Hot

মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট মানুষ

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চায় সরকার। এজন্য গত বৃহস্পতিবার বাজেটে বেশকিছু নিত্যপণ্যের শুল্ক ও কর কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে রাজধানীর বাজারে এখনো তার কোনো প্রভাব পড়েনি। অধিকাংশ নিত্যপণ্যই বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। কিছু কিছু পণ্য আবার বাজেট ঘোষণার আগে থেকেই দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। বিশেষ করে মসলা জাতীয় পণ্য এলাচ, গোল মরিচের দাম কয়েক সপ্তাহ ধরে চড়ামূল্যে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া পিয়াজ ও আদার দামও বেড়েছে এই সময়ে। বিপরীতে কমেনি তেমন কোনো পণ্যের দাম, যা কমার কথা ছিল। রাজধানীর মাদারটেক, বাসাবো ও খিলগাঁও বাজারে এসব চিত্র দেখা গেছে।

কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে মসলার দাম বেড়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে এলাচের দাম।

কয়েক সপ্তাহেই কেজিতে ৬০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে এলাচের দাম। এখন বাজারে বড় দানার এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার টাকা কেজি আর ছোট দানার এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা কেজি। এ ছাড়া গোল মরিচের দাম কেজিতে ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে (কালা) ১ হাজার টাকা আর (সাদা) ২ হাজার টাকা। আর লবঙ্গ ২ হাজার, দারুচিনি ৬০০ ও তেজপাতা ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাদারটেক বাজারের বিক্রেতা কবির বলেন, ঈদের আগে মসলার চাহিদা বেশি থাকে। মাংস রান্নার জন্য সবারই মসলা দরকার হয়। তাই এখন দাম বেশি। ঈদের পর আবার কমবে। 

দীর্ঘদিন ধরেই বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে পিয়াজ। বর্তমানে ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে এককেজি পিয়াজ। তিন সপ্তাহ আগেই ৬০ থেকে ৭০ টাকায় পিয়াজ বিক্রি হয়ে আসছিল। এই সময়ের মধ্যে কেজিতে ২০ টাকা দাম বেড়েছে। এ ছাড়া কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে রসুনের দাম। বাজারে এককেজি রসুন বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকায়। আর আদার দাম কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা। খিলগাঁও বাজারের সুমি স্টোরের বিক্রেতা ইরাম বলেন, এক মাস ধরে এসব পণ্যের দাম বেড়েছে। এরমধ্যে কোনোটির দাম কমেনি। শুনেছি বাজেটে কিছু নিত্যপণ্যের দাম কমানো হবে। 

বাজারে ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। আর এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায়। তবে এক মাসের মধ্যে তেলের দাম একই রকম রয়েছে বলে জানিয়েছে বিক্রেতারা। তেলের মতো চালের দামেও কোনো হেরফের হয়নি। বাজারে সরু মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে আর মাঝারি আকারের পাইজাম চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে। বাসাবো বাজারের চালের দোকানি রফিকুল ইসলাম বলেন, চালের দাম আগের মতোই আছে। এখন দাম কমবে কিনা সেটি জানা নেই। সামনেও এমনই থাকতে পারে। 

বাজেটে শিশুদের গুঁড়াদুধের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আড়াই কেজি পর্যন্ত গুঁড়াদুধের ওপর ২০ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে গতকাল বাজারে গুঁড়াদুধের দাম কমার কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। বাজারে ডিপ্লোমা গুঁড়াদুধ (হাফকেজি) বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা আর ডানো (হাফ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়া চিনি ১৩৫ টাকা, লাল চিনি ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে দেশি ডাল ১৩০ টাকা, ভারতীয় ডাল ১১০ টাকা, ছোলা ১০০ টাকা, মটর ৮০ টাকা ও চড়া দামে আলু ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে আটা ৪০ টাকা, ময়দা ৬০ টাকা ও লবণ ৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়ে আসছে। আর হলুদ ৩৫০ টাকা কেজি, শুকনা মরিচ ৪০০ টাকা কেজি ও চা পাতা (৫০০ গ্রাম) ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে ব্রয়লার প্রতিকেজি ২০০ টাকা, সোনালি ৩৪০ টাকা ও দেশি মুরগি ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক মাসে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা কমলেও কিছুটা বেড়েছে দেশি মুরগির দাম।

