Hot

মুরগির রক্ত গায়ে মেখে প্রতারণা জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন

সম্রাট আকবর সবুজ। পেশায় ভ্যানচালক। ঢাকা থেকে বিভিন্ন স্থানে সবজি পরিবহনের কাজ করতেন তিনি। কয়েক বছর আগে বগুড়ায় এক গাড়িচালকের সঙ্গে বিতণ্ডার একপর্যায়ে তার মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করেন ওই গাড়িচালক। তখন নেয়া চিকিৎসার কাগজপত্র নিয়ে জুলাই ফাউন্ডেশনে আহতদের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে এসে জানতে পারেন জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণের ছবি কিংবা ভিডিও দেখাতে হবে। পরে সবুজ এবং তার বন্ধু মোহাম্মদ নূর আলম মিলে মুরগির রক্ত মাথায় এবং গায়ে মেখে রাস্তায় শুয়ে ভিডিও তৈরি করেন এবং ছবি তোলেন। এ সব ছবি জুলাই ফাউন্ডেশনে জমা দিয়ে ইতিমধ্যে অর্থ সহায়তা তুলে নিয়েছেন। শুধু ফাউন্ডেশনই নয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকেও আর্থিক সহায়তা বাগিয়েছেন এই ছবি দেখিয়ে। সম্প্রতি ফাউন্ডেশনের তদন্তে তার এই প্রতারণা ধরা পড়ে।

শুধু সুবজই নন, এমন অনেকে প্রতারণা করে জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের জন্য বরাদ্দকৃত অনুদান তুলে নিচ্ছেন। ফাউন্ডেশনের তদন্তে তাদের অনেকে ধরাও পড়ছেন। এ পর্যন্ত অর্ধ শতাধিকেরও বেশি প্রতারণার ঘটনা ধরা পড়েছে। ধরা পড়াদের কেউ কেউ বরাদ্দকৃত টাকা ফেরত দিয়েছেন। মামলার পর জেলে গেছেন ৩ জন।  

গতকাল মঙ্গলবার জুলাই ফাউন্ডেশনের সেলে সম্রাট আকবর সবুজকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি স্বীকার করেন যে, মুরগির রক্ত  মেখে তিনি ছবি তুলেছেন। মাথায় যে আঘাত পেয়েছেন তা ব্যক্তিগত ঝগড়ার সময় প্রাপ্ত আঘাত। কিন্তু জুলাই আন্দোলনে তিনি অংশ নিয়েছিলেন এমনটা দাবি করায় এবং প্রতারণার কথা স্বীকার করায় তাকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
সবুজকে ডেকে আনায় জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন কার্যালয়ে আন্দোলনে আহত কয়েকজন জড়ো হয়েছিলেন। সবুজের প্রতারণার ঘটনায় ক্ষুব্ধ এসব আহত ব্যক্তি তাকে মারধর করতে উদ্যত হন এই প্রতিবেদকের সামনেই। তারা দাবি করেন, এসব প্রতারণার কারণে আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের মর্যাদা হানি হচ্ছে। এসব প্রতারকের কঠোর শাস্তি দেয়ারও দাবি করেন তারা। 

আন্দোলনে আহত সোহান বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (পিজি) চিকিৎসা নিচ্ছেন। সবুজের প্রতারণার খবর পেয়ে তিনি হাজির হন ফাউন্ডেশন কার্যালয়ে। ক্ষুব্ধ সোহান বলেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে আমরা প্রকৃত আহতরাই সহায়তা পাইনি। কিন্তু এই প্রতারক টাকা নিয়ে গেছে। আমরা এদের কঠোর শাস্তি চাই। 

গতকাল বেলা দুইটায় জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের গিয়ে দেখা যায়, কেউ ব্যস্ত শহীদ পরিবার ও আহতদের আর্থিক সহায়তা প্রদানে। কেউ বা তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তি করতে। সেখানে আহত ও তাদের স্বজনদের ভিড়। কেউবা এসেছেন অনুদানের অর্থ কবে পাবেন তা জানতে। শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের অর্থ সহায়তা, কর্মসংস্থান, সম্মানী ভাতা, আজীবন চিকিৎসা সুবিধা গ্রহণসহ নানা বিষয় জানতে। তাদের বক্তব্য ও সমস্যা সম্পর্কে অবহিত হতে কথা বলতে দেখা যায় ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধকে। প্রধান ভেরিফিকেশন অফিসার মো. হারুন ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. জাহিদ হোসেন তাকে সহযোগিতা করছিলেন। 

মঙ্গলবারই যাত্রাবাড়ী এলাকার আন্দোলনের একজন সমন্বয়ক ফাউন্ডেশনে অভিযোগ নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। তার অভিযোগ অনুযায়ী গত ১৪ই আগস্ট সাইফ আরাফাত শরীফ এবং মো. সাইদুল ইসলাম ইয়াছিন নামে দুই তরুণ গণধর্ষণের অভিযোগে মব হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। তাদের পিটিয়ে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে ফেলে যায় কিছু লোক। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। এই দুইজনকে জুলাই আন্দোলনে শহীদ বলে এক প্রতারকের মাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট ’ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস)’ এ নাম অর্ন্তভুক্ত করা হয়। এমনকি জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে আন্দোলনে শহীদদের জন্য বরাদ্দকৃত সহায়তাও বাগিয়ে নেয়া হয়েছে। যদিও ঘটনার সময় নিহত দুইজনের পরিবার দাবি করেছিল তারা জুলাই আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিল। 

জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক ও জুলাই ফাউন্ডেশনের ছাত্র প্রতিনিধি মো. রাকিব হোসেন মানবজমিনকে বলেন, ১৪ই আগস্টের গণপিটুনিতে তারা মারা যান। সে জুলাই আন্দোলনের শহীদ নয়। এটা ওই সময় বিভিন্ন পত্রিকা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট ’ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস)’ এএই ঘটনাায় মারা যাওয়া লোক কীভাবে ভেরিফাইড হয়। মূলত এমআইএস-এ ভুয়া নাম ভেরিফাইডের যে দালাল আমরা তাকে খুঁজে বের করবো। এছাড়াও নিহত সাইফ আরাফাত শরীফের মা’কে আমরা টাকা ফেরত দেয়ার জন্য ফোন দিলে তিনি মামলা দিয়ে আমাদের ফাঁসানোর হুমকি দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে কথা বললে ছেলে হত্যা মামলায় নাম দিয়ে দেয়ার হুমকিও দেন তিনি।

এসব প্রতারণার ব্যাপারে জুলাই ফাউন্ডেশনের প্রধান ভেরিফিকেশন অফিসার মো. হারুন মানবজমিনকে বলেন, আমরা প্রতিদিনই  নানা কৌশলে প্রতারণার মাধ্যমে ফাউন্ডেশনের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার বিষয় খুঁজে বের করছি। জুলাই ফাউন্ডেশনের বরাদ্দকৃত অর্থ যেন প্রকৃত আহত এবং নিহত পরিবারই পেয়ে থাকে আমরা সেটা নিশ্চিত করার সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। যারা ইতিমধ্যে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা বাগিয়ে নিয়েছে তাদের প্রত্যেককে খুঁজে বের করে আমরা অবশ্যই টাকা উদ্ধার করবো।

এদিকে প্রতারণার অভিযোগে জুলাই ফাউন্ডেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সোহেল মিয়ার করা রমনা থানার মামলায়, জুনায়েদ  এবং আবুল কালাম নামে দুই ব্যক্তির জামিন হয়েছে। জুলাই ফাউন্ডেশনের লিগ্যাল অফিসার এডভোকেট পায়েল মানবজমিনকে বলেন, মঙ্গলবার জুনায়েদ নামের এক প্রতারক তার হাতিয়ে নেয়া টাকার মধ্যে ২০ হাজার টাকা দিয়ে বাকি টাকা পরবর্তী শুনানিতে দেয়া শর্তে আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। আবুল কালাম নামের আরেক ব্যক্তি পরবর্তী শুনানিতে টাকা ফেরত দেয়ার শর্তে জামিন পেয়েছেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d