‘মুসলিম নির্যাতনকারী চীনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে বাংলাদেশে
চীনের সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় স্বাধীনতা বিঘ্নিত। তাদের মানবিক অধিকারও লুন্ঠিত। চলছে অকথ্য অত্যাচার। গণহত্যা চালাচ্ছে শি জিনপিংয়ের সরকার। জিনজিয়াং প্রদেশের মতোই বাংলাদেশের মাটিতেও চীনা প্রকল্পগুলিতে শ্রমিকদের ওপর জুলুমবাজি চালাতে চাইছে সেখানকার কোম্পানিগুলো। ন্যূনতম স্বাধীনতাও পাচ্ছেন না শ্রমিকরা। অনেকেরই আশঙ্কা, বাংলাদেশকেও শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তান বানাতে চায় চীন। তাই চীনা প্রকল্প নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে বাংলাদেশে। তারই বহিঃপ্রকাশ লক্ষ্য করা গেছে গত ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আয়োজনে ঘুলজা ঘুলজা গণহত্যা দিবস পালনে। ভবিষ্যতে চীন বিরোধী বড়ধরনের আন্দোলনে নামতে পারেন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ।
১৯৯৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি চীনা বাহিনী জিনজিয়াং প্রদেশে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা এবং সমান অধিকারের দাবিতে উইঘুরদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের সময় হাজার হাজার নিরীহ উইঘুরদের হত্যা ও বন্দী করে। সেই অত্যাচার আজও বন্ধ হয়নি। উইঘুরদের ওপর চলছে অমানবিক জুলুমবাজি। চীন সরকারের সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের মানুষও উদ্বিগ্ন। উল্লেখ করা যেতে পারে, ১৯৩৩ সালে পূর্ব তুর্কিস্তান নামে স্বাধীন দেশ পেয়েছিল উইঘুররা।
সাম্রাজ্যবাদী শক্তি চীন উইঘুরদের সেই স্বাধীনতা কেড়ে নেয়। জিনজিয়াং প্রদেশে বহুদিন ধরেই চলছে চীনের দখলদারি। রীতিমতো গণহত্যা চালাচ্ছে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি। জাতিসংঘের অনুমান, চীনের বন্দিশালায় বর্তমানে নারীসহ ১০ লাখ উইঘুর মুসলমান আটক আছেন। উইঘুররা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বহুদিন ধরেই সাহায্য চাইছেন। কিন্তু পশ্চিমারা উইঘুর মুসলিমদের মানবিক আবেদনেও তেমন সাড়া দিচ্ছেন না। তাই জিনজিয়াং প্রদেশে বসবাসরত প্রায় ১ কোটি ২৬ লক্ষ মুসলমানকে অমানবিক নির্যাতন ও নিপীড়ন সহ্য করতে হচ্ছে।
মুসলিম বিরোধী কমিউনিস্টশাসিত দেশটি, মুসলিমদের সংখ্যা কমানোর জন্য মুসলিম নারীদের জোর পূর্বক গর্ভপাত করানো, জোরপূর্বক জন্মনিয়ন্ত্রণ ঔষধ খাওয়ানো, ধর্মান্তরিত করা, ধর্ষণ, বন্দী শিবিরে আটকে রেখে নির্যাতনের মাধ্যমে তারা উইঘুরদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে।
জিনজিয়াং প্রদেশের জনসংখ্যা ২ কোটি ২০ লাখের মতো। এর মধ্যে মুসলমান প্রায় ১ কোটি ২৬ লাখ। প্রায় ৫৮ শতাংশ মুসলিম। চীন হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম ধর্মীয় নিপীড়ক দেশ। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা না থাকায় প্রকৃত তথ্য বাইরে আসতে পারছে না। বাস্তবে সেখানকার পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। বিচ্ছিন্নতাবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও ধর্মীয় চরমপন্থার মোকাবেলার নাম করে উইঘুরদের নিকেষ করতে চাইছে চীন। দাড়ি রাখা, রমজান মাসে রোজা রাখা, নামাজ পড়ার মতো পবিত্র কাজকেও তারা ধর্মীয় চরমপন্থা বলে অবিহিত করছে। আর এই চরমপন্থা দমনের নামে নির্বিচারে গ্রেপ্তার, জেল-জরিমানা চলছে সেখানে। চীনা কর্তৃপক্ষের সাফ কথা, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের অনুগত থেকে ধর্ম পরিত্যাগ করতে হবে। সেই শর্ত না মানলেই নেমে আসছে কঠোর শাস্তি।
নিজেদের দেশে মুসলিমদের ওপর অত্যাচারের পাশাপাশি বাংলাদেশেও চলছে তাদের বিভিন্ন রকম প্রতারণা। মুক্তিযুদ্ধের সক্রিয় বিরোধী চীন কিছুতেই বাংলাদেশের উন্নয়ন চায় না। তারা চায়, আমাদেরকেও শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তানের মতো দেউলিয়া করে দেশের সার্বভৌমত্বকে জিম্মি করতে। তাই চীনা কোম্পানিগুলো বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে ধীরগতি, দুর্নীতি, অনিয়ম ও শ্রমিক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। বাড়ছে খরচের বহর। ঋণের ফাঁদে তারা বাংলাদেশকেও কাবু করতে চাইছে। তদন্ত কমিশন গঠন করে অবিলম্বে চীনের এধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে।
তিস্তা প্রকল্পের নামে চীন নতুন এক ফন্দি এঁটেছে। জনগণের স্বার্থ বিরোধী তিস্তা প্রকল্প আসলে চীনের নতুন আগ্রাসন কৌশল। এই কৌশল বন্ধ করতে না পারলে বাংলাদেশকেও ভবিষ্যতে ভুগতে হবে। বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কা বানানোর ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে প্রয়োজনে অন্য দাতা সংস্থার সাহায্য নেওয়া জরুরি হয়ে উঠেছে। চীনের সাহায্যে তিস্তা পাড়ের মানুষদের ভবিষ্যত দূর্বিসহ করা অযৌক্তিক। উন্নয়নের নামে চীন ব্যাপক হারে পরিবেশ ধ্বংস করছে। তিস্তা নদীর আশে পাশে অঘোষিত সামরিক ঘাঁটি বানিয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টাও রয়েছে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির গোপন এজেন্ডায়। তাই প্রতিবাদ শুরু হয়েছে বিভিন্নমহল থেকে। উইঘুরদের ওপর জুলুমবাজির জন্য এমনিতেই বাংলাদেশের মানুষ চীনের ওপর ক্ষিপ্ত, এখন দেশের ভিতরেও চীনা ষরযন্ত্রের জাল বিস্তৃত হওয়ায় ক্ষোভ আরও বাড়ছে।
বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক আল মামুনের দাবি, ‘একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী অপশক্তি চীন বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সাথে জড়িত ছিল। বিএনপি-জামাতের শাসনামলে ১৫ আগস্টে খালেদা জিয়াকে জন্মদিন উপহার পাঠানো রাষ্ট্র চীন কর্তৃক সম্প্রতি তিস্তা প্রকল্পের নামে অসম শর্তে ঋণের ফাঁদে ফেলে এবার বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কা বানানোর ষড়যন্ত্রের লিপ্ত হয়েছে। ঢাকা টু কুড়িগ্রাম ছয় লেনের মহাসড়ক প্রকল্পে চীনা কোম্পানির ধীরগতি কৌশলের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে দুর্নীতি ও অনিয়ম করে যাচ্ছে। চট্টগ্রামে চীনা কোম্পানি কর্তৃক শ্রমিক হত্যা ও নির্যাতনের বিচার করতে হবে’।
বিএনপি-জামাতের শাসনামলে ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের দিন খালেদা জিয়াকে জন্মদিনের উপহার পাঠিয়ে জাতির পিতাকেই অবমাননা করেছিল ঢাকাস্থ চীন দূতাবাস। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতে বাংলাদেশের স্বীকৃতিটুকুও দেয়নি বেজিং। এখন বন্ধুর ছদ্মবেশে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সার্বভৌমত্বকে জিম্মি করতে এসছে তারা। চীন সরকারের আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে। করতে হবে, চীনের দোসরদেরও মুখোশ উন্মোচন।
বাংলাদেশে একাধিক প্রকল্পে কাজ করছে চীন। উন্নয়নের নামে চলছে চীনা কোম্পানিগুলো রমরমা। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের মাত্রাও দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশে কর্মরত চীনা কোম্পানিগুলো প্রতিনিয়ত শ্রমিক নির্যাতন, বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে যাচ্ছে। উত্তরায় গার্ডার পড়ে একই পরিবারের ৫ জন নিহত হওয়ার পরেও চীনা কোম্পানির বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। চট্টগ্রামে শ্রমিক নির্যাতন ও উত্তরায় অবহেলাজনিত কারণে মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত চীনা কোম্পানিগুলোর বিচার করতে হবে। অত্যাচারী মুনাফাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গৃহীত না হলে ভবিষ্যতেও এধরনের অত্যাচার চলবে।
বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের দপ্তর সমন্বয়ক মুহাম্মদ নূর আলমের মতে, ‘তিস্তা নদীর উন্নয়ন নিজের দেশের অর্থায়নে না করতে পারলেও আরো দাতা সংস্থা আছে। তাদের নিকট সহযোগিতা নিয়ে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে শ্রীলঙ্কা বানানোর ষড়যন্ত্র এদেশের জনগণ কখনোই মেনে নিবে না’।