সরজমিন মিরপুর-১ বাজার: প্রতিবছর বাজেট ঘোষণা হলেই সব শ্রেণির মানুষের নজর থাকে কোন পণ্যের দাম বাড়লো, আর কোনটির কমলো। বাজেটে ভোগ্যপণ্যের দাম কমাতে সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ না থাকায় হতাশ হয়েছেন ক্রেতারা। সবজির বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। করলা, বেগুন, ঝিঙ্গা, ধুন্দল, বরবটি, পটোলের কেজি ৮০ টাকা। টমেটো, শশা ও গাজরের কেজি ১০০ ছুঁয়েছে। বাজারে প্রতি কেজি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। এ ছাড়া দেশীয় ও আমদানিকৃত সব ধরনের রসুনের কেজি ২২০ টাকা, মানভেদে আদার কেজি ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা ও আলু ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পিয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ কি? এমন প্রশ্নের জবাবে খুচরা বিক্রেতা ইউসুফ শিকদার বলেন, এখন সবাই সিজনে পিয়াজ স্টক করে। কৃষক বাজার ঘুরে দেখে দাম কতো, বেশি দাম দেখলে তারপর বাজারে পিয়াজ পাঠায়। এজন্য বাজারে পিয়াজের সংকট থাকায় দামও বেড়েছে। 

বাজারে প্রতি কেজি টমেটো ১১৫ টাকা, শশা ১০০ টাকা ও গাজর ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া পেঁপে ও মূলা উভয়ই ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মিষ্টিকুমড়ার কেজি ৪০ টাকা। আগের মতো কাঁচা মরিচ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজির মূল্য ১৬০ টাকা। লেবুর হালি ৩০ টাকা। প্রতি পিস লাউ ৭০ টাকা, চালকুমড়া ৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। 

বাজারে আকারভেদে প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকায়। দোকানে অবস্থানকালে এক দম্পতি ইলিশের দাম জিজ্ঞেস করে ফিরে গেলেন। এ সময় মাছ ব্যবসায়ী কমল বলেন, ইলিশের দাম এখন আগের তুলনায় অনেকটা কম। সামনে আরও কমবে। কিছুদিন আগেও ৬০০ গ্রামের একটি ইলিশ ১৫০০ টাকায় কিনছি। সেটা এখন ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাও মানুষ কিনতে চায় না।

বাজারে প্রতি কেজি তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়, আকারভেদে চাষের পাঙাশ ১৬০ থেকে ২৬০ টাকা, নদীর পাঙাশ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, রুই ৩৫০ টাকা, কাতলা ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, সিলভার কার্প ১৬০ টাকা, মৃগেল মাছ ২৪০ টাকা, বাটা মাছ ২৬০ টাকা, বেলে মাছ ১১০০ টাকা। এ ছাড়া কইয়ের কেজি ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা, শিং মাছ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, শৈল মাছ ৭০০ টাকা, মাগুর মাছ ৫০০ টাকা, টাকি ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পেটে ভাত না থাকলে বাজেট দিয়ে কী করবো?: আলু, পিয়াজ, ডিম, সবজি এমন কোনো পণ্য নেই যে তার দাম বাড়েনি। এক কেজি চাল কিনতে চলে যায় ৭৫ টাকা। সাড়ে তিনশ’-চারশ’র নিচে কোনো মাছ নেই। আগে মাঝে মধ্যে ব্রয়লার মুরগি খেতাম, তাও এখন দুইশ’র ঘরে। সারাদিন রিকশা চালিয়ে যেই টাকা আয় করি তা যদি তিন বেলার খাবারেই চলে যায় তাহলে অন্য সব আর কী দিয়ে চালাবো? প্রতি বছর বাজেট পাস হয় কিন্তু আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন আর হয় না। যদি আমাদের পেটে ভাত না জোটে তাহলে এই বাজেট দিয়ে আমাদের কী হবে? এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করে কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর রায়ের বাজারে বাজার করতে আসা মো. জুয়েল হোসেন। তিনি বলেন, এক কেজি আলু কেনা লাগছে ৬০ টাকা দিয়ে। পিয়াজ ৮০/৮৫। কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকা, পেঁপের কেজি ৫০ টাকা, গাজর ১৫০ টাকা, টমেটো ৯০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, শসা ৫৫ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এই জ্যৈষ্ঠ মাসেও এক পিস লাউ কিনতে ৮০ টাকা গুনতে হচ্ছে। তাহলে আমরা খাবো কী। 

আব্দুল মালেক নামে আরেক ক্রেতা বলেন, বাজেট সবেমাত্র প্রস্তাব করা হয়েছে। এখনো পাস হয়নি। তাতেই সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে। প্রতি বছরেই এই চিত্র দেখা যায়। তিনি বলেন, প্রতিদিন বাজারে এসে দেখবো কোনো না কোনো কারণে পণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে। আমাদের বাজার ব্যবস্থার একদম হ-য-ব-র-ল অবস্থা। যে যেমন খুশি মুনাফা লুটছে। মনে হয় দেখার কেউ নেই। মাংস তো বাদই দিলাম। বাজেটের পর মাছের বাজারেও আগুন লেগেছে। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d