Hot

মুজিববাদের বিরুদ্ধে এবার প্রত্যাঘাত : মাহফুজ আলম, ইতিহাসের কাঠগড়ায় মুজিব

‘মুজিববাদের বিরুদ্ধে এবার হবে প্রত্যাঘাত। খুনিদের ক্ষমা নেই। খুনিদের আদর্শের ফেরিওয়ালাদের ক্ষমা নেই (মাহফুজ আলম)। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড আইডিতে আওয়ামী লীগের উদ্দেশে স্ট্যাটাসে আরো লেখেন- ‘যাদের বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই গণহত্যা নিয়ে, তাদের সাথে নো-রিকন্সিলিয়েশন। আগে বিচার, তারপর সমঝোতা!’ মুজিববাদের বিরুদ্ধে প্রত্যাঘাতের এই ঘোষণা কি সময়োপযোগী? রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে দীর্ঘ ১৫ বছর শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু, মুজিববাদ, শেখ মুজিবুর রহমান ‘বন্দনা’ করতে পুরো জাতিকে বাধ্য করেছেন। হাজার বছরের পুরোনো বাঙালি জাতির ঘাড়ে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘জাতির পিতা’ ও ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি’ পাথর চাপিয়ে দিয়েছেন। অতঃপর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পালিয়ে যাওয়ার আগে হিটলারের নাৎসি বাহিনীর কায়দায় ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও অনুগত পুলিশ দিয়ে গণহত্যা করেছেন। হিন্দুত্ববাদী ভারতে আশ্রয় নেয়া মুজিববাদের কর্ণধার হাসিনার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শুরু হয়ে গেছে।

বিগত ১৫ বছর দেশ ছিল ‘মুজিবময়’। সেই শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। হাসিনা রেজিমে মুজিবকেন্দ্রিক সব কিছু হয়েছে। মুজিবের নাম জপতে জাতিকে বাধ্য করা হয়েছে। বই-পুস্তক, টাকা-পয়সা, স্কুল-কলেজ-মাদরাসা, মসজিদ-মন্দিরÑ সর্বত্রই করতে হয়েছে ‘মুজিব বন্দনা’। দেশকে মুজিবময় করতে এমন পরিস্থিতি হয়েছিল যে, চণ্ডিদাসের ‘শুন হে মানুষ ভাই, সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’ কবিতা বদলে প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘শুন হে মানুষ ভাই, সবার উপরে শেখ মুজিব সত্য, তাহার উপরে নাই’। হাসিনাকে খুশি করতে একজন ব্যবসায়ী তো ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘পৃথিবীতে থাকব, মরণের পরও আপনার সাথে থাকব’।

আল্লাহ, রাসূল (সা:), পবিত্র কুরআন নিয়ে কটুক্তিকে বড় অপরাধ হিসেবে দেখা হতো না, শেখ মুজিবের নামে কটাক্ষ বা অপ্রিয় সত্য কথা বললে সঙ্গে সঙ্গে কারাগার, কারাবাস। মুজিবকে নিয়ে কেনো বিতর্ক সহ্য করত না আওয়ামী লীগ। শেখ মুজিব কী মানুষ ছিল না? মানুষের দোষ-গুণ ভুলত্রুটি থাকতে পারে না? নাকি শেখ মুজিব ফেরেশতা বা শয়তান ছিলেন? ১৯২০ সালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেয়া শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের ব্যানারে নির্বাচন করে প্রথম এমপি এবং যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রী হয়ে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়ে দুই বছর কারবাস করেন। অতঃপর দীর্ঘ ১০ বছর জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া এবং স্বাধিকার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান তারই নেতৃত্বে হয়েছিল। মূলত আগরতলার ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার হওয়ায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠেন শেখ মুজিব। মওলানা ভাসানীর ন্যাপ সত্তরের নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ভূমিধস বিজয় পায়। অতঃপর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে ইয়াহিয়া খান গড়িমশি করায় মুজিবের নেতৃত্বেই তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠে। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকায় গণহত্যার পর ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে মেজর জিয়াউর রহমান বিদ্রোহ করে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ইতিহাসে প্রচার রয়েছে, শেখ মুজিবের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ ৯ মাস শেখ মুজিব পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন। এমনকি আওয়ামী লীগের নেতারা যখন পালিয়ে ভারতে গিয়ে নিরাপদ দূরত্বে থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠন করেন, তখনো দলটির নেতারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়নি। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক কর্নেল আতাউল গণি ওসমানীর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে সেনাবাহিনীসহ সাধারণ তরুণ, কৃষক, শ্রমিক, ক্ষেতমজুররা অংশ নেয়। পাকিস্তান বাহিনী যখন কোণঠাসা মুক্তিযুদ্ধের নিয়ন্ত্রণ ওসমানির কব্জায় যাচ্ছে, তখন ভারত চাণক্যনীতি গ্রহণ করে অক্টোবর মাসে ‘মুজিব বাহিনী’ গঠন করে। এ মুজিব বাহিনী দুই মাস পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের বদলে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সাধারণ যোদ্ধাদের উপর আঘাত করেছে বেশি।

শেখ মুজিবের রাজনৈতিক আমলনামা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়ার বক্তব্য থেকে। আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্টে পোস্ট দিয়ে বলেছেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমানকে মানুষ জাতির পিতা মানলে ৫ আগস্ট ভাস্কর্য ভেঙে ফেলত না।’ নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘অন্তর্র্বর্তী সরকার শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা মনে করে না।’ দুই উপদেষ্টার এই সময়োপযোগী বক্তব্য কেউ কেউ ঔদ্ধত্য বললেও সোশ্যাল মিডিয়ায় এক নেটিজেন লিখেছেন, ‘এরা সময়ের সাহসী সন্তান। শেখ মুজিবকে ‘মহান নেতা’ বানাতে গিয়ে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, আতাউল গণি ওসমানী, জিয়াউর রহমানের অবদানকে কার্পেটের নিচে চাপা দেয়া হয়েছে। এমনকি আওয়ামী লীগ নেতা তাজউদ্দিন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এম. কামরুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে খাটো করছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক দুই তরুণ উপদেষ্টা ‘শেখ মুজিব জাতির পিতা নন’ এমন সাহসী বক্তব্যের উষ্মা প্রকাশ করে একটি ইংরেজি দৈনিকের সম্পাদক লিখেছেন “হাসিনার দুঃশাসনের মাপকাঠিতে বঙ্গবন্ধুকে বিচার করা ঠিক হবে না।’ তিনি হাসিনার শাসনামলের নিষ্ঠুরতা, একপক্ষীয় ইতিহাস চর্চা এবং ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের পাতানো নির্বাচনের চিত্র তুলে ধরেছেন। কিন্তু শেখ হাসিনা যে তার পিতার পথ অনুসরণ করে ১৫ বছর নিষ্ঠুরতা চালিয়েছেন, পাতানো নির্বাচন করেছেন, সেটি ওই সম্পাদকের পিতা আবুল মনসুর আহমদ ‘আমার দেখা রাজনীতির ৫০ বছর’ বইয়ে পরিষ্কার করে লিখেছেন।”

প্রখ্যাত লেখক ও রাজনীতিক আবুল মনসুর আহমদ বইয়ের এক জায়গায় লিখেছেনÑ ‘শেখ মুজিবুর রহমান ভারত সফলে গেলে কলকাতায় মুজিব-ইন্দিরা মৈত্রি চুক্তিত হয়। সেই চুক্তির মাধ্যমে বেরুবাড়ি ভারতকে দেয়া হলে দেশের বিরোধী নেতারা ওই চুক্তিকে গোলামির চুক্তি প্রচার করে। ওই চুক্তির মাধ্যমে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা হয়নি। বইয়ের ৬২৬-২৭ পৃষ্ঠায় মুজিবের শাসনামলে ১৯৭৩ সালের নির্বাচনের চিত্র তুলে ধরে তিনি লিখেছেনÑ ‘এমনিতেই আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুুশ মেজরিজি পাবে। আওয়ামী লীগের পক্ষে বোধহয় উদার হওয়াটা সম্ভব ছিল না। আমি লেখালেখির মাধ্যমে নির্বাচনে হস্তক্ষেপ না করার প্রস্তাব দেই। কিন্তু নির্বাচনে শেখ মুজিব ব্যাপক প্রচারণা চালালেও বিরোধী নেতাদের প্রচারণা চালাতে দেয়া হয়নি। ওই নির্বাচনে বিরোধী নেতা আতাউর রহমান খাঁ, প্রফেসর মোজাফফর হোসেন, ডা. আলীমুর আল রাযী, নূরুর রহমান, রাজশাহীর মিজানুর রহমান, অলি আহাদ, সলিমুল হক খান মিল্কী, আমিনুল ইসলাম চৌধুরী, জিল্লুর রহিম, হাজি মোহাম্মদ দানেশ, বজলুস সাত্তারকে জয়ী হতে দেয়া উচিত ছিল।’ ওই নির্বাচনে কুমিল্লার জাসদ প্রার্থীর বিজয় ঠেকিয়ে হেলিকপ্টারে ব্যালট ঢাকায় এনে নৌকার প্রার্থী খন্দকার মোশতাক আহমদকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল। অলি আহাদ ‘জাতীয় রাজনীতি : ১৯৪৫ থেকে ৭৫’ বইয়ে লিখেছেনÑ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর শেখ মুজিব ফোন করে বলেন, ‘অলি আহাদ তুই এমপি হলি না?’

১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার ভেঙে দেয়ার পর থেকে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা ছিল সাহসী এবং গণমানুষের নেতার মতোই। ৭ মার্চের ভাষণে তিনি হুঙ্কার দিয়েছিলেন। কিন্তু ২২ মার্চ প্রেসিডেন্ট ভবনে (বর্তমানে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন সুগন্ধা) ইয়াহিয়া খান ও জুলফিকার আলী ভুট্টোর সঙ্গে বৈঠকের পর পাল্টে যেতে থাকেন। ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যা শুরু হলে দলের সব নেতা তাকে পালানোর অনুরোধ করলেও তিনি ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে ঠাঁয় বসে ছিলেন। নিন্দুকেরা বলেন, তিনি পাকিস্তান বাহিনীর হাতে বন্দি হওয়ার জন্য আগাম প্রস্তুতি নিয়েই বসে ছিলেন। বাহাত্তরের সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তান থেকে লন্ডন-দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরে পাল্টে যায় তার মনন চিন্তা। তাজউদ্দিন আহমেদের মেয়ে শারমিন আহমদের লেখা ‘তাজউদ্দীন আহমদ নেতা ও পিতা’ বইটির ১৫২ পৃষ্ঠায় লিখেছেনÑ ‘বিমানবন্দর থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে আসার পথেরই কাকু (শেখ মুজিব) তাজউদ্দিনকে বলেন, তাজউদ্দিন আমি কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হবো। এমনকি স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর মুজিব কাকু কখনোই আব্বুর (তাজউদ্দিন আহমদ) কাছে জানতে চাননি মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসের ঘটনাবলি। কখনোই জানতে চাননি তার অবর্তমানে আব্বু কীভাবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন।’ ওই বইয়ের এক জায়গায় তিনি লিখেছেন, ‘২৫ মার্চ ধানমন্ডির ৩২ নম্বর থেকে সবাইকে পালাতে বললেও শেখ মুজিব আত্মগোপন করেননি। অন্য নেতারা তাকেও আত্মগোপন করার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তিনি কারো কথা শোনেননি।’ ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন লিখেছেনÑ ‘চাচার (শেখ মুজিব) সামনে মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ উঠলেই তিনি বিরক্ত হয়ে প্রসঙ্গ পাল্টাতেন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার কোনো আগ্রহ ছিল না।’ সাবেক প্রধানমন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরী ‘রাজনীতির তিন কাল’ বই ও সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ‘বলেছি বলছি বলবো’ বইয়ে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। শাহ মোয়াজ্জোম হোসেন লিখেছেনÑ শেখ মুজিব বলতেন, আমি তোদের (আওয়ামী লীগের নেতাদের) পয়দা করেছি।’ আজকে যে বাংলাদেশে পরিবারকেন্দ্রিক রাজনীতির চর্চা সেটার শুরু করেছেন শেখ মুজিব। তিনি তার ভাই, ভাগিনা, সন্তানদের সবাগ্রে সুবিধা ও প্রাধান্য দিতেন।

১৯৭২ সালে দেশে ফিরে শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতালিপ্সু হয়ে পড়েন। কখনো প্রেসিডেন্ট কখনো প্রধানমন্ত্রী হয়ে ‘ক্ষমতা ভোগ’ করতে গিয়ে ভয়ঙ্কর স্বৈরাচার হয়ে উঠেন। শাসক হিসেবে তার কার্যকলাপ ছিল ভয়ঙ্কর। তোষামোদিতে খুশি হলেও সমালোচনা সহ্য করতে না পারায় চারটি পত্রিকা রেখে সব পত্রিকা বন্ধ করে দেন। এখনো দেশের গণমাধ্যমগুলো ১৬ জুন কালো দিবস পালন করে। ছড়াকার আবু সালেহ লিখেছেনÑ ‘ধরা যাবে না ছোঁয়া যাবে না বলা যাবে না কথা, রক্ত দিয়ে পেলাম শালার এমন স্বাধীনতা!’

স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির পাহাড়ে বাস করে শেখ মুজিব এ সময় ঢঙ করে ‘সবাই পেয়েছে সোনার খনি আমি পেলাম চোরের খনি’ ‘সাড়ে সাত কোটি বাঙালির আট কোটি কম্বল, আমার কম্পল গেলো কই’ টাইপের কথাবার্তা বলে অন্যের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে ভিক্টিম কার্ড খেলার চেষ্টা করেন। যাতে সবাই তাকে দোষী না ভেবে দোষী ভাবে তার আশপাশের লোকজনকে। ১৯৭৪ সালে দেশের মহিলারা যখন পরনের কাপড় বিক্রি করে ভাত কিনে খেতো, গোসল করে অর্ধেক কাপড় পড়নে রেখে অর্ধেক কাপড় রোদে শুকাতো, কুড়িগ্রামের বাসন্তী রানীরা যখন জাল পড়ে লজ্জাস্থান ঢাকতো, সে সময়ে ৩২ নম্বরে ১০ থেকে ১২ পদের তরকারি রান্না হতো। জৌলুসে ভাসতো ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি। ওই সময় শেখ মুজিবের দুই ছেলের বিয়ে দেয়া হয় সোনার মুকুট পরিয়ে। শেখ কামাল আর শেখ জামালের মাথায় সোনার মুকুটের ছবি এখনো সবখানে দেখা যায়। শুধু কী তাই? পঁচাত্তর সালে শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার পর তার বাড়িতে থাকা অস্থাবর সম্পদের দীর্ঘ তালিকা করা হয়েছিল। ভারত থেকে ’৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এলে জিয়াউর রহমানের নির্দেশে আইন অনুযায়ী তাকে সে সব ফেরত দেয়া হয়। এতে দেখা যায়, শেখ মুজিবের মৃত্যুর পর ৩১ নম্বরের বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল ৫০৩ ভরি সোনা আর চার হাজার ভরি রুপা। নগদ টাকাও ছিল বিপুল পরিমাণ। ওই সময় কবি রফিক আজাদ লিখলেনÑ ‘ভাত দে হারামাজাদা, নইলে মানচিত্র চিবিয়ে খাবো।’ এ জন্য অবশ্য কবিকে কারাগারে যেতে হয়েছিল।

শেখ হাসিনা ১৫ বছরের শাসনামলে শেখ মুজিবুর রহমানের কর্মময় জীবন নিয়ে গল্প-কাহিনী বিভিন্ন ক্লাসের বইয়ে পাঠসূচিতে লিপিবদ্ধ করেছেন। পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং ক্লাসে মুজিবের বীরত্বের কাহিনী পড়তে ছাত্র-ছাত্রীদের বাধ্য করেছেন। এমনকি বিসিএস পরীক্ষা থেকে শুরু করে পিয়ন পদে চাকরি প্রত্যাশীদের পরীক্ষায়ও প্রশ্নপত্রে মুজিবকে নিয়ে বেশি প্রশ্ন করা হয়। কিন্তু স্কুল-কলেজ-মাদরাসার কোনো পাঠ্যবইয়ের পাতায় ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের শেখ মুজিবের অরাজকতা, রক্ষী বাহিনীর নিষ্ঠুরতাসহ কোনো অপকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরা হয়নি। অথচ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর প্রায় ৯ মাস যুদ্ধকালীন সময় কোনো ফসল ভালোভাবে চাষাবাদ করা যায়নি। প্রচার করা হয়, মুক্তিযুদ্ধ চলার সময় শেখ মুজিবকে ফাঁসিতে ঝুলানোর প্রক্রিয়া হয়েছিল। মুজিবের ছত্রছায়ায় থাকা চাটার বাহিনীর লুটপাটে ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষ এলো। হাসিনা রেজিমে জাতির কাছ থেকে শেখ মুজিবের শাসনকাল ও তার অপকর্ম লুকিয়েছে এবং প্রকৃত ইতিহাস বদলে দিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছেÑ ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ কেন এলো? নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন শেখ মুজিবের শাসনামল নিয়ে গবেষণা করে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি লিখেছেনÑ বাংলাদেশে ’৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ খাদ্যের অভাবে হয়নি, দুর্ভিক্ষ হয়েছে ব্যবস্থাপনা, অনিয়মে। ওই সময় মুজিবের চাটার দলের লুটের কারণে সব ধরনের দ্রব্যমূল্য ভয়াবহভাবে বেড়ে গিয়েছিল। মানুষ আর কুকুরে একসঙ্গে খাবার সংগ্রহের দৃশ্য দেখা গেছে। না খেয়ে খেয়ে হাজার হাজার হাড্ডিসার মানুষ মারা গেছে। বিদেশি গণমাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমান বড়াই করে বলেছিলেন, ‘দুর্ভিক্ষে মাত্র ২৭ হাজার মানুষ মারা গেছে। এ সময় ২০ লাখ লোক মারা যেতে পারতো।’ মুজিবের এই সাক্ষাৎকারের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে। চোরাচালান, চুরি, লুটপাট বন্ধ করতে সেনাবাহিনী মাঠে নামানো হয়। কিন্তু চুরি ধরতে গিয়ে দেখা যায় সবাই হয় আওয়ামী লীগের নেতা নয়তো তাদের আত্মীয়-স্বজন। বাধ্য হয়ে শেখ মুজিব সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেন। আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমুর নাম তখন ছিল লবণ আমু। ক্রেতারা দোকানে গিয়ে বলতেন ‘এক ছটাক আমু দেন’। দোকানি এতেই বুঝে যেত, ক্রেতা কি চায়।

শেখ মুজিব ছিলেন ডানপিটে, হিতাহিত জ্ঞানশূন্য নিষ্ঠুর স্বৈরশাসক এবং দুর্নীতিবাজের মহাগুরু। তিনি ক্ষমতা ভোগ করতে ‘এক নেতার এক দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ স্লোগান চালু করেছিলেন। নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ, আইন বিভাগকে নিজের কব্জায় নিয়ে তিনি ‘ব্যক্তির শাসন’ কায়েম করেছিলেন। ওই সময় যুবলীগের সম্মেলনে ফজলুল হক মনি বলেছিলেনÑ ‘আমরা আইনের শাসন চাই না, বঙ্গবন্ধুর শাসন চাই।’ মিজানুর রহমান চৌধুরী এক সাক্ষাৎকারে বলেছেনÑ ‘মুজিব ভাই এত অহঙ্কারী হয়ে উঠেন যে, তিনি দাবি করছেন গণভবনের পুকুরের মাছ পর্যন্ত তার কথা শুনতো, তার নির্দেশ মানতো। বিকেলে মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে পুকুরের পাড়ে আড্ডা দিতে গিয়ে ডাক দিতেনÑ এ মাছ উপরে উঠো। মাছ তো উঠে না। পাশের চামচা পরামর্শ দিতেন, লিডার মাছকে খাবার দিলে আপনার নির্দেশে উপরে উঠবে। পরে মাছকে খাবার দেয়া হলে মুজিব ভাই ‘ওহে মাছ উপরে উঠো’ বলার সময় মাছ খাবার খেতে উপরে উঠে। এটি তিনি ‘মাছ তার কথা শোনে’ প্রচার করেন। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ জাসদের ৩০ হাজার নেতাকর্মী হত্যা করা হয়েছিল বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তর সালে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড গুম, খুন, ক্রসফায়ার শেখ মুজিবুর রহমানের আমলেই শুরু হয়। সংসদের ডিপুটি স্পিকার সাহেদ আলীকে সংসদেই হত্যা ইন্ধনদাতা হিসেবে শেখ মুজিবের নাম উল্লেখ রয়েছে। কমরেড সিরাজ সিকদার ক্রসফায়ারে হত্যার পর জাতীয় সংসদে শেখ মুজিব হুঙ্কার দিয়ে উঠেছিলেন, ‘কোথায় আজ সিরাজ সিকদার?’ জাসদের এমপিদের বিরুদ্ধে ‘সংসদে লাল ঘোড়া দাবড়ায়া দেবো’ হুমকি দিয়েছিলেন।

ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, শেখ হাসিনা যে গুম, খুন, ক্রসফায়ার, আয়নাঘর ইত্যাদি অপরাধকাণ্ড করেছেন বছরের পর বছর ধরে, সেটি তার বাবার কাছ থেকে পাওয়া। শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে সিরাজ সিকদারকে (স্থপতি শামীম সিকদারের ভাই) স্বাধীন দেশে প্রথম ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়। শেখ মুজিবের নির্দেশে প্রথম গুম করা হয় গোপালগঞ্জের প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের উদীয়মান নেতা অ্যাডভোকেট নূরুজ্জামান মাহমুদকে (বিএনপির সাবেক এমপি শরফুজ্জামান জাহাঙ্গীরের বড় ভাই, বর্তমানে পল্টনের কালভার্ট রোডের জামান টাওয়ারের মালিক)। প্রকাশ্যে খুন করা হয় ছাত্র ইউনিয়নের নেতা অলিউর রহমান লেবুকে (জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইদুর রহমান টেপার ভাই)।

শেখ মুজিবুর রহমান কখনোই বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে ভালো চোখে দেখেননি। বিকল্প হিসেবে রক্ষীবাহিনী গঠন করেন। মূলত একাত্তরের অক্টোবরে মুক্তিযুদ্ধে মাঠে নামা মুজিব বাহিনীর সদস্যদের প্রাধান্য দিয়ে রক্ষীবাহিনী গঠন করা হয়। সে রক্ষীবাহিনীর ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুরতার কাহিনী সবার জানা। লুটপাট, মজুতদারি, দুর্ভিক্ষ যখন চরম পর্যায়ে, তখন শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল গঠনের উদ্যোগ নেন। সারা জীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করা শেখ মুজিব লোভাতুর হয়ে পড়েন। তিনি নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত ও পরবর্তীতে পরিবারের সদস্যদের রাজা-বাদশাহের মতো ক্ষমতায় বসাতে বাকশাল গঠনে ঝুঁকে পড়েন। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস পাকিস্তানের কারাগারে থাকায় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার কোনো ধারণা ছিল না। ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’ বাংলার দামাল ছেলেরা কিভাবে স্বাধীনতা এসেছে সেটি তার জানা ছিল না। ফলে ফিরে এসে তার যে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের জনগণের মধ্যে ঐক্য, সংহতির উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন ছিল সে পথে তিনি হাঁটেননি। আমজনতার ভবিষ্যতের কথাও চিন্তা করেননি; বরং তিনি ক্ষমতা পোক্ত করতে তেলবাজ, চামচা, তোষামোদকারীদের প্রতিভূ হয়ে উঠেন। এক সময় হয়ে পড়েন অসৎ, দুর্বৃত্তদের পক্ষে অবস্থান নেয়া নিষ্ঠুর অত্যাচারী শাসক। ‘সংবিধান আইন ও রাজনীতি : বাংলাদেশ প্রসঙ্গ’ বইয়ে প্রখ্যাত রাজনীতিক আবদুল মালেক লিখেনÑ ‘শেখ মুজিব রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টা অস্থির হয়ে পড়েছিলেন’। ‘তোরা যে যা বলিস ভাই আমার সোনার হারিণ চাই’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গানের মতো কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকার পরও শেখ মুজিবের অবস্থা ছিলÑ ‘তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার আরো ক্ষমতা চাই’। তাই গণতন্ত্র হত্যা করে বাকশাল গঠনের সময় তিনি রাজনীতির ভুল পথে পা বাড়ান। গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র দুটি পৃথক ধারা। তিনি গণতন্ত্রের ভেতরে সমাজতন্ত্রে পৌঁছাতে প্রয়াস পান। সমাজতন্ত্রে যে মার্কসবাদী-লেলিনবাদী দর্শনের প্রয়োজন সে পথের ধারণা তার ছিল না। অথচ তিনি রাশিয়া ও ভারতের মদতে সিপিবির সভাপতি কমরেড মনি সিংয়ের প্ররোচনায় অ-মার্কসীয় সমাজতন্ত্রের নামে বাকশালের মাধ্যমে দেশে বৈপ্লবিক একনায়কতন্ত্র কায়েম করেন। কয়েক মিনিটেই সংবিধান সংশোধন করে বাকশাল গঠন করেন। বাকশাল গঠনের প্রতিবাদ করে এমপি পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক কর্নেল আতাউল গণি ওসমানি। মিজানুর রহমান চৌধুরী ‘রাজনীতির তিন কাল’ বইয়ে লিখেছেনÑ বাকশালের প্রতিবাদ করায় আমাকে জেলে রাখার হুমকি দেয়া হয়। চার খলিফার এক খলিফা নুরে আলম সিদ্দিকীকে নাকানি চুবানি খেতে হয়।

স্বাধীনতা পূর্ব ও স্বাধীনতা-উত্তর শেখ মুজিব ছিল পৃথক সত্তা। বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তরÑ তিনি দেশের মানুষের কাছে হয়ে উঠেছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক। ১৫ আগস্ট তাকে সপরিবারে হত্যার পর মানুষ মিষ্টি বিতরণ করেছে। দলের নেতারা বঙ্গভবনে গিয়ে মন্ত্রী হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করে কোনো নেতা জীবন দেয়নি। অথচ চিত্রনায়ক সালমান শাহ আত্মহত্যার পর শোক সইতে না পেরে সাতজন আত্মহত্যা করেছে। আদালতে মাওলানা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় দেয়ার প্রতিবাদে ৭০ জন মানুষ আন্দোলন করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে। তবে কেবল কাদের সিদ্দিকী ভারতের ‘র’ ইন্ধনে পালিয়ে গিয়ে মুজিব হত্যার প্রতিবাদ করেন। মুজির হত্যার পর আওয়ামী লীগের এক সময়ের সভাপতি জাতীয় সংসদের স্পিকার আবদুল মালেক উকিল বলেছিলেনÑ ‘বাংলাদেশে ফেরাউনের পতন হয়েছে’।

ক্ষমতা কারো জন্য স্থায়ী নয়। পৃথিবীতে অত্যাচারী ও খোদাদ্রোহী শাসকদের একজন ছিল ফেরাউন। অত্যাচারের দৃষ্টান্ত ও উদাহরণ টানতে গেলেই মানুষের মুখে চলে আসে ফেরাউনের নাম। লোহিত সাগরে ডুবে ফেরাউনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। পৃথিবীর চারজন বড় শাসকের অন্যতম একজন নমরুদ। প্রায় ৪০০ বছর রাজত্ব করেছিল। খলিলুল্লাহ হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সময়কালের শাসক নমরুদের মৃত্যু হয়েছে মশা কামড় ঠেকাতে। অ্যাডলফ হিটলার ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত নাৎসি জার্মানির চ্যান্সেলর ছিল। স্বৈরশাসক হিটলার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের খবর শুনে বার্লিনের বাঙ্কারে আত্মহত্যা করে। দেশে দেশে যারা মানুষের নেতা হন তাদের পৃথিবীতে কর্ম রেখে যাওয়ার সুযোগ থাকে। তারা কি রেখে যান সেটিই বিবেচ্য। ১৫ বছর মুজিবময় দেশে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। ইতিহাস তাকে কোথায় নেয়, সেটিই এখন দেখার জন্য অপেক্ষা।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
Toto Gacor
bacan4d
bacansport login
slot gacor
pasaran togel resmi
bacan4d
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
slotgacor
bacan4d rtp
bacan4d
bacan4d toto
Slot Casino
bacan4d toto
slot gacor
bacan4d
bacan4d
Slot Toto
bacan4d
bacan4d login
totoslotgacor
slot gacor
TOTO GACOR
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
toto slot
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
Slot Gacor
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
xx1toto
bacansport
bacan4d
toto slot
situs toto
slot gacor
Toto Slot
slot maxwin
slot demo
bacan4d toto slot
bacan4d toto slot
bacan4d slot
bacan4d slot
bacan4d slot
bacansports
bacansports
bacansports
bacan4d slot
bacan4d slot
bacan4d
slot gacor
pasaran togel resmi
situs toto
bacan4d login
pasaran togel
pasaran togel
situs toto
bacan4d
bacan4d gacor
bacan4d slot
bacan4d rtp
bacan4d rtp
bacan4d slot gacor
toto slot
situs toto
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
toto gacor Toto Gacor bacan4d slot toto casino slot slot gacor bacantoto totogacorslot Toto gacor bacan4d login slotgacor bacan4d bacan4d toto Slot Gacor toto 4d bacan4d toto slot bacan4d slot gacor