Bangladesh

মূল্যস্ফীতি কর্মসংস্থান নিয়ে উভয়সংকট

বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে মূল্যস্ফীতি। এটি নিয়ন্ত্রণে সংকোচন নীতি অবলম্বন করতে হচ্ছে। অথচ মুদ্রার সরবরাহ কমালে কর্মসংস্থান কমে যায়। আবার কর্মসংস্থান কমলে দেশের বিপদ আরও বাড়ে। এমন পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি ও কর্মসংস্থান নিয়ে বাংলাদেশ উভয়সংকটে রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এমন উভয়সংকটের কথা জানান সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, দেশের ৩৮ শতাংশ জনগণ কর্মসংস্থানহীনতায় ভুগছে। এমন পরিস্থিতিতে মুদ্রা সরবরাহ কমালে কর্মসংস্থান আরও কমবে। আবার মুদ্রা সরবরাহ বাড়ালে বা টাকা ছাপালে মূল্যস্ফীতির রাশ টেনে ধরা সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, মূল্যস্ফীতি ৫ থেকে ৬-এর বেশি হলেই গরিব মানুষ বিপদে পড়ে। অথচ এখন মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি।

মূল্যস্ফীতি, সুদের হার ও স্থানীয় মুদ্রার দর ওঠানামা করলে মুদ্রানি বাস্তবায়ন করা কঠিন। সুতরাং এ তিন বিষয়কে সমন্বয় রেখে স্থানীয় মুদ্রার মান ধরে রাখাই মুদ্রা নীতির চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন ফরাসউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন,  বর্তমানে বাংলাদেশের তিন কোটি মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেলে তাদের আর্থিকভাবে চরম বিপদে পড়তে হয়।

তিনি আরও বলেন, আমাদের এখানে মূল্যস্ফীতি গত মাসে কিছুটা কমেছে। অথচ এটা নিয়ে আমরা উল্লাস শুরু করেছি। কিন্তু এটা হওয়ার কথা নয়। আমাদের মূল্যস্ফীতি আরও অনেক কমিয়ে আনতে হবে।

সাবেক এ গভর্নর বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতির ধারণা একটা ভাঁওতাবাজি। বাংলাদেশের মতো দেশে মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু করার কোনো সুযোগ নেই। এ দেশে দ্রব্যমূল্য এবং আর্থিক অবস্থা স্থিতিশীল রাখতে হলে অবশ্যই সবকিছু নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে। সে ক্ষেত্রে চাহিদা ও জোগানের সমন্বয় রেখেই এই কাজ সম্পন্ন করতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আরও সফলভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি।

কারেন্সি সোয়াপের প্রক্রিয়াও ভুল বলে মনে করেন সাবেক এ গভর্নর। কারণ ব্যাংকগুলো রপ্তানি আয়ের মাধ্যমে যে বিদেশি মুদ্রা অর্জন করে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে রিজার্ভে যুক্ত হয়। কিন্তু সোয়াপ করার জন্য ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত ডলার পাচ্ছে কোথায়। তাহলে কি তারা মানি লন্ডারিং করছে? আর বাংলাদেশ ব্যাংক কি তাদের সহযোগিতা করছে এমন প্রশ্ন তোলেন ফরাসউদ্দিন।

সরকারের শস্য সংগ্রহ অভিযান প্রায় ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করেন ফরাসউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, কিছু মিলমালিক ও অল্পসংখ্যক সরকারি কর্মকর্তা মিলে সরকারের শস্য সংগ্রহ অভিযানকে ব্যর্থ করে দিচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে সরকারি কর্মকর্তারা কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে খাদ্য শস্য সংগ্রহ করছেন। এতে কৃষক ঠিকমতো মূল্য পাচ্ছেন না। একইভাবে সরকারও তাদের গুদামে রাখার মতো পণ্য সংগ্রহ করতে পারছে না।

ফরাসউদ্দিন বলেন, অসাধু ব্যবসায়ী বা মধ্যস্বত্বভোগীরা বাজার থেকে শস্য তুলে নিয়ে দাম বাড়িয়ে দেয়। এ সময় সরকারের ভা-ারে পর্যাপ্ত পরিমাণ শস্য না থাকায় দাম নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। আমরা যদি উৎপাদন ও বিপণন সমবায় গড়ে তুলতে পারতাম তাহলে আমরা খাদ্যসমস্যা দূর করতে পারতাম। ১৯৭৪ সালে মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণেই দুর্ভিক্ষ তৈরি হয়েছিল। এখনো মধ্যস্বত্বভোগীরা আমাদের সমস্যার মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এজন্য তাদের অস্ত্র দিয়েই তাদের ঘায়েল করতে হবে।

ফরাসউদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকারের গুদামের খাদ্যের মজুদ ১৫ লাখ টনে নেমে এসেছে বলে গণমাধ্যম থেকে জেনেছি। সরকার এর কোনো প্রতিবাদ করেনি। তার মানে ঘটনাটি সত্য। মধ্যস্বত্বভোগী বা অসাধু ব্যবসায়ীদের যদি শায়েস্তা করতে হয়, তাহলে সরকারের গুদামের সক্ষমতা ৩০ লাখ টনে নিয়ে যাওয়া উচিত।

সাবেক এ গভর্নর বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই দ্রব্যের ওপর থেকে শুল্ক কমানো হলে ভোক্তারা উপকৃত হয়। অথচ এ দেশে শুল্ক কমানোর পরও দ্রব্যের মূল্য কমে না। অর্থাৎ শুল্ক কমানোর সুবিধা ভোগ করে সেই অসাধু ব্যবসায়ী বা মধ্যস্বত্বভোগীরাই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, এখন আমাদের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালান্স সারপ্লাস। ব্যাংকগুলোর হাতে চার বিলিয়ন ডলারের বেশি ডলার রয়েছে। এসব ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রেখে তারা তারল্য সহযোগিতা নিতে পারছে। আবার তাদের প্রয়োজন হলে এখান থেকে ডলার নিয়ে যেতে পারবে। এতে করে বাজারের তারল্য সমস্যা সহজ সমাধান পাওয়া যাবে বলে মনে করেন গভর্নর।

তিনি বলেন, ডলার কিনে মানুষ বালিশের নিচে রেখে দিয়েছে। এই ডলার ব্যাংকে ফেরানোর জন্য আমরা একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। বিদেশ ভ্রমণ শেষে যে কেউ দেশে এসে প্রতিবার ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত তার আর এফসি অ্যাকাউন্টে জমা রাখতে পারবে। এ ছাড়া এয়ারপোর্টে ঘোষণা দিয়ে যেকোনো পরিমাণ ডলার প্রশ্ন ছাড়াই তার অ্যাকাউন্টে রাখার সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ডলারের বিনিময় হার প্রসঙ্গে রউফ তালুকদার বলেন, কার্ব মার্কেট নিয়ে অনেক আলোচনা চলছে কিন্তু এ বিষয়ে আমরা খুব বেশি মনোযোগ দিতে চাই না। কারণ ব্যাংকে প্রতি বছর ২৭০ বিলিয়ন ডলার লেনদেন হয়, যেখানে খোলাবাজারে মাত্র ৪০ থেকে ৫০ মিলিয়ন ডলার। কার্ব মার্কেটে ডলারের লেনদেন ওঠানামা করার ফলে আমাদের বিনিময় হারে কোনো সমস্যা হবে না। গুজবের কারণে কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম বাড়ে-কমে বলে মনে করেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

তিনি বলেন, গত ছয় মাসে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে মাত্র ২ শতাংশ। এর মাধ্যমে বোঝা যায় যে, আমাদের মুদ্রার অবমূল্যায়ন স্থিতিশীল হয়ে এসেছে। নির্বাচনের পর জাতীয় পরিস্থিতিও অনেকটা স্থিতিশীল। আগামী ছয় মাসের মধ্যে খুব দ্রুত আমাদের মূল্যস্ফীতির হার কমবে। এই মুহূর্তে আমরা জাতীয় চাহিদা কমানোর চেষ্টা করছি। আগামী দুই বছরের মধ্যে আর্থিক খাতে সুশাসন ফিরে আসবে বলে জানিয়েছেন আব্দুর রউফ তালুকদার।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d