে ৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ, চা এবং কফি প্রক্রিয়াজাতকরণ কমেছে ১৬ দশমিক ২৮ শতাংশ, ফলজাত খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে উৎপাদন কমেছে ১৮ দশমিক ০৯ শতাংশ এবং কাগজ উৎপাদন কমেছে দশমিক ০২ শতাংশ। একইভাবে ছোট ও মাঝারি শিল্পের মধ্যে ফিনিশড টেক্সটাইল ৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ, হ্যান্ডলুম টেক্সটাইল ৫ দশমিক ৫১ শতাংশ, নিট ফেব্রিক্স উৎপাদন কমেছে ১ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং আয়রন ও স্টিল শিল্পে উৎপাদন কমেছে ৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, বস্ত্রশিল্পের পর সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছে রড-সিমেন্ট শিল্প। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ, আন্দোলনের কারণে নির্মাণ শিল্পে স্থবিরতা নেমে আসে। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর প্রায় ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও পরিস্থিতির বদল ঘটেনি। সরকারি প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে। অপরদিকে মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের হাতে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় নির্মাণ শিল্পে স্থবিরতা নেমে এসেছে, যা সিমেন্ট, লাইম ও প্লাস্টার এবং রড ও স্টিল শিল্পের উৎপাদনে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আলমগীর কবির সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাজনৈতিকভাবে দেশে যে পরিবর্তন ঘটেছে, তাতে বেসরকারি খাত খুব বেশি প্রয়োজন না পড়লে এখন নির্মাণকাজ করছে না। যারা শুরু করেছিলেন নানা অনিশ্চয়তার কারণে তারাও কাজ বন্ধ রেখেছেন। অপরদিকে মেগা প্রকল্পসহ বেশির ভাগ সরকারি প্রকল্প বন্ধ রয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জনপ্রতিনিধি ও ঠিকাদারদের অনেকে পালিয়ে যাওয়ায় মফস্বল ও গ্রামীণ এলাকায় নির্মাণকাজও বন্ধ রয়েছে। এর ফলে রড-সিমেন্টের চাহিদা ব্যাপকভাবে কমে গেছে। তাদের হিসাবে সিমেন্ট শিল্পে প্রায় ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত চাহিদা কমে গেছে বলে জানান অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